fbpx
মানুষের প্রকৃত পরিপূর্ণ সফলতার অর্থ হলো; প্রত্যেক মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়া এবং সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট দুর্দশা দূর হওয়া। সে হিসাবে পূর্ণাঙ্গ সফলতা দুনিয়াতে অর্জিত হতে পারে না। দুনিয়া হলো; কষ্ট ও শ্রমের আবাসস্থল এবং এর কোন বস্তুর স্থায়িত্ব ও স্থিরতা নেই। বরং এই সফলতা বা অমূল্য সম্পদ পাওয়া যাবে একমাত্র জান্নাতে। কেননা জান্নাতই একমাত্র স্থান যেখানে মানুষের প্রতিটি মনোবাঞ্ছা সর্বক্ষণ ও বিনা প্রতীক্ষায় অর্জিত হবে।
জান্নাত

সূচিপত্র

জান্নাত

ভূমিকা;

মানুষের প্রকৃত পরিপূর্ণ সফলতার অর্থ হলো; প্রত্যেক মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়া এবং সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট দুর্দশা দূর হওয়া। সে হিসাবে পূর্ণাঙ্গ সফলতা দুনিয়াতে অর্জিত হতে পারে না। দুনিয়া হলো; কষ্ট ও শ্রমের আবাসস্থল এবং এর কোন বস্তুর স্থায়িত্ব ও স্থিরতা নেই। বরং এই সফলতা বা অমূল্য সম্পদ  পাওয়া যাবে একমাত্র জান্নাতে। কেননা জান্নাতই একমাত্র স্থান যেখানে মানুষের প্রতিটি মনোবাঞ্ছা সর্বক্ষণ ও বিনা প্রতীক্ষায় অর্জিত হবে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা হামিম আস সাজদাহ্ এর ৩১নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন
ولكم فيها ما تشتهي انفسكم  ولكم ما تدعون 
আর সেখানে (অর্থাৎ জান্নাতে) তোমাদের জন্য তোমাদের মন যা চায় তা-ই আছে; তোমরা যে জিনিসের আকাঙ্ক্ষা কর, তোমাদের জন্য সেখানে তা-ই আছে।
(সূরা হা মীম আস সাজদাহ ৩১)
 
উক্ত আয়াতের তাফসীরে মুফতি শফি রহমতুল্লাহ- তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ মারেফুল কোরআনে লিখেছেন, ফেরেশতাগণ মুমিনদেরকে বলবে;  জান্নাতে  তোমাদের মনে যা চাইবে তাই পাবে এবং যা দাবি করবে তা সরবরাহ করা হবে। এর সারমর্ম এই যে, তোমাদের প্রতিটি বাসনা পূর্ণ করা হবে তোমরা চাও বা না চাও। অতঃপর نزلا  তথা আপ্যায়ননের কথা বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এমন অনেক নেয়ামত পাবে যার আকাঙ্খাও তোমাদের অন্তরে সৃষ্টি হবে না। যেমন মেহমানের সামনে এমন অনেক বস্তু আসে যার কল্পনাও সেই পড়বে করে করেনি, বিশেষত যখন কোন বড় লোকের মেহমান হয়।

জান্নাতের মধ্যে মানুষের যে দুঃখ কষ্ট থাকবে না;

আর জান্নাতের মধ্যে মানুষের যে দুঃখ কষ্ট থাকবে না তার স্বীকৃতি দিয়ে-
মহান আল্লাহ তাআলা সূরা ফাতিরের ৩৩ থেকে ৩৫ আয়াতে এরশাদ করেছেন;
 جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَہَا یُحَلَّوۡنَ فِیۡہَا مِنۡ اَسَاوِرَ مِنۡ ذَہَبٍ وَّ لُؤۡلُؤًا ۚ وَ لِبَاسُہُمۡ فِیۡہَا حَرِیۡرٌ ﴿۳۳﴾
وَ قَالُوا الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ الَّذِیۡۤ اَذۡہَبَ عَنَّا الۡحَزَنَ ؕ اِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوۡرٌ شَکُوۡرُۨ ﴿ۙ۳۴﴾
الَّذِیۡۤ اَحَلَّنَا دَارَ الۡمُقَامَۃِ مِنۡ فَضۡلِہٖ ۚ لَا یَمَسُّنَا فِیۡہَا نَصَبٌ وَّ لَا یَمَسُّنَا فِیۡہَا لُغُوۡبٌ ﴿۳۵﴾
৩৩) তারা প্রবেশ করবে স্থায়ী জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণনির্মিত কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
৩৪) তারা বলবে প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি আমাদের যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দিয়েছেন আমাদের প্রতিপালক তো ক্ষমাশীল, গুনগ্রাহী।
৩৫) যিনি নিজ আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দিয়েছেন যেখানে  কষ্ট-ক্লেশ ও ক্লান্তি স্পর্শ করবে না।
(সূরা ফাতিরের ৩৩, ৩৪ ও ৩৫)
যেহেতু প্রকৃত ও পরিপূর্ণ সফলতার হলো; জান্নাত প্রাপ্তি  তাই প্রতিটি মুমিনেরই জান্নাতে প্রবেশ করার মনো বাসনা থাকে। (একজন মুমিন হিসাবে আল্লাহ তায়ালার কাছে আকুতি মিনতি করে জান্নাত প্রার্থনা করি। আল্লাহ যেন আমাকে এবং সকলকে জান্নাতের জন্য কবুল করেন।) প্রতিটি ক্ষেত্রেই যদি মানুষ তার বাস্তবতা  ও প্রতিদান সম্পর্কে জানে তাহলে আমলের জযবা বেড়ে যায়। সেই হিসাবে দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করছিলাম। বক্ষমান প্রবন্ধটি তারই সারনির্যাস। যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য বেশী বেশী ইবাদত করার তাওফীক দান করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন।
জান্নাত আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের একটি নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা তা মুমীন বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন। তার তার সৈন্দয্য ও আকৃতি এবং নিয়ামত রাযি দুনিয়ার কোন মানুষের পক্ষে তার বাস্তব অবস্থা দেখা তো দূরের কথা কল্পনা করা সম্ভব নয় । তাই তো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻋﻦ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ: ” ﻗﺎﻝ اﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ: ﺃﻋﺪﺩﺕ ﻟﻌﺒﺎﺩﻱ اﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ ﻣﺎ ﻻ ﻋﻴﻦ ﺭﺃﺕ، ﻭﻻ ﺃﺫﻥ ﺳﻤﻌﺖ، ﻭﻻ ﺧﻄﺮ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﺐ ﺑﺸﺮ، ﻣﺼﺪاﻕ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ اﻟﻠﻪ: {ﻓﻼ ﺗﻌﻠﻢ ﻧﻔﺲ ﻣﺎ ﺃﺧﻔﻲ ﻟﻬﻢ ﻣﻦ ﻗﺮﺓ ﺃﻋﻴﻦ ﺟﺰاء ﺑﻤﺎ ﻛﺎﻧﻮا ﻳﻌﻤﻠﻮﻥ 
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন; আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি, যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। এ কথাটি অনুরূপ আল-কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে-
فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٌ مَّاۤ اُخۡفِیَ لَہُمۡ مِّنۡ قُرَّۃِ اَعۡیُنٍ ۚ جَزَآءًۢ بِمَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۷﴾
“কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন মুগ্ধকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ”-
(সূরাহ্ আস্ সাজ্দাহ্ ৩২ : ১৭, ই.ফা. ৬৮৭১, ই.সে. ৬৯২৮,
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮২৪)
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻫﺎﺭﻭﻥ ﺑﻦ ﻣﻌﺮﻭﻑ، ﻭﻫﺎﺭﻭﻥ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ اﻷﻳﻠﻲ، ﻗﺎﻻ: ﺣﺪﺛﻨﺎ اﺑﻦ ﻭﻫﺐ، ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺃﺑﻮ ﺻﺨﺮ، ﺃﻥ ﺃﺑﺎ ﺣﺎﺯﻡ، ﺣﺪﺛﻪ ﻗﺎﻝ: ﺳﻤﻌﺖ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ اﻟﺴﺎﻋﺪﻱ، ﻳﻘﻮﻝ: ﺷﻬﺪﺕ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺠﻠﺴﺎ ﻭﺻﻒ ﻓﻴﻪ اﻟﺠﻨﺔ ﺣﺘﻰ اﻧﺘﻬﻰ،ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺁﺧﺮ ﺣﺪﻳﺜﻪ: ﻓﻴﻬﺎ ﻣﺎ ﻻ ﻋﻴﻦ ﺭﺃﺕ، ﻭﻻ ﺃﺫﻥ ﺳﻤﻌﺖ، ﻭﻻ ﺧﻄﺮ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﺐ ﺑﺸﺮ ﺛﻢ اﻗﺘﺮﺃ ﻫﺬﻩ اﻵﻳﺔ : ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﺟﻨﻮﺑﻬﻢ ﻋﻦ اﻟﻤﻀﺎﺟﻊ ﻳﺪﻋﻮﻥ ﺭﺑﻬﻢ ﺧﻮﻓﺎ ﻭﻃﻤﻌﺎ ﻭﻣﻤﺎ ﺭﺯﻗﻨﺎﻫﻢ ﻳﻨﻔﻘﻮﻥ، ﻓﻼ ﺗﻌﻠﻢ ﻧﻔﺲ ﻣﺎ ﺃﺧﻔﻲ ﻟﻬﻢ ﻣﻦ ﻗﺮﺓ ﺃﻋﻴﻦ ﺟﺰاء ﺑﻤﺎ ﻛﺎﻧﻮا ﻳﻌﻤﻠﻮﻥ
সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। তিনি জান্নাতের গুণকীর্তন করে শেষ অবধি বললেন; এতে এমন সব নি‘আমাত রয়েছে যা কোন চক্ষু কক্ষনো দেখেনি, কোন কান কক্ষনো শোনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কক্ষনো কল্পনাও করেনি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করলেন- ‘তারা শয্যা ত্যাগ করত তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আশায় ও আশংকায় এবং তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন মনোমুগ্ধকর কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কর্মফল স্বরূপ”-
(সূরা আস্ সাজদাহ্ ৩২ : ১৬-১৭, ই.ফা. ৬৮৭৪, ই.সে. ৬৯৩১, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮২৫)
 
যেহেতু জান্নাতের বিস্তারিত ও সম্পূর্ণ বর্ণনা মানুষের জানার বাহিরে তাই কোরআন হাদিসে  জান্নাতের যে সকল  নেয়ামতের কথা বর্ণিত হয়েছে তার সল্পকিছু নেয়ামত উল্লেখ করার চেষ্টা করছি। যেন এর অছিলায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরে জান্নাত প্রাপ্তির বাসনা বাড়িয়ে দেন এবং সে জন্য  বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করেন এবং যাবতীয় গোনাহের কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দেন এবং গোনাহকে গোনাহ মনে করে বর্জন করার মানসিকতা ও শক্তি দান করেন।
 
পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র কন্ঠে জান্নাতের নেয়ামতের কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে আমরা সেগুলো থেকে কিছু অংশ তুলে ধরতে চেষ্টা করব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন।
 

জান্নাত ও এর উপকরনাদির বর্ণনা;

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا إِذَا كُنَّا عِنْدَكَ رَقَّتْ قُلُوبُنَا وَزَهِدْنَا فِي
الدُّنْيَا وَكُنَّا مِنْ أَهْلِ الآخِرَةِ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ فَآنَسْنَا أَهَالِيَنَا وَشَمَمْنَا أَوْلاَدَنَا أَنْكَرْنَا أَنْفُسَنَا ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لَوْ أَنَّكُمْ تَكُونُونَ إِذَا خَرَجْتُمْ مِنْ عِنْدِي كُنْتُمْ عَلَى حَالِكُمْ ذَلِكَ لَزَارَتْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ فِي بُيُوتِكُمْ وَلَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَجَاءَ اللَّهُ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ كَىْ يُذْنِبُوا فَيَغْفِرَ لَهُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِمَّ خُلِقَ الْخَلْقُ قَالَ ‏”‏ مِنَ الْمَاءِ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا الْجَنَّةُ مَا بِنَاؤُهَا قَالَ ‏”‏ لَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلْهَا يَنْعَمْ وَلاَ يَبْأَسْ وَيُخَلَّدْ وَلاَ يَمُوتْ لاَ تَبْلَى ثِيَابُهُمْ وَلاَ يَفْنَى شَبَابُهُمْ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ ثَلاَثَةٌ لاَ تُرَدُّ دَعْوَتُهُمُ الإِمَامُ الْعَادِلُ وَالصَّائِمُ حِينَ يُفْطِرُ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ يَرْفَعُهَا فَوْقَ الْغَمَامِ وَتُفَتَّحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ وَعِزَّتِي لأَنْصُرَنَّكِ وَلَوْ بَعْدَ حِينٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَاكَ الْقَوِيِّ وَلَيْسَ هُوَ عِنْدِي بِمُتَّصِلٍ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ بِإِسْنَادٍ آخَرَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏
 
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমরা বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমদের কি হলো যে, আমরা আপনার নিকট থাকাবস্থায় আমাদের অন্তর খুবই নরম হয়ে যায়, আমরা দুনিয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে যাই এবং আমাদেরকে পরকালবাসীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতে থাকি। তারপর আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে গিয়ে দুনিয়াবী কাজে জড়িয়ে পড়ি এবং সন্তানাদির সুগন্ধ পেতে থাকি, তখন আমাদের অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন; তোমরা যে অবস্থায় আমার নিকট হতে বেরিয়ে যাও, সবসময় যদি সেই অবস্থায় থাকতে তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতো। আর তোমরা অপরাধ না করলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা নতুন প্রাণী সৃষ্টি করতেন। যাতে তারা অপরাধ করে আর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন। আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলামঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কী দিয়ে প্রানী সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ পানি দিয়ে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কী দিয়ে জান্নাত তৈরি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ সোনা-রুপার ইট দিয়ে। একটি রুপার ইট, তারপর একটি সোনার ইট, এভাবে গাঁথা হয়েছে। এর গাঁথুনির উপকরণ (চুন-সুরকি-সিমেন্ট) সুগন্ধি মৃগনাভি এবং কঙ্করসমূহ মণি-মুক্তার ও মাটি হলো জাফ্রান। জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকবে, কোন দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করবে না। সে অনন্তকাল এতে অবস্থান করবে আর মৃত্যুবরণ করবে না। না তার পরনের পোশাক পুরাতন হবে আর না তার যৌবনকাল শেষ হবে (অনন্তযৌবনা হবে)। তিনি পুনরায় বললেন; তিনজনের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না; ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু’আ, রোযাদারের ইফতারের সময়কালীন দু’আ এবং মাযলুমের দু’আ। আল্লাহ্‌ তা’আলা একে (মাযলুমের দু’আ) মেঘমালার উপর তুলে নেন, তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ আমার ইজ্জাত ও সম্মানের শপথ! কিছু দেরিতে হলেও আমি তোমাকে সাহায্য করবো।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৫২৬)

জান্নাতের গাছের বর্ণনা;

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَشَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ سَنَةٍ ‏”‏ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَنَسٍ وَأَبِي سَعِيدٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতে এক বিশাল গাছ আছে, যার ছায়াতলে যে কোন যাত্রী একশত বছর ধরে চলতে থাকবে (কিন্তু তা অতিক্রম করে যেতে পারবে না)।
(বুখারী ৩২৫২, জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫২৩)
عَنِ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لاَ يَقْطَعُهَا وَقَالَ ذَلِكَ الظِّلُّ الْمَمْدُودُ ‏‏
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে, যার ছায়াতলে যে কোন যাত্রী একশত বছর ধরে চলতে থাকবে কিন্তু তা অতিক্রম করে যেতে পারবে না। আর এটাই হলো (কুরআনে বর্ণিত) ”সম্প্রসারিত ছায়া”  
وَّ ظِلٍّ مَّمۡدُوۡدٍ ﴿ۙ۳۰﴾
((বুখারীঃ তাফসীর সূরা ওয়াকিআহ, মুসলিমঃ জান্নাত অধ্যায়, বুখারী: ৪৮৮১, মুসলিম: ২১৭৫, সূরা ওয়াক্বি’আহ্ ৩০, জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫২৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং২৮২৬)
عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَا فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ إِلاَّ وَسَاقُهَا مِنْ ذَهَبٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ  ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের প্রতিটি গাছের কাণ্ডই স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫২৫)
 
عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ جَنَّتَيْنِ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا مِنْ فِضَّةٍ وَجَنَّتَيْنِ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا مِنْ ذَهَبٍ وَمَا بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلاَّ رِدَاءُ الْكِبْرِيَاءِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ ‏”‏ 
وَبِهَذَا الإِسْنَادِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ دُرَّةٍ مُجَوَّفَةٍ عَرْضُهَا سِتُّونَ مِيلاً فِي كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا أَهْلٌ مَا يَرَوْنَ الآخَرِينَ يَطُوفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤمن ‏.‏
 
‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতে দু’টি বাগান আছে, যার সকল পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী রূপা দিয়ে নির্মিত এবং আরো দু’টি বাগান আছে, যার পাত্রসমূহ ও এতে যা কিছু আছে সবই স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত। আর আদন নামক জান্নাতে মানুষ ও তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতের মাঝে মহাপরাক্রমশালীর গৌরবের চাদর ছাড়া আর কিছুই অন্তরাল থাকবে না।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫২৮)
 
 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَلِجُ الْجَنَّةَ صُورَتُهُمْ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لاَ يَبْصُقُونَ فِيهَا وَلاَ يَمْتَخِطُونَ وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ آنِيَتُهُمْ فِيهَا الذَّهَبُ وَأَمْشَاطُهُمْ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَمَجَامِرُهُمْ مِنَ الأَلُوَّةِ وَرَشْحُهُمُ الْمِسْكُ وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ لاَ اخْتِلاَفَ بَيْنَهُمْ وَلاَ تَبَاغُضَ قُلُوبُهُمْ قَلْبُ رَجُلٍ وَاحِدٍ يُسَبِّحُونَ اللَّهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ.‏
 
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই দলের মানুষদের আকৃতি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাকের শিকনিও বের হবে না, প্রস্রাব-পায়খানাও করবে না। তাদের ব্যবহার্য পাত্রসমূহ হবে স্বর্ণের তৈরি আর সোনা–রূপার সংমিশ্রণে তৈরি হবে চিরুনি। চন্দন কাঠ ও আগরবাতি জ্বালানো থাকবে। তাদের শরীরের ঘাম হবে মিশকের মতো সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী (হুর) থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে মাংসের ভিতর দিয়ে তাদের পায়ের জংঘার হাড়ের মজ্জা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হবে। তাদের মধ্যে না থাকবে ঝগড়া–বিবাদ, আর না থাকবে হিংসা–বিদ্বেষ। তাদের সকলের অন্তর যেন একটি অন্তরে পরিণত হবে। সকাল-বিকাল তারা আল্লাহ্‌ তা‘আলার পবিত্রতা বর্ণনা করবে।
(সহীহ বুখারী ৩২৪৫, মুসলিম (৮/১৪৬-১৪৭)।সুনানে-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৩৭)

জান্নাতের প্রাসাদের বর্ণনা;

 عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَغُرَفًا يُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا ‏”‏ ‏.‏ فَقَامَ إِلَيْهِ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ هِيَ لِمَنْ أَطَابَ الْكَلامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلَّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ ‏.‏
 
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতের প্রাসাদগুলো এমন হবে যে, এর ভিতর থেকে বাইরের সবকিছু দেখা যাবে এবং বাইরে থেকে ভিতরের সবকিছু দেখা যাবে। এক বেদুঈন উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এসব প্রসাদ কাদের জন্য? তিনি বললেন; যারা উত্তম ও সুমধুর কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়, প্রায়ই রোযা রাখে এবং লোকেরা রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় জাগ্রত থেকে আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্য নামায আদায় করে তাদের জন্য। (সুনানে-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫২৭)

জান্নাতের খাদ্য ও ফলমূল ও আন্যান্য নেয়ামত সমূহ;

আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদের জন্য সকল নেয়ামতই জান্নাতে রেখেছেন।এমন কোন ইচ্ছা বা মনোবাসনা মানুষের থাকবে না তা জন্নাতে পূরন হবেনা। বরং সবকিছুই পূরন হবে।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা হামিম আস সাজদাহ এর ৩১ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন
ولكم فيها ما تشتهي انفسكم  ولكم ما تدعون 
সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের জন্য আছে তা  তোমাদের মন  চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা দাবী কর।
(সূরা হামিম আস সাজদাহ  ৩১)
তাই জান্নাতের নেয়ামতের কথা বলে বা লিখে শেষ করা সম্ভব নয় । এজন্য আমরা কোরআন হাদিসে বর্ণিত জান্নাতের কিছু নেয়ামতের কথা উল্লেখ করছি ।
 

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের নেয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন;

إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِن كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا [الانسان:05
فوفهم الله شر ذلك اليوم ولقلهم نضرة و سرورا [الانسان:11
وجزاهم بما صبروا جنة وحريرا [الانسان:12
ﻣﺘﻜﺌﻴﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﻋﻠﻰ اﻷﺭاﺋﻚ ﻻ ﻳﺮﻭﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﺷﻤﺴﺎ ﻭﻻ ﺯﻣﻬﺮﻳﺮا [الانسان:13
 ﻭﺩاﻧﻴﺔ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻇﻼﻟﻬﺎ ﻭﺫﻟﻠﺖ ﻗﻄﻮﻓﻬﺎ ﺗﺬﻟﻴﻼ [الانسان:14
ﻭﻳﻄﺎﻑ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺑﺂﻧﻴﺔ ﻣﻦ ﻓﻀﺔ ﻭﺃﻛﻮاﺏ ﻛﺎﻧﺖ ﻗﻮاﺭﻳﺮا [الانسان:15
 ﻗﻮاﺭﻳﺮ ﻣﻦ ﻓﻀﺔ ﻗﺪﺭﻭﻫﺎ ﺗﻘﺪﻳﺮا [الانسان:16
وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا [الانسان:17
ﻋﻴﻨﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﺗﺴﻤﻰ ﺳﻠﺴﺒﻴﻼ [الانسان:18
 ﻭﻳﻄﻮﻑ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻟﺪاﻥ ﻣﺨﻠﺪﻭﻥ ﺇﺫا ﺭﺃﻳﺘﻬﻢ ﺣﺴﺒﺘﻬﻢ ﻟﺆﻟﺆا ﻣﻨﺜﻮﺭا [الانسان:19
  ﻭﺇﺫا ﺭﺃﻳﺖ ﺛﻢ ﺭﺃﻳﺖ ﻧﻌﻴﻤﺎ ﻭﻣﻠﻜﺎ ﻛﺒﻴﺮا [الانسان:20
 ﻋﺎﻟﻴﻬﻢ ﺛﻴﺎﺏ ﺳﻨﺪﺱ ﺧﻀﺮ ﻭﺇﺳﺘﺒﺮﻕ ﻭﺣﻠﻮا ﺃﺳﺎﻭﺭ ﻣﻦ ﻓﻀﺔ ﻭﺳﻘﺎﻫﻢ ﺭﺑﻬﻢ ﺷﺮاﺑﺎ ﻃﻬﻮﺭا [الانسان:21
 ﺇﻥ ﻫﺬا ﻛﺎﻥ ﻟﻜﻢ ﺟﺰاء ﻭﻛﺎﻥ ﺳﻌﻴﻜﻢ ﻣﺸﻜﻮﺭا [الانسان:22
৫) নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে কাপুর মিশ্রিত পানপাাত্র।
১১) আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন উৎফুল্লতা ও আনন্দ।
১২) আর তাদের ধৈর্যশীলতার পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমি পোশাক।
১৩) তারা সেখানে সুসজ্জিত সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে, তারা সেখানে প্রচন্ড গরম অথবা তীব্র শীত বোধ করবে না।
১৪) বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে।
১৫) তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রৌপ্যপাত্রে ও স্ফটিকের  ন্যায় স্বচ্ছ পানপাত্রে।
১৬) রুপালী স্ফটিক পাত্রে-পরিবেশন কারীরা যথাযথ পরিমাণে পূর্ণ করবে ।
১৭) তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে যানযাবিল মিশ্রিত পানপাত্র।
১৮) এটা জান্নাতস্থিত সালসাবিল নামক একটি ঝর্ণা ।
১৯) তাদেরকে পরিবেশন করবে চির কিশোরগন, যখন তুমি তাদেরকে দেখবে তখন মনে করবে তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্ত।
২০) আর তুমি যখন সেখানে তাকাবে তখন সেটাই ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য দেখতে পাবে.।
২১) তাদের আবরণ হবে সুক্ষ সবুজ রেশম ও স্থুল রেশম, তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন বিশুদ্ধ পানীয়।
২২) অবশ্য ইহাই তোমাদের পুরস্কার এবং তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা স্বীকৃত ।
(সূরা দাহর ৫ ও ১১ থেকে ২২)
 

সূরা মুতাফফিফীনে জন্নাতিদের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে;

 (22) ﺇﻥ اﻷﺑﺮاﺭ ﻟﻔﻲ ﻧﻌﻴﻢ 
(23) ﻋﻠﻰ اﻷﺭاﺋﻚ ﻳﻨﻈﺮﻭﻥ
 (24) ﺗﻌﺮﻑ ﻓﻲ ﻭﺟﻮﻫﻬﻢ ﻧﻀﺮﺓ اﻟﻨﻌﻴﻢ 
(25) ﻳﺴﻘﻮﻥ ﻣﻦ ﺭﺣﻴﻖ ﻣﺨﺘﻮﻡ 
(26) ﺧﺘﺎﻣﻪ ﻣﺴﻚ ﻭﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻓﻠﻴﺘﻨﺎﻓﺲ اﻟﻤﺘﻨﺎﻓﺴﻮﻥ
 (27) ﻭﻣﺰاﺟﻪ ﻣﻦ ﺗﺴﻨﻴﻢ 
(28) ﻋﻴﻨﺎ ﻳﺸﺮﺏ ﺑﻬﺎ اﻟﻤﻘﺮﺑﻮﻥ 
২২)নিশ্চয়ই সৎ লোক থাকবে পরম স্বাছন্দ্যে,।
২৩) তারা সুসজ্জিত সিংহাসনে বসে অবলোকন করবে।
২৪) আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন।
২৫) তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে।
২৬) আজ তার মোহর হবে মেশক বা কস্তুরি।প্রতিযোগীদের এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা উচিত।
২৭) তার মিশ্রণ হবে তাসনিমের।
২৮) এটি একটি ঝর্না, নৈকট্যশীলগন  তার থেকে পানি পান করবে। 
 

সূরা ওয়াকিয়া  আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিভিন্ন নিয়ামতের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন;

পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে;
أُولَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ (11)
فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ (12)
ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ (13)
وَقَلِيلٌ مِنَ الْآخِرِينَ (14)
عَلَى سُرُرٍ مَوْضُونَةٍ (15)
مُتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ (16) 
يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ (17)
بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِنْ مَعِينٍ (18)
لَا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُونَ (19)
وَفَاكِهَةٍ مِمَّا يَتَخَيَّرُونَ (20)
وَلَحْمِ طَيْرٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ (21)
وَحُورٌ عِينٌ (22)
كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ (23)
جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (24)
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا (25)
إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا (26)
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ (27)
فِي سِدْرٍ مَخْضُودٍ (28)
وَطَلْحٍ مَنْضُودٍ (29)
وَظِلٍّ مَمْدُودٍ (30)
وَمَاءٍ مَسْكُوبٍ (31)
وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ (32)
لَا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ (33)
وَفُرُشٍ مَرْفُوعَةٍ (34)
إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً (35)
فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا (36)
عُرُبًا أَتْرَابًا (37)
لِأَصْحَابِ الْيَمِينِ (38)
ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ (39)
وَثُلَّةٌ مِنَ الْآخِرِينَ (40)
[الواقعة: 17 – 40]
১১) তারাই (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্ত।
১২) (তারা থাকবে) নি‘মাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে।
১৩) তোরা একদর পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
১৪) এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য থেকে। 
১৫) (তারা থাকবে) মণিমুক্তা খচিত আসনে, 
১৬) তাতে তারা হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখী হয়ে।
১৭) তাদের সেবায় ঘোরাফিরা করবে চির কিশোরেরা
১৮) পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে,
১৯) তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে।
২০) আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। 
২১) আর পাখির গোশ্‌ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে।
২২)আর (সেখানে থাকবে) ডাগর ডাগর উজ্জ্বল সুন্দর চোখওয়ালা সুন্দরীরা (হুর), 
২৩) যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা, 
২৪) তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ। 
২৫) তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা;
২৬) এমন কথা ছাড়া যা হবে শান্তিময়, নিরাপদ, 
২৭) আর ডান দিকের দল! কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! 
২৮) তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে,
২৯) কলা গাছের মাঝে যাতে আছে থরে থরে সাজানো কলা, 
৩০) বিস্তীর্ণ অঞ্চল-জুড়া ছায়ায়,
৩১) অবিরাম প্রবহমান পানির ধারে,
৩২) আর প্রচুর ফলমূলে,
৩৩) যা কখনও শেষ হবে না, কক্ষনো নিষিদ্ধও হবে না।
৩৪) (তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে; 
৩৫) তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হুরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে,
৩৬) আর তাদেরকে করেছি কুমারী,
৩৭) সোহাগিনী ও সমবয়সী।
৩৮) (এ সবই) ডান দিকের লোকদের জন্য। 
৩৯) তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
৪০) এবং একদর হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
(সূরা ওয়াকিয়া ১১ থেকে ৪০)
 

আল্লাহ তায়ালা সুরা যুখরুফে ইরশাদ করেছেন;

 يَاعِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ (68)
الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَ (69)
ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنْتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ (70)
يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِنْ ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنْتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (71)
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (72)
لَكُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ كَثِيرَةٌ مِنْهَا تَأْكُلُونَ (73) 
[الزخرف: 68 – 73]
 
৬৮) (মুত্তাকীদেরকে বলা হবে) হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই আর তোমরা দুঃখিতও হবে না।
৬৯) তোমরা যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করেছিলে এবং অনুগত ছিলে।
৭০) তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। 
৭১) স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে রয়েছে সবকিছু, অন্তর যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।
৭২) এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কর্মের ফল স্বরূপ।
৭৩) সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে। 
(সুরা যুখরুফ ৬৮ থেকে ৭৩)
 

আল্লাহ তায়ালা সূরা  আর রহমান এর মধ্যে বিস্তারিত;

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ (46)
ذَوَاتَا أَفْنَانٍ (48)
فِيهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ (50)
فِيهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ (52)
مُتَّكِئِينَ عَلَى فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ (54)
فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (56)
كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ (58)
هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ (60)
وَمِنْ دُونِهِمَا جَنَّتَانِ (62)
مُدْهَامَّتَانِ (64)
فِيهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ (66)
فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ (68)
فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ (70)
حُورٌ مَقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ (72)
لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (74)
مُتَّكِئِينَ عَلَى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ (76)
[الرحمن: 70 – 76]
 
৪৬) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি উদ্যান।
(৪৮) উভয়ই বহু শাখা-পল্লব বিশিষ্ট বৃক্ষে পূর্ণ।
৫০) উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ;
৫২) উভয় বাগানে আছে প্রত্যেকটি ফলের দু’টি প্রকার।
৫৪) তারা হেলান দিয়ে বসবে শয্যার উপর যার আস্তর হবে পুরু রেশমের। দু’বাগানের ফল হবে নিকটবর্তী (জান্নাতীদের নাগালের মধ্যে)।
৫৬) সেখানে থাকবে স্বামীর প্রতি দৃষ্টি সীমিতকারী মহিলাগণ, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ আর না কোন জিন।
৫৮) তারা যেন হীরা ও প্রবাল।
৬০) উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে?
৬২) এই উদ্যানদ্বয় ব্যতীত আরও দু’টি উদ্যান রয়েছে।
৬৪) ঘন সবুজ এ উদ্যানটি দু’টি।
৬৬) এ দু’টিতে থাকবে অবিরাম ধারায় উচ্ছলমান দু’টি ঝর্ণাধারা।
৬৮) এ দু’টিতে থাকবে ফলমূল, খেজুর ও আনার। 
৭০) সেই জান্নাতসমূহে থাকবে উত্তম চরিত্রবতী অনিন্দ্য সুন্দরীগণ। 
৭২) তারা হূর, তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিতা। 
৭৪) যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ আর না কোন জিন।
৭৬) তারা সবুজ বালিশে ও সুন্দর কারুকার্য খচিত গালিচার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে।
(সূরা  আর রহমান ৪৬ থেকে ৭৬)
 

আল্লাহতালা জান্নাতীদের বিভিন্ন নেয়ামত উল্লেখ করে সূরা  আত তুরের ১৭ থেকে ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন;

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَعِيمٍ (17)
فَاكِهِينَ بِمَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ وَوَقَاهُمْ رَبُّهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ (18)
كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (19)
مُتَّكِئِينَ عَلَى سُرُرٍ مَصْفُوفَةٍ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ (20)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ (21)
وَأَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَلَحْمٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ (22)
يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ (23)
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَكْنُونٌ (24)
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ (25)
قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ (26)
فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ (27) 
[الطور: 17 – 27]
১৭) মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে আর নি‘মাত সম্ভারের মাঝে, 
১৮) তাদের রব তাদেরকে যা দিয়েছেন তা উপভোগ করবে, আর তাদের রব তাদেরকে বাঁচাবেন জ্বলন্ত আগুনের আযাব থেকে। 
১৯) (তাদেরকে বলা হবে) খাও আর পান কর খুব মজা করে- তোমরা যে ‘আমাল করতে তার প্রতিফল হিসেবে।
২০) তারা সারিবদ্ধভাবে সাজানো আসনে হেলান দিয়ে বসবে, আর আমি তাদের বিয়ে দিয়ে দেব সুন্দর বড় বড় উজ্জ্বল চক্ষু বিশিষ্টা কুমারীদের সঙ্গে।
২১) আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোন অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে। 
২২) আমি তাদেরকে দিব ফলমূল আর গোশত যা তারা পছন্দ করবে। 
২৩) তারা সেখানে পরস্পরের মধ্যে বিনিময় করবে পানপাত্র, থাকবে না সেখানে কোন বেহুদা বকবকানি, থাকবে না কোন পাপের কাজ। 
২৪) তাদের চতুর্দিকে ঘুর ঘুর ক’রে তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে কিশোরেরা (যারা এতই সুন্দর) যেন সযত্নে লুকিয়ে রাখা মণিমুক্তা।
২৫) আর তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, 
২৬) তারা বলবে, ‘পূর্বে আমরা আমাদের পরিবারে (দুনিয়াবী নানা কারণে ও আখিরাতের ‘আযাবের আশংকায়) ভয় ভীতির মধ্যে ছিলাম।
২৭)অবশেষে আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন আর আমাদেরকে ঝলসে দেয়া বাতাসের ‘আযাব থেকে রক্ষা করেছেন।
(সূরা  আত-তুর ১৭ থেকে ২৭)
 

জান্নাতী হুরের বিবরণ;

হুর হলো জান্নাতের একটি বিশেষ নেয়ামত । আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদের জন্য তাদেরকে তৈরি করেছেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে অসংখ্য জায়গায়  আল্লাহ তায়ালা তাদের  বিভিন্ন গুণাবলী উল্লখ করেছেন। সূরা ওয়াকিয়ার ২২-২৩ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
আর তাদের (জান্নাতিদের ) জন্য থাকবে আয়তলোচনা সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ হুর,। ২৪) তাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ।
সুরা আর রহমানের ৫৬,৫৮ আল্লাহ তায়ালা তাদের বর্ণনায় ইরশাদ করেছেন
فيهم قصرت الطرف لم يطمثهن انس ولا جان…..  كانهم الياقوت والمرجان
জান্নাতে রয়েছে আনতনয়না হুরগন, যাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ বা কোন জিন স্পর্শ করেনি। যেন তারা প্রবাল ওপদ্মরাগ।
 
আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতিদের সমবয়স্কা ও পূর্ণযৌবনি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। সূরা  আন নাবা ৩৫নং আয়াতে ইরশাদ  করেছেন; وكواعب اترابا 
নেককার ব্যক্তদের জন্য জান্নাতে রয়েছে সমবয়স্কা উদভিন্ন যৌবনা তরুনী।
 
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; যে দলটি কিয়ামাত দিবসে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল, আর দ্বিতীয় দলের মুখমণ্ডল হবে আকাশে মুক্তার ন্যায় ঝলমলে তারকার মতো উজ্জ্বল। তাদের মধ্যে প্রত্যেক পুরুষের জন্য দু’জন করে স্ত্রী (হুর) থাকবে এবং প্রত্যেক স্ত্রীর সত্তরজোড়া জামা থাকবে। এই জামার ভিতর দিয়েও তার পায়ের জংঘার অস্থিমজ্জা দেখা যাবে।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৩৫)
 

জান্নাতি এসকল  হুরদের কন্ঠে ভেসে আসবে সুমধুর সুর;

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، وَأَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِسْحَاقَ، عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَمُجْتَمَعًا لِلْحُورِ الْعِينِ يُرَفِّعْنَ بِأَصْوَاتٍ لَمْ يَسْمَعِ الْخَلاَئِقُ مِثْلَهَا قَالَ يَقُلْنَ نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلاَ نَبِيدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلاَ نَبْأَسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلاَ نَسْخَطُ طُوبَى لِمَنْ كَانَ لَنَا وَكُنَّا لَهُ ‏”‏ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ وَأَنَسٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَلِيٍّ حَدِيثٌ غَرِيبٌ ‏.‏
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতে আয়াতলোচনা হুরদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে এমন সুরেলা আওয়াজে গান গাইবে, যেমন আওয়াজ কোন মাখলূক ইতিপূর্বে কখনো শুনেনি। তারা এই বলে গান গাইবেঃ আমরা তো চিরঙ্গিনী, আমাদের ধ্বংস নেই। আমরা তো আনন্দ-উল্লাসের জন্যই, দুঃখ-কষ্ট নেই আমাদের। আমরা চির সন্তুষ্ট, আমরা কখনো অসন্তুষ্ট হব না। তাদের কতই না সৌভাগ্য যাদের জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যারা।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৬৪)
 

জান্নাতীদের পোশাক ও সিংহাসন;

আল্লাহ তায়ালা পুরু ও মিহি রেশম দিয়ে জান্নাতের পোশাক তৈরি করেছেন  এবং  ঐ পোশাক পরে সুসজ্জিত সিংহাসনে হেলান দিয়ে  বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবে ।পবিত্র কুরআনুল কারীমে অসংখ্য স্থানে তা উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আদ দাহরের১২-১৩নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন; 
১২) আর তাদের ধৈর্যশীলতার পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমি পোশাক।
১৩)তারা সেখানে সুসজ্জিত সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে, তারা সেখানে প্রচন্ড গরম অথবা তীব্র শীত বোধ করবে না।  
আল্লাহ তায়ালা সুরা আর তুরে ২০-২৭ নং আয়াতে তাদের উক্ত বিষয়টি চিত্র তুলে ধরে ইরশাদ করেছেন;
২০) তারা শ্রেণীবদ্ধ ভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে: আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিবো।
২১) যারা ঈমানদারএবং তাদের সন্তানদের মধ্য থেকে যারা ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হবে আমি তাদেরকে তাদের পিত্র পুরুষদের সাথে মিলিত করে দিব, এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও  কমাব না।প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।
২২) আমি তাদেরকে দিব ফলমূল এবং গোশত যা তারা চাইবে।
২৩) সেখানে তারা পরস্পরের মধ্যে পানপত্র আদান প্রদান করবে,যেখান থেকে পান করলে কেউ অসার বাক্য বলবে না এবং পাপ কর্মে লিপ্ত হবে না।
২৪) তাদের সেবায় সুরক্ষিত মুক্তা সাদৃশ্ কিশোরেরা নিয়োজিত থাকবে।
২৫-২৬) তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করবে বলবে পূর্বে আমরা পরিবার পরিজন এর মধ্যে শঙ্কিত অবস্থায় ছিলাম।
২৭)অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে অগ্নি শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।
তাদের কথোপকথনের চিত্রটি আল্লাহ তায়ালা সুরা আস সফফাত-এর ৫০ থেকে ৫৫ আয়াতে এভাবে উল্লেখ করেছেন;
৫০) তারা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
৫১) তাদের কেউ বলবে (দুনিয়াতে )আমার এক সঙ্গী ছিল।
৫২_৫৩) সে বলতো তুমিকি একথায় বিশ্বাস-ই যে, আমরা যখন মারা যাবো এবং মাটি অস্থিতে পরিণত হব তখনো কি আমরা প্রতিফল প্রাপ্ত হব?
৫৪) আল্লাহ বলবেন তোমরা কি তাকে দেখতে চাও
৫৫) অতঃপর সে উকি দিয়ে ওই ব্যক্তিকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে।.
তায়ালা সূরা আল হাজ্জ এর ২৩নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন;
যারা ঈমান আনবে এবং নেক কাজ করবে আল্লাহতালা তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হয়, সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ কঙ্কন ও মুক্তা দ্বারা। এখনো জান্নাতে তাদের পোশাক হবে রেশমের।
হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَهْلُ الْجَنَّةِ جُرْدٌ مُرْدٌ كُحْلٌ لاَ يَفْنَى شَبَابُهُمْ وَلاَ تَبْلَى ثِيَابُهُمْ ‏ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতীদের শরীরে কোন লোম থাকবে না, দাড়ি–গোঁফ থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। কখনো তাদের যৌবন শেষ হবে না, জামাও পুরাতন হবে না।।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৩৯)
 

জান্নাতের নহর ও পানপাত্র;

আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদের পান করার জন্য  যেসকল নহর দিয়েছেন সেগুলোর বর্ণনা বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছেন। পূর্বেল্লেখিত আয়াত সমূহে ও সে বিষয়ে কিছুটা উল্লেখ রয়েছে । এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা  সূরা মুহাম্মদ ১৫নং আয়াতে জান্নাতের শহরের বিবরণ দিয়েছেন;
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার বিবরণ হলো; তাতে আছে  নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর তার স্বাদ অপরিবর্তিত, কারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নহর, পরিশোধিত মধুর নহর সেখানে তাদের জন্য রয়েছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা।
 
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
ِ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ جَنَّتَيْنِ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا مِنْ فِضَّةٍ وَجَنَّتَيْنِ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا مِنْ ذَهَبٍ وَمَا بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلاَّ رِدَاءُ الْكِبْرِيَاءِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ ‏”‏ ‏.‏
‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতে দু’টি বাগান আছে, যার সকল পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী রূপা দিয়ে নির্মিত এবং আরো দু’টি বাগান আছে, যার পাত্রসমূহ ও এতে যা কিছু আছে সবই স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত। আর আদন নামক জান্নাতে মানুষ ও তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতের মাঝে মহাপরাক্রমশালীর গৌরবের চাদর ছাড়া আর কিছুই অন্তরাল থাকবে না।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫২৮)
 
মোট কথা জান্নাতের পানপাত্র গুলো বিভিন্ন উপাদানের রয়েছে ।তবে তা কাঁচে র পাত্র থেকে ও স্বচ্ছ রুপার থেকে ও শুভ্র। 
 
عَنْ دَاوُدَ بْنِ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لَوْ أَنَّ مَا يُقِلُّ ظُفُرٌ مِمَّا فِي الْجَنَّةِ بَدَا لَتَزَخْرَفَتْ لَهُ مَا بَيْنَ خَوَافِقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَلَوْ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَ فَبَدَا أَسَاوِرُهُ لَطَمَسَ ضَوْءَ الشَّمْسِ كَمَا تَطْمِسُ الشَّمْسُ ضَوْءَ النُّجُوم‏.‏
সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; যদি জান্নাতের কোন জিনিসের এক চিমটি পরিমাণও (পৃথিবীতে) আসতে পারতো তাহলে আসমান-যমীন সকল স্হান আলোকিত ও সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে যেতো। কোন জান্নাতী যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত এবং তার হস্তালংকার প্রকাশিত হয়ে পড়তো তাহলে তা সূর্যের আলোকে নিস্তেজ করে দিত যেভাবে সূর্যের আলো নক্ষত্রসমূহের আলোকে নিস্তেজ করে দেয়।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৩৮)
 

জান্নাতিদের পোশাকের বর্ণনা;

، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَهْلُ الْجَنَّةِ جُرْدٌ مُرْدٌ كُحْلٌ لاَ يَفْنَى شَبَابُهُمْ وَلاَ تَبْلَى ثِيَابُهُمْ ‏ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতীদের শরীরে কোন লোম থাকবে না, দাড়ি–গোঁফ থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। কখনো তাদের যৌবন শেষ হবে না, জামাও পুরাতন হবে না।।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৩৯)
 

জান্নাতিদের বয়স কেমন হবে;

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلاَثِينَ أَوْ ثَلاَثٍ وَثَلاَثِينَ سَنَةً  ‏.‏
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের শরীরে লোম থাকবে না, দাড়ি-গোঁফও থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। তারা হবে ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের যুবক।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৪৫)
 

জান্নাতিদের সংখ্যা এবং এই উম্মতের আধিক্যতা;

ٍ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَهْلُ الْجَنَّةِ عِشْرُونَ وَمِائَةُ صَفٍّ ثَمَانُونَ مِنْهَا مِنْ هَذِهِ الأمَّةِ وَأَرْبَعُونَ مِنْ سَائِرِ الأمَمِ ‏”‏ 
বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হবে, তার মধ্যে এই উম্মাতের হবে আশিটি কাতার এবং অন্যান্য সকল উম্মাতের হবে চল্লিশটি।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৪৬)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ لأَهْلِ الْجَنَّةِ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ ‏.‏ فَيَقُولُونَ لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ ‏.‏ فَيَقُولُ هَلْ رَضِيتُمْ فَيَقُولُونَ مَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ‏.‏ فَيَقُولُ أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ ‏.‏ قَالُوا وَأَىُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ قَالَ أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ أَبَدًا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏
সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! তারা বলবে, “লাব্বাইকা রব্বানা ওয়া সা’দাইকা” (হে প্রভু! আমরা উপস্থিত)। তিনি বলবেন, তোমরা কি খুশি হয়েছো? তারা বলবে, আমরা কেন খুশি হবো না? আপনি তো আমাদেরকে ঐ সমস্ত জিনিস প্রদান করেছেন যা আপনার আর কোন সৃষ্টিকেই দেননি। তিনি বলবেন, আমি তোমাদেরকে এর চেয়েও উত্তম জিনিস প্রদান করবো। তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম জিনিস আর কি আছে? তিনি বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার চির সন্তুষ্টি বর্ষণ করছি, এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না।
(সুনানে তিরমিযি হাদীস নং২৫৫৫)
 

জান্নাতিদের বাজারের বর্ণনা;

যেকোন স্থান মানুষের নিকট পছন্দনীয় এবং উৎকৃষ্ট এলাকা হওয়ার অর্থ হলো ঐ স্থানটি সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি  সামাজিক অবস্থা ও পরিবেশ ভালো হওয়া।  যেমন  মসজিদ মাদ্রাসা স্কুল কলেজ বাজার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সুন্দর হওয়া।এটা মানুষের কাছে স্বীকৃত।তাই যেহেতু জান্নাত যেহেতু সবচেয়ে উত্তম জায়গা সেখানে ও সামাজিক ব্যবস্থা উত্তম হওয়াটাই স্বাভাবিক।তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের বাজারের সৌন্দয্য উল্লেখ করত ইরশাদ করেছেন;
13 -، ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ، ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ: ” ﺇﻥ ﻓﻲ اﻟﺠﻨﺔ ﻟﺴﻮﻗﺎ، ﻳﺄﺗﻮﻧﻬﺎ ﻛﻞ ﺟﻤﻌﺔ، ﻓﺘﻬﺐ ﺭﻳﺢ اﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﺘﺤﺜﻮ ﻓﻲ ﻭﺟﻮﻫﻬﻢ ﻭﺛﻴﺎﺑﻬﻢ، ﻓﻴﺰﺩاﺩﻭﻥ ﺣﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ، ﻓﻴﺮﺟﻌﻮﻥ ﺇﻟﻰ ﺃﻫﻠﻴﻬﻢ ﻭﻗﺪ اﺯﺩاﺩﻭا ﺣﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ، ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻟﻬﻢ ﺃﻫﻠﻮﻫﻢ: ﻭاﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ اﺯﺩﺩﺗﻢ ﺑﻌﺪﻧﺎ ﺣﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ، ﻓﻴﻘﻮﻟﻮﻥ: ﻭﺃﻧﺘﻢ، ﻭاﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ اﺯﺩﺩﺗﻢ ﺑﻌﺪﻧﺎ ﺣﺴﻨﺎ ﻭﺟﻤﺎﻻ “
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমু‘আয় জান্নাতী লোকেরা এতে একত্রিত হবে। তারপর উত্তরদিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো বেড়ে যাবে। তারপর তারা স্ব স্ব পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের শরীরের রং এবং সৌন্দর্যও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহ শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্য তোমাদের নিকট থেকে যাবার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে।
(ই.ফা. ৬৮৮৩, ই.সে. ৬৯৪০,
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮৩৩)
 
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، أَنَّهُ لَقِيَ أَبَا هُرَيْرَةَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ، بَيْنِي وَبَيْنَكَ فِي سُوقِ الْجَنَّةِ ‏.‏ فَقَالَ سَعِيدٌ أَفِيهَا سُوقٌ قَالَ نَعَمْ أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ إِذَا دَخَلُوهَا نَزَلُوا فِيهَا بِفَضْلِ أَعْمَالِهِمْ ثُمَّ يُؤْذَنُ فِي مِقْدَارِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا فَيَزُورُونَ رَبَّهُمْ وَيُبْرِزُ لَهُمْ عَرْشَهُ وَيَتَبَدَّى لَهُمْ فِي رَوْضَةٍ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ فَتُوضَعُ لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ وَمَنَابِرُ مِنْ لُؤْلُؤٍ وَمَنَابِرُ مِنْ يَاقُوتٍ وَمَنَابِرُ مِنْ زَبَرْجَدٍ وَمَنَابِرُ مِنْ ذَهَبٍ وَمَنَابِرُ مِنْ فِضَّةٍ وَيَجْلِسُ أَدْنَاهُمْ وَمَا فِيهِمْ مِنْ دَنِيٍّ عَلَى كُثْبَانِ الْمِسْكِ وَالْكَافُورِ وَمَا يُرَوْنَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَرَاسِيِّ بِأَفْضَلَ مِنْهُمْ مَجْلِسًا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهَلْ نَرَى رَبَّنَا قَالَ ‏”‏ نَعَمْ قَالَ هَلْ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا لاَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ كَذَلِكَ لاَ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ وَلاَ يَبْقَى فِي ذَلِكَ الْمَجْلِسِ رَجُلٌ إِلاَّ حَاضَرَهُ اللَّهُ مُحَاضَرَةً حَتَّى يَقُولَ لِلرَّجُلِ مِنْهُمْ يَا فُلاَنُ ابْنَ فُلاَنٍ أَتَذْكُرُ يَوْمَ قُلْتَ كَذَا وَكَذَا فَيُذَكِّرُهُ بِبَعْضِ غَدَرَاتِهِ فِي الدُّنْيَا فَيَقُولُ يَا رَبِّ أَفَلَمْ تَغْفِرْ لِي فَيَقُولُ بَلَى فَبِسِعَةِ مَغْفِرَتِي بَلَغْتَ مَنْزِلَتَكَ هَذِهِ ‏.‏ فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ غَشِيَتْهُمْ سَحَابَةٌ مِنْ فَوْقِهِمْ فَأَمْطَرَتْ عَلَيْهِمْ طِيبًا لَمْ يَجِدُوا مِثْلَ رِيحِهِ شَيْئًا قَطُّ وَيَقُولُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى قُومُوا إِلَى مَا أَعْدَدْتُ لَكُمْ مِنَ الْكَرَامَةِ فَخُذُوا مَا اشْتَهَيْتُمْ ‏.‏ قَالَ فَنَأْتِي سُوقًا قَدْ حَفَّتْ بِهِ الْمَلاَئِكَةُ فِيهِ مَا لَمْ تَنْظُرِ الْعُيُونُ إِلَى مِثْلِهِ وَلَمْ تَسْمَعِ الآذَانُ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى الْقُلُوبِ فَيُحْمَلُ لَنَا مَا اشْتَهَيْنَا لَيْسَ يُبَاعُ فِيهَا وَلاَ يُشْتَرَى وَفِي ذَلِكَ السُّوقِ يَلْقَى أَهْلُ الْجَنَّةِ بَعْضُهُمْ بَعْضًا قَالَ فَيُقْبِلُ الرَّجُلُ ذُو الْمَنْزِلَةِ الْمُرْتَفِعَةِ فَيَلْقَى مَنْ هُوَ دُونَهُ وَمَا فِيهِمْ دَنِيٌّ فَيَرُوعُهُ مَا يَرَى عَلَيْهِ مِنَ اللِّبَاسِ فَمَا يَنْقَضِي آخِرُ حَدِيثِهِ حَتَّى يَتَخَيَّلَ إِلَيْهِ مَا هُوَ أَحْسَنُ مِنْهُ وَذَلِكَ أَنَّهُ لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ أَنْ يَحْزَنَ فِيهَا ثُمَّ نَنْصَرِفُ إِلَى مَنَازِلِنَا فَتَتَلَقَّانَا أَزْوَاجُنَا فَيَقُلْنَ مَرْحَبًا وَأَهْلاً لَقَدْ جِئْتَ وَإِنَّ بِكَ مِنَ الْجَمَالِ أَفْضَلَ مِمَّا فَارَقْتَنَا عَلَيْهِ.‏ فَنَقُولُ إِنَّا جَالَسْنَا الْيَوْمَ رَبَّنَا الْجَبَّارَ وَيَحِقُّنَا أَنْ نَنْقَلِبَ بِمِثْلِ مَا انْقَلَبْنَاِ.‏
 
সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত; আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; একদা তিনি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলে তিনি বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলার নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্র করেন। সা’ঈদ (রহঃ) প্রশ্ন করেন, জান্নাতে কি বাজারও আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতীরা জান্নাতে গিয়ে নিজ নিজ আমলের পরিমাণ ও মর্যাদা অনুযায়ী সেখানে জায়গা (মর্যাদা) পাবে। তারপর দুনিয়ার সময় অনুসারে জুমু’আর দিন তাদেরকে (তাদের রবের দর্শনের) অনুমতি দেয়া হবে এবং তারা তাদের রবকে দেখতে আসবে। তাদের জন্য তাঁর আরশ প্রকাশিত হবে। জান্নাতের কোন এক বাগানে তাদের সামনে তাদের প্রভুর প্রকাশ ঘটবে। তাদের জন্য নূর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগ মণি, যমরূদ ও সোনা-রূপা ইত্যাদির মিম্বারসমূহ রাখা হবে। তাদের মধ্যকার সবচাইতে নিম্নস্তরের জান্নাতীও মিশক ও কর্পুরের স্তূপের উপর আসন গ্রহণ করবে। তবে সেখানে কেউ হীন-নীচ হবে না। মিম্বারে আসীন ব্যক্তিগণকে তারা তাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ বা উৎকৃষ্ট ভাববে না। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোন সন্দেহ হয়? আমরা বললাম, না। তিনি বললেনঃ ঠিক সে রকম তোমাদের রবের দেখা্তেও কোন সন্দেহ থাকবে না। আর সে মাজলিসের প্রত্যেক লোক আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কথা বলবে। এমনকি তিনি একে একে তাদের নাম ধরে ডেকে বলবেনঃ হে অমুকের পুত্র অমুক! অমুক দিন তুমি এমন কথা বলেছিলে, মনে আছে কি? এভাবে তিনি তাকে দুনিয়ার কিছু নাফরমানী ও বিদ্রোহের কথা মনে করিয়ে দিবেন। লোকটি তখন বলবে, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে মাফ করেননি? তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ, আমার ক্ষমার বদেৌলতেই তুমি এ জায়গাতে পৌঁছেছ। এই অবস্থায় হঠাৎ তাদের উপর এক খন্ড মেঘ এসে তাদেরকে ছেয়ে ফেলবে এবং তা হতে তাদের উপর সুগন্ধি (বৃষ্টি) বর্ষিত হবে, যেরূপ সুগন্ধ তারা ইতিপূর্বে কখনো কিছুতে পায়নি। আমাদের রব বলবেনঃ উঠো! আমি তোমাদের সম্মানে যে মেহমানদারি প্রস্তুত করেছি সেদিকে অগ্রসর হও এবং যা কিছু পছন্দ হয় তা গ্রহণ কর। তখন আমরা একটি বাজারে এসে হাযির হব, যা ফেরেশতারা ঘিরে রাখবে। সেখানে এরূপ পণ্যসামগ্রী থাকবে, যা না কোন চোখ দেখেছে, না কোন কান শুনেছে এবং না কখনো অন্তরের কল্পনায় ভেসেছে। আমরা সেখানে যা চাইব, তাই তুলে দেয়া হবে। তবে বেচা-কেনা হবে না। আর সে বাজারেই জান্নাতীরা একে অপরের সাথে দেখা করবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতী সামনে এগিয়ে তাঁর চাইতে অল্প মর্যাদাবান জান্নাতীর সাথে দেখা করবে। তবে সেখানে তাদের মধ্যে উঁচু-নীচু বলতে কিছু থাকবে না। তিনি তার পোশাক দেখে অস্থির হয়ে যাবেন। এ কথা শেষ হতে না হতেই তিনি মনে করতে থাকবেন যে, তার গায়ে আগের চাইতে উত্তম পোশাক দেখা যাচ্ছে। আর এরূপ এজন্যই হবে যে, সেখানে কারো দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করবে না। তারপর আমরা নিজেদের স্থানে ফিরে আসব এবং নিজ নিজ স্ত্রীদের দেখা পাব। তারা তখন বলবে, মারহাবা, স্বাগতম! কি ব্যাপার! যে রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলে, তার চাইতে উত্তম সৌন্দর্য নিয়ে ফিরে এসেছ। আমরা বলব, আজ আমরা আমাদের আল্লাহ্ তা’আলার সাথে মাজলিসে বসেছিলাম। কাজেই এ পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। আর এটাই ছিল স্বাভাবিক।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৪৯)
 
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: «ﺇﻥ ﺃﻭﻝ ﺯﻣﺮﺓ ﻳﺪﺧﻠﻮﻥ اﻟﺠﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﺻﻮﺭﺓ اﻟﻘﻤﺮ ﻟﻴﻠﺔ اﻟﺒﺪﺭ، ﻭاﻟﺬﻳﻦ ﻳﻠﻮﻧﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﺷﺪ ﻛﻮﻛﺐ ﺩﺭﻱ ﻓﻲ اﻟﺴﻤﺎء ﺇﺿﺎءﺓ، ﻻ ﻳﺒﻮﻟﻮﻥ ﻭﻻ ﻳﺘﻐﻮﻃﻮﻥ ﻭﻻ ﻳﻤﺘﺨﻄﻮﻥ ﻭﻻ ﻳﺘﻔﻠﻮﻥ، ﺃﻣﺸﺎﻃﻬﻢ اﻟﺬﻫﺐ ﻭﺭﺷﺤﻬﻢ اﻟﻤﺴﻚ، ﻭﻣﺠﺎﻣﺮﻫﻢ اﻷﻟﻮﺓ، ﻭﺃﺯﻭاﺟﻬﻢ اﻟﺤﻮﺭ اﻟﻌﻴﻦ، ﺃﺧﻼﻗﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﺧﻠﻖ ﺭﺟﻞ ﻭاﺣﺪ ﻋﻠﻰ ﺻﻮﺭﺓ ﺃﺑﻴﻬﻢ ﺁﺩﻡ ﺳﺘﻮﻥ ﺫﺭاﻋﺎ ﻓﻲ اﻟﺴﻤﺎء»
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; প্রথমে আমার উম্মাতের যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলোকিত। তারপর যারা জান্নাতে যাবে তাদের মুখমণ্ডল হবে ঊর্ধ্বাকাশে উদিত তারকারাজির মতো। অতঃপর যারা জান্নাতে দাখিল হবে তাদের কয়েকটি ধাপ হবে। তারা প্রস্রাব-পায়খানা করবে না, নাক ঝাড়বে না এবং থু-থু ফেলবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের এবং তাদের ধূপদানী হবে আলূওয়াহ্ নামক সুগন্ধিযুক্ত কাষ্ঠের। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ বিচ্ছুরিত হবে। তাদের চরিত্র একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায় হবে। তারা তাদের আদি পিতা আদাম (‘আঃ)-এর মতো ষাট হাত দীর্ঘ হবে।
ইবনু আবী শাইবাহ্-এর বর্ণনাতে (আরবি) অর্থাৎ একই ব্যক্তির চরিত্রের। আর আবূ কুরায়ব-এর বর্ণনাতে (আরবি) অর্থাৎ একই ব্যক্তির গঠনের ন্যায় হবে। কিন্তু ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) বলেছেন, তাদের আকৃতি আদি পিতা আদাম (‘আঃ)-এর ন্যায় হবে।
(ই.ফা. ৬৮৮৭, ই.সে. ৬৯৪৪,
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮৩৪)
 

আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ হবে;

জান্নাতে মুমিন বান্দার সর্বোত্তম ও অদ্বিতীয় নেয়ামত হলো বান্দা তার প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করবে ।প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
 عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيِّ، قَالَ كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَقَالَ ‏”‏ إِنَّكُمْ سَتُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّكُمْ فَتَرَوْنَهُ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَصَلاَةٍ قَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ قَرَأََ‏:‏ ‏(‏سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ ‏)‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏
জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমরা এক পূর্ণিমার রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি চাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেনঃ তোমাদেরকে খুব শীঘ্রই তোমাদের প্রভুর সামনে উপস্থিত করা হবে। তখন তোমরা অবাধে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে, যেমনভাবে এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছো। তাঁকে দেখার মধ্যে কোন রকম সংশয় থাকবে না। তোমরা দুনিয়ার কাজে পরাভূত না হয়ে সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামায অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামায আদায় কর। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর”–
(সূরা ক্বাফ ৩৯, সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৫১)
 
عَنْ صُهَيْبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي قَوْلِه‏:‏ ‏(‏لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ ‏)‏ قَالَ ‏”‏ إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ نَادَى مُنَادٍ إِنَّ لَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ مَوْعِدًا ‏.‏ قَالُوا أَلَمْ يُبَيِّضْ وُجُوهَنَا وَيُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ وَيُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ قَالُوا بَلَى ‏.‏ قَالَ فَيُكْشَفُ الْحِجَابُ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا أَعْطَاهُمْ شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَيْهِ ‏”‏ ‏ ‏.‏
সুহাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত; সুহাইব (রাঃ) হতে আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণী “যারা মঙ্গলজনক কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং আরো অধিক”-
(সূরা ইউনুস ২৬) প্রসঙ্গে বর্ণিত
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের পর একজন আহবানকারী (ফেরেশতা) ডেকে বলবেন; তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট আরো প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তারা (জান্নাতীরা) বলবে; তিনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? ফেরেশতারা বলবেন, হ্যাঁ। তারপর পর্দা খুলে যাবে (এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলার সাক্ষাৎ সংঘটিত হবে)। তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! তিনি মানুষকে তাঁর সাক্ষাতের চেয়ে বেশি পছন্দনীয় ও আকাঙ্ক্ষিত কোন জিনিসই প্রদান করেননি।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৫২)
 

আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথন;

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ لأَهْلِ الْجَنَّةِ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ ‏.‏ فَيَقُولُونَ لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ ‏.‏ فَيَقُولُ هَلْ رَضِيتُمْ فَيَقُولُونَ مَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ‏.‏ فَيَقُولُ أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ ‏.‏ قَالُوا وَأَىُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ قَالَ أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ أَبَدًا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏
 
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! তারা বলবে, “লাব্বাইকা রব্বানা ওয়া সা’দাইকা” (হে প্রভু! আমরা উপস্থিত)। তিনি বলবেন, তোমরা কি খুশি হয়েছো? তারা বলবে, আমরা কেন খুশি হবো না? আপনি তো আমাদেরকে ঐ সমস্ত জিনিস প্রদান করেছেন যা আপনার আর কোন সৃষ্টিকেই দেননি। তিনি বলবেন, আমি তোমাদেরকে এর চেয়েও উত্তম জিনিস প্রদান করবো। তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম জিনিস আর কি আছে? তিনি বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার চির সন্তুষ্টি বর্ষণ করছি, এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৫৫)
 

জান্নাতিরা এক অপরকে দেখতে পারবে;

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ لَيَتَرَاءَوْنَ فِي الْغُرْفَةِ كَمَا تَتَرَاءَوْنَ الْكَوْكَبَ الشَّرْقِيَّ أَوِ الْكَوْكَبَ الْغَرْبِيَّ الْغَارِبَ فِي الأُفُقِ أَوِ الطَّالِعَ فِي تَفَاضُلِ الدَّرَجَاتِ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أُولَئِكَ النَّبِيُّونَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ وَأَقْوَامٌ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَصَدَّقُوا الْمُرْسَلِينَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতবাসীরা নিজেদের অট্টালিকা (প্রাসাদ) থেকে সম্মান অনুযায়ী পরস্পরকে দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা পূর্বাকাশে উদয়াচলে ও পশ্চিমাকাশে অস্তাচলে নক্ষত্রসমুহ দেখতে পাও। তারা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তারা কি নাবীগণ? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! সেসব ব্যক্তিও উচ্চ সম্মানের আসনে থাকবে যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করেছে এবং রাসূলদেরকে সত্য বলে স্বীকার করেছে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৫৬)
 

জান্নাত জাহান্নাম হলো চিরস্থায়ী বাসস্থান;

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ ثُمَّ يَطَّلِعُ عَلَيْهِمْ رَبُّ الْعَالَمِينَ فَيَقُولُ أَلاَ يَتْبَعُ كُلُّ إِنْسَانٍ مَا كَانُوا يَعْبُدُونَهُ ‏.‏ فَيُمَثَّلُ لِصَاحِبِ الصَّلِيبِ صَلِيبُهُ وَلِصَاحِبِ التَّصَاوِيرِ تَصَاوِيرُهُ وَلِصَاحِبِ النَّارِ نَارُهُ فَيَتْبَعُونَ مَا كَانُوا يَعْبُدُونَ وَيَبْقَى الْمُسْلِمُونَ فَيَطَّلِعُ عَلَيْهِمْ رَبُّ الْعَالَمِينَ فَيَقُولُ أَلاَ تَتَّبِعُونَ النَّاسَ فَيَقُولُونَ نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ اللَّهُ رَبُّنَا هَذَا مَكَانُنَا حَتَّى نَرَى رَبَّنَا ‏.‏ وَهُوَ يَأْمُرُهُمْ وَيُثَبِّتُهُمْ ثُمَّ يَتَوَارَى ثُمَّ يَطَّلِعُ فَيَقُولُ أَلاَ تَتَّبِعُونَ النَّاسَ فَيَقُولُونَ نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ اللَّهُ رَبُّنَا وَهَذَا مَكَانُنَا حَتَّى نَرَى رَبَّنَا ‏.‏ وَهُوَ يَأْمُرُهُمْ وَيُثَبِّتُهُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا وَهَلْ نَرَاهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ وَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَإِنَّكُمْ لاَ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ تِلْكَ السَّاعَةَ ثُمَّ يَتَوَارَى ثُمَّ يَطَّلِعُ فَيُعَرِّفُهُمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّبِعُونِي ‏.‏ فَيَقُومُ الْمُسْلِمُونَ وَيُوضَعُ الصِّرَاطُ فَيَمُرُّونَ عَلَيْهِ مِثْلَ جِيَادِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ وَقَوْلُهُمْ عَلَيْهِ سَلِّمْ سَلِّمْ ‏.‏ وَيَبْقَى أَهْلُ النَّارِ فَيُطْرَحُ مِنْهُمْ فِيهَا فَوْجٌ ثُمَّ يُقَالُ هَلِ امْتَلأْتِ فَتَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ ‏.‏ ثُمَّ يُطْرَحُ فِيهَا فَوْجٌ فَيُقَالُ هَلِ امْتَلأْتِ ‏.‏ فَتَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ ‏.‏ حَتَّى إِذَا أُوعِبُوا فِيهَا وَضَعَ الرَّحْمَنُ قَدَمَهُ فِيهَا وَأُزْوِيَ بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ ثُمَّ قَالَ قَطْ قَالَتْ قَطْ قَطْ فَإِذَا أَدْخَلَ اللَّهُ أَهْلَ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ وَأَهْلَ النَّارِ النَّارَ قَالَ أُتِيَ بِالْمَوْتِ مُلَبَّبًا فَيُوقَفُ عَلَى السُّورِ الَّذِي بَيْنَ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَأَهْلِ النَّارِ ثُمَّ يُقَالُ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ ‏.‏ فَيَطَّلِعُونَ خَائِفِينَ ثُمَّ يُقَالُ يَا أَهْلَ النَّارِ ‏.‏ فَيَطَّلِعُونَ مُسْتَبْشِرِينَ يَرْجُونَ الشَّفَاعَةَ فَيُقَالُ لأَهْلِ الْجَنَّةِ وَأَهْلِ النَّارِ هَلْ تَعْرِفُونَ هَذَا فَيَقُولُونَ هَؤُلاَءِ وَهَؤُلاَءِ قَدْ عَرَفْنَاهُ هُوَ الْمَوْتُ الَّذِي وُكِّلَ بِنَا ‏.‏ فَيُضْجَعُ فَيُذْبَحُ ذَبْحًا عَلَى السُّورِ الَّذِي بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُقَالُ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ خُلُودٌ لاَ مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ خُلُودٌ لاَ مَوْتَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ – وَقَدْ رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رِوَايَاتٌ كَثِيرَةٌ مِثْلُ هَذَا مَا يُذْكَرُ فِيهِ أَمْرُ الرُّؤْيَةِ أَنَّ النَّاسَ يَرَوْنَ رَبَّهُمْ وَذِكْرُ الْقَدَمِ وَمَا أَشْبَهَ هَذِهِ الأَشْيَاءَ وَالْمَذْهَبُ فِي هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنَ الأَئِمَّةِ مِثْلِ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَمَالِكِ بْنِ أَنَسٍ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَابْنِ عُيَيْنَةَ وَوَكِيعٍ وَغَيْرِهِمْ أَنَّهُمْ رَوَوْا هَذِهِ الأَشْيَاءَ ثُمَّ قَالُوا تُرْوَى هَذِهِ الأَحَادِيثُ وَنُؤْمِنُ بِهَا وَلاَ يُقَالُ كَيْفَ وَهَذَا الَّذِي اخْتَارَهُ أَهْلُ الْحَدِيثِ أَنْ تُرْوَى هَذِهِ الأَشْيَاءُ كَمَا جَاءَتْ وَيُؤْمَنُ بِهَا وَلاَ تُفَسَّرُ وَلاَ تُتَوَهَّمُ وَلاَ يُقَالُ كَيْفَ وَهَذَا أَمْرُ أَهْلِ الْعِلْمِ الَّذِي اخْتَارُوهُ وَذَهَبُوا إِلَيْهِ ‏.‏ وَمَعْنَى قَوْلِهِ فِي الْحَدِيثِ ‏”‏ فَيُعَرِّفُهُمْ نَفْسَهُ ‏”‏ ‏.‏ يَعْنِي يَتَجَلَّى لَهُمْ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; ক্বিয়ামাত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা সমস্ত মানুষকে একটি ময়দানে একত্রিত করবেন, তারপর রাব্বুল ‘আলামীন তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলবেনঃ পৃথিবীতে যে যার অনুসরণ করতো, এখন কেন সে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না? অতএব, ক্রুশ পূজারীদের জন্য ক্রুশ, মূর্তি পূজারীদের জন্য মূর্তি, অগ্নি উপাসকদের জন্য আগুন উপস্থাপন করা হবে এবং সকলেই নিজ নিজ পূজনীয় মা’বুদদের সাথে চলবে। আর মুসলিমগণ তাদের জায়গাতেই থেকে যাবে। রাববুল ‘আলামীন তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলবেনঃ তোমরা কেন ঐসব মানুষদের অনুসরণ করছো না? তারা বলবে, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা (আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। আল্লাহ্‌ তা’আলাই আমাদের প্রভু। আর এটা আমাদের জায়গা। আমরা আমাদের প্রভুর সাক্ষাৎ পাবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত এ স্থান ছেড়ে যাবো না। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিবেন এবং তাদেরকে নিজ জায়গায় অটল রাখবেন। তারপর আল্লাহ্‌ তা’আলা অদৃশ্য হয়ে যাবেন। তিনি পুনরায় তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলবেন, তোমরা কেন ঐসব মানুষের অনুসরণ করছো না? তারা বলবে, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা, নাঊযুবিল্লাহ মিনকা, আল্লাহ্‌ আমাদের রব এবং এটা আমাদের অবস্থানস্থল। আমরা আমাদের রবের দেখা পাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এ জায়গা ছেড়ে যাবো না। তিনি তাদেরকে আদেশ দিবেন এবং স্বস্থানে দৃঢ় রাখবেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি আমাদের প্রভুর দেখা পাবো? তিনি বললেন; তোমাদের কি পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখতে অন্যদেরকে কষ্ট দিতে হয়? তারা বললেন, না, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন; অনুরূপভাবে সে সময় তোমরা তাঁকে দেখার জন্য তোমাদের কাউকেও যন্ত্রণা দিতে হবে না। তারপর আল্লাহ্‌ তা’আলা আড়ালে চলে যাবেন। তিনি পুনরায় তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে নিজের পরিচিতি উপস্থাপন করে বলবেনঃ আমিই তোমাদের প্রভু। তোমরা আমার অনুসরণ কর। মুসলিমগণ উঠে দাঁড়াবে। চলার পথে পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। তারা তা খুব সহজেই দ্রুতগামী ঘোড়া ও উটের মতো অতিক্রম করবে এবং এর উপরে তাদের ধ্বনি হবেঃ ‘সাল্লিম সাল্লিম’ (হে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শান্তিতে রাখো)। জাহান্নামীরা অতিক্রম না করতে পেরে এখানেই থেকে যাবে। তাদের মধ্য হতে একটি দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং জাহান্নামকে প্রশ্ন করা হবে, তোর পেট ভরেছে কি? সে বলবে, আরো আছে কি? আবার আরেকটি দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং প্রশ্ন করা হবে, তোর পেট ভরেছে কি? সে বলবে, আরো আছে কি? এভাবে সমস্ত জাহান্নামীকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন দয়ালু প্ৰভু আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর পা এর উপর রাখবেন এবং এর এক অংশ আরেক অংশের সাথে সংকুচিত হয়ে যাবে। তিনি বলবেন, যথেষ্ট হয়েছে তো? জাহান্নাম বলবে, হ্যাঁ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।
এরপর আল্লাহ্‌ তা’আলা যখন জান্নাতীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, তখন ‘মৃত্যু’-কে গলায় কাপড় বেঁধে টেনে আনা হবে এবং জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝখানের প্রাচীরে রাখা হবে। তারপর ডেকে বলা হবে, হে জান্নাতীগণ! তারা ভয়ে ভয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর বলা হবে, হে জাহান্নামীগণ! তারাও সুসংবাদ মনে করে শাফা‘আত লাভের আশায় আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কি একে চিনো? জান্নাতী ও জাহান্নামীরা বলবে, হ্যাঁ আমরা একে চিনে ফেলেছি। এটা ‘মৃত্যু’ যা আমাদের উপর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তারপর মৃত্যুকে চিৎ করে শোয়ানো হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যকার প্রাচীরের উপর যবেহ করা হবে। তারপর বলা হবে, হে জান্নাতীগণ! তোমরা চিরকাল জান্নাতে থাকবে। এরপর আর মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীগণ! তোমরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে, এরপর আর মৃত্যু নেই।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৫৭)
 
، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، يَرْفَعُهُ قَالَ ‏ “‏ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ أُتِيَ بِالْمَوْتِ كَالْكَبْشِ الأمْلَحِ فَيُوقَفُ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُذْبَحُ وَهُمْ يَنْظُرُونَ فَلَوْ أَنَّ أَحَدًا مَاتَ فَرَحًا لَمَاتَ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَلَوْ أَنَّ أَحَدًا مَاتَ حَزَنًا لَمَاتَ أَهْلُ النَّارِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি মারফু’ হিসেবে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; কিয়ামাত দিবসে মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে সাদা-কালো বর্ণের ভেড়ার আকারে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হবে। আর তারা (জান্নাতী ও জাহান্নামীরা) তা দেখতে থাকবে। কেউ যদি আনন্দ-উল্লাসের কারণে মৃত্যুবরণ করতো, তাহলে জান্নাতবাসীরা (এতে আশ্চর্য হয়ে) মারা যেতো। আর কেউ যদি চিন্তা ও দুঃখের কারণে মৃত্যুবরণ করতো তাহলে জাহান্নামীরা (দুঃখ ও ক্ষোভে) মারা যেতো।“
(কেউ যদি মৃত্যুবরণ করতো” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ, যঈফাহ (২৬৬৯), বুখারী, মুসলিম।সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৫৮)
 

জান্নাতকে কষ্টদায়ক কাজ ও জাহান্নামকে কুপ্রবৃত্তি ও লালসা দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে;

، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ حُفَّتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ وَحُفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏
 
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাত দুঃখ-কষ্ট ও শ্রমসাধ্য বিষয় দ্বারা ঘেরা এবং জাহান্নাম কু-প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসা দ্বারা ঘেরা।(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৫৯)
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّة
 وَالنَّارَ أَرْسَلَ جِبْرِيلَ إِلَى الْجَنَّةِ فَقَالَ انْظُرْ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا أَعْدَدْتُ لأَهْلِهَا فِيهَا قَالَ فَجَاءَهَا وَنَظَرَ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا أَعَدَّ اللَّهُ لأَهْلِهَا فِيهَا قَالَ فَرَجَعَ إِلَيْهِ قَالَ فَوَعِزَّتِكَ لاَ يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلاَّ دَخَلَهَا ‏.‏ فَأَمَرَ بِهَا فَحُفَّتْ بِالْمَكَارِهِ فَقَالَ ارْجِعْ إِلَيْهَا فَانْظُرْ إِلَى مَا أَعْدَدْتُ لأَهْلِهَا فِيهَا قَالَ فَرَجَعَ إِلَيْهَا فَإِذَا هِيَ قَدْ حُفَّتْ بِالْمَكَارِهِ فَرَجَعَ إِلَيْهِ فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خِفْتُ أَنْ لاَ يَدْخُلَهَا أَحَدٌ ‏.‏ قَالَ اذْهَبْ إِلَى النَّارِ فَانْظُرْ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا أَعْدَدْتُ لأَهْلِهَا فِيهَا ‏.‏ فَإِذَا هِيَ يَرْكَبُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَرَجَعَ إِلَيْهِ فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لاَ يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا ‏.‏ فَأَمَرَ بِهَا فَحُفَّتْ بِالشَّهَوَاتِ فَقَالَ ارْجِعْ إِلَيْهَا ‏.‏ فَرَجَعَ إِلَيْهَا فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لاَ يَنْجُوَ مِنْهَا أَحَدٌ إِلاَّ دَخَلَهَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন;  আল্লাহ্‌ তা’আলা জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করার পর জিবরীল (আঃ)-কে জান্নাতের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে বলেনঃ জান্নাত এবং আমি এর মধ্যে জান্নাতীদের জন্য যেসব দ্রব্যাদি সৃষ্টি করে রেখেছি, তুমি সেগুলো দেখে এসো। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি জান্নাতে গিয়ে আল্লাহ্‌ তা’আলার সৃষ্টিকৃত সমস্ত দ্রব্যাদি দেখলেন এবং তাঁর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনার সম্মানের শপথ! যে কেউ জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ প্রসঙ্গে শুনবে, সে-ই তাতে প্রবেশের চেষ্টা করবে। তারপর তিনি আদেশ করলেন। ফলে কষ্ট-মুসীবাতের বস্তু দ্বারা জান্নাতকে ঘেরাও করা হলো। তিনি জিবরীল (আঃ)-কে পুনরায় বললেনঃ তুমি আবার জান্নাতে প্রবেশ কর এবং জান্নাতীদের জন্য আমার তৈরিকৃত সামগ্ৰী দেখে এসো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর তিনি সেখানে ফিরে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, তা কষ্ট ও মুসীবাতের বস্তু দ্বারা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। তিনি আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনার সম্মানের শপথ! আমার ভয় হচ্ছে যে, এতে কোন ব্যক্তিই যেতে পারবে না। এবার আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে বললেনঃ আমি জাহান্নাম এবং জাহান্নামীদের জন্য যে আযাব তৈরি করে রেখেছি তুমি গিয়ে তা দেখে এসো। তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, এর একাংশ অন্য অংশের উপর চড়াও হচ্ছে (একটি অন্যটিকে গ্রাস করছে)। তিনি তা দেখার পর আল্লাহ্‌ তা’আলার সামনে ফিরে এসে বললেন, আপনার সম্মানের শপথ! যে ব্যক্তি এর বর্ণনা শুনবে সে এতে প্রবেশ করবে না। তারপর তাঁর নির্দেশে জাহান্নামকে লোভ-লালসা দ্বারা ঘিরে ফেলা হলো। এবার জিবরীল (আঃ)-কে তিনি বললেনঃ তুমি আবার সেখানে যাও (এবং তা দেখে এসো)। তিনি সেখানে আবারো গেলেন এবং ফিরে এসে বললেন, আপনার সম্মানের কসম! আমার তো ধারণা হচ্ছে যে, কেউই এই থেকে মুক্তি পাবে না, সকলেই এতে প্রবেশ করবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৬০)
 

 জান্নাতিদের বিশেষ কিছু গুন;

حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي الْيَقْظَانِ، عَنْ زَاذَانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ ثَلاَثَةٌ عَلَى كُثْبَانِ الْمِسْكِ – أُرَاهُ قَالَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَغْبِطُهُمُ الأَوَّلُونَ وَالآخِرُونَ رَجُلٌ يُنَادِي بِالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَرَجُلٌ يَؤُمُّ قَوْمًا وَهُمْ بِهِ رَاضُونَ وَعَبْدٌ أَدَّى حَقَّ اللَّهِ وَحَقَّ مَوَاليه ‏.‏
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন প্রকার লোক কিয়ামতের দিন কস্তুরীর স্তূপের উপর আসন গ্রহণ করবে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ তাদের এ মর্যাদায় ঈর্ষা করবে।
১) যে ব্যক্তি দিন-রাত পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান দেয়;
২) যে ব্যক্তি কোন জাতির নেতৃত্ব করে আর তারা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে এবং
৩) যে গোলাম আল্লাহ্ তা’আলার ও তার মনিবের হক আদায় করে।
(সুনানে তিরমিযি ২৫৬৬)
 
، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، يَرْفَعُهُ قَالَ ‏ “‏ ثَلاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللَّهُ رَجُلٌ قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَتْلُو كِتَابَ اللَّهِ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ صَدَقَةً بِيَمِينِهِ يُخْفِيهَا أُرَاهُ قَالَ مِنْ شِمَالِهِ وَرَجُلٌ كَانَ فِي سَرِيَّةٍ فَانْهَزَمَ أَصْحَابُهُ فَاسْتَقْبَلَ الْعَدُو‏
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা তিন প্রকার লোককে ভালবাসেন।
১) যে ব্যক্তি রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাযে কুরআন তিলাওয়াত করে;
২) যে ব্যক্তি ডান হাতে দান-খাইরাত করে আর তার বাঁ হাতও তা টের পায়না এবং
৩) যে ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীতে যুদ্ধরত অবস্থায় থাকে, তার সাথীরা পরাজিত হয়ে গেলেও সে দুশমনের মুকাবিলা করতে থাকে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৬৭)
 

জান্নাতের নহর সমূহের বিবরণ;

عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَحْرَ الْمَاءِ وَبَحْرَ الْعَسَلِ وَبَحْرَ اللَّبَنِ وَبَحْرَ الْخَمْرِ ثُمَّ تُشَقَّقُ الأَنْهَارُ بَعْدُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَحَكِيمُ بْنُ مُعَاوِيَةَ هُوَ وَالِدُ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ وَالْجُرَيْرِيُّ يُكْنَى أَبَا مَسْعُودٍ وَاسْمُهُ سَعِيدُ بْنُ إِيَاسٍ ‏.‏
 
হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ্ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জান্নাতের মধ্যে পানি, মধু, দুধ ও মদের সমুদ্র আছে। এগুলো থেকে আরো ঝর্ণা বা নদীসমূহ প্রবাহিত হবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭১)
 

বেশি বেশি জান্নাত প্রার্থনা করা;

حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ بُرَيْدِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ ‏.‏ وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنَ النَّار
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; কোন লোক জান্নাতের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট তিনবার প্রার্থনা করলে জান্নাত তখন বলে; হে আল্লাহ্‌! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোন লোক তিনবার জাহান্নাম হতে পানাহ (আশ্রয়) চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট বলে; হে আল্লাহ্‌! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭২)
 

উপসংহার;

প্রিয় পাঠক জান্নাত আল্লাহ তায়ালার এমন নেয়ামত তাকে আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রাকার নেয়ামত দিয়ে পূর্ণ করে প্রস্তূত করে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নেয়ামত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন; 

ان تعدوا نعمة الله لا تحصواها

যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গননা করতে চাও তাহলে তা গননা করে শেষ করবে পারবে না। সুতরাং চিন্তা করার বিষয় সামান্য এই দুনিয়ায় নেয়ামত ই গগনা করে শেষ না করা যায় তাহলে থেকে কমপক্ষে দশগুন বড় জান্নাতের নেয়ামত গননা করা সম্ভব কিভাবে সম্ভব হবে?। এমনকি চিন্তা ও ধরনা করার পরিধী ও মানুষের নেই।তাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِيْنَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ ذُخْرًا بَلْهَ مَا أُطْلِعْتُمْ عَلَيْهِ ثُمَّ قَرَأَ {فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّآ أُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍجَزَآءًمبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ}.قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنْ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ قَرَأَ أَبُو هُرَيْرَةَ قُرَّاتِ أَعْيُنٍ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন; আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তুরাজি তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন ব্যক্তির মন কল্পনা করেনি। এসব ছাড়া যা কিছুই তোমরা দেখছ, তার কোন মূল্যই নেই। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন, কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন তৃপ্তিকর কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পারিতোষিক হিসেবে।
(আ.প্র. ৪৪১৬, ই.ফা. ৪৪১৮, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৭৮০)

আসলে বিষয়টি যদি আমারা দুনিয়ার একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝি তাহলে অনুধাবন করতে সহজ হবে ব্যবসায়ীরা যেহেতু তাদের মনে সর্বদাই মুনাফা লাভের আশা রাখে যদি কোন পন্যের সেম্পল বা নমুনা দেখে বুঝতে পারে যে এই পন্যে তার বিশাল মুনাফা অর্জন হবে তাহলে কিন্তু সে পন্যের প্রতিটা অংশ দেখার প্রয়োজন মনে করে না বরং যত দ্রুত সম্ভব তা ক্রয় করে নেয়।ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের প্রতিটি মুসলমানের যেহেতু জান্নাতে প্রবেশের সীমাহীন আশা রয়েছে তাই আল্লাহ তায়ালা নমুনা স্বরুপ কিছু নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন যেন আমাদের অন্তরে জান্নাত প্রাপ্তির আশা আরো বেড়ে যায় এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশী বেশী নেক আমল করি ।আর জান্নাতের বাস্তব বর্ণনা জান্নাতই‌।জান্নাতে প্রবেশ করা ব্যতীত তার পুরোপুরি পরিচয় দেওয়া সম্ভব নেই।

প্রিয়পাঠক আল্লাহ তায়ালা জান্নাত মুমীনের জন্য স্থায়ী আবাসস্থল ও মেহমান খানার স্বরুপ বানিয়েছেন।আর এই পূর্ণ সফলতা ওবিরাট নেয়ামত প্রাপ্তির মাধ্যম দুনিয়ার মুনাফা ও সফলতা অর্জনের থেকে সহজ করেছেন ।

পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা শূরার ২০ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন;যেব্যক্তি

مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ  [الشورى: 20

আখেরাতে ফসল কামনা করে, আমি তার ফসল বাড়িয়ে দেই ।আর যে ব্যক্তি (কেবল) দুনিয়ার ফসল কামনা করে তাকে আমি তা থেকে কিছুটা (সম্পূর্ণ নয়) দান করি ।

তেমনিভাবে সুরা বনী ইসরাইলের ১৭-১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন;

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُونِ مِنْ بَعْدِ نُوحٍ وَكَفَى بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا   
[الإسراء: 17

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا  [الإسراء: 18

উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা বুঝা যায় পূর্ণ সফলতা বা জান্নাতের অর্জনের জন্য যে ইবাদাতই করা হবে তা অবশ্যই বান্দা পাবে। এতে সামান্য পরিমাণ ও সন্দেহ করার সুযোগ নেই । পক্ষান্তরে দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে কিছু করলে প্রথমত তার লাভবান না হওয়ার ওআশংকা আছে । দ্বিতীয়ত যদি সফলতা থাকেও তাহলে তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়ার কোন গ্যারন্টি নেই বরং আল্লাহ তায়ালা যতটুকু চান ততটুকু পাবে । সুতরাং বুদ্ধমান ব্যক্তিতো সম্ভাব্য কোন সফলতাকে নিশ্চিত ,স্থায়ী,ও পূর্ন সফলতার উপর প্রাধান্য দিতে পারে না ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বেশী বেশী নেক আমল করার তাওফীক দান করেন এবংপ্রকৃত মুমিন মুত্তাকি হওয়ার তাওফীক দান করেন। সর্বদা যেন দ্বীনের খেদমত ও দ্বীনী ফিকির নিয়ে চলার তাওফীক দান করেন। নিজের আমলকে সুন্দর করা তাওফীক দান করেন। মৃত্যুর পরে আমাদের সবাইকে জান্নাত নসীব করুন। আমীন ।

এখানে মন্তব্য করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা