fbpx

ফেরেশতা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ ফেরেশতা
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاءِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (31

[البقرة: 31]

সরল অনুবাদ

আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৩১

আয়াতে কারীমাহ্

بَلَى إِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُمْ مِنْ فَوْرِهِمْ هَذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ آلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ (125

[آل عمران: 125]

সরল অনুবাদ

অবশ্যই, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং সাবধান হয়ে চল, তাহলে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার[১] (বিশেষরূপে) চিহ্নিত ফিরিশতা[২] দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।

সূরার নাম ঃ আল ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১২৫

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

 [১] মুসলিমরা তো কুরাইশদের নিরস্ত্র বাণিজ্যিক কাফেলার উপর আক্রমণ করার জন্য বদরের দিকে যাত্রা করেছিলেন। বদর পৌঁছে তাঁরা জানতে পারলেন, মক্কা থেকে মুশরিকদের এক সৈন্যদল বিপুল সংখ্যায় পূর্ণ ক্রোধ ও রোষের সাথে এবং পুরো উদ্যমে আগমন করছে। এ কথা শুনে মুসলিমদের মধ্যে হতবুদ্ধিতা ও অস্থিরতা মিশ্রিত যুদ্ধের উদ্দীপনা জেগে উঠল এবং তাঁরা মহান প্রভুর নিকট দু’আ ও ফরিয়াদ করলেন। ফলে মহান আল্লাহ প্রথমে এক হাজার এবং পরে আরো তিন হাজার ফিরিশতা প্রেরণের সুসংবাদ দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তোমরা যদি ধৈর্য ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আর মুশরিকরা যদি এই ক্রোধ ও রোষের সাথে এসে পড়ে, তবে অতিরিক্ত আরো পাঁচ হাজার ফিরিশতা প্রেরণ করা হবে। বলা হয় যে, মুশরিকদের উদ্যম ও ক্রোধ স্থায়ী হতে পারেনি (বদর প্রান্তে পৌঁছনোর আগেই তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়। একদল মক্কা প্রত্যাবর্তন করে এবং অবশিষ্ট যারা বদর পর্যন্ত ছিল তাদের অধিকাংশ সর্দারদের মত ছিল যুদ্ধ না করা), তাই সুসংবাদ অনুযায়ী তিন হাজার ফিরিশতা প্রেরণ করা হয় এবং পাঁচ হাজার সংখ্যা পূরণ করার প্রয়োজন পড়েনি। তবে কোন কোন মুফাসসের বলেছেন যে, এই সংখ্যা পূর্ণ করা হয়েছিল।
[২] অর্থাৎ, চিনার জন্য তাঁদের বিশেষ নির্দশন থাকবে।

আয়াতে কারীমাহ্

وَقَالُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌ وَلَوْ أَنْزَلْنَا مَلَكًا لَقُضِيَ الْأَمْرُ ثُمَّ لَا يُنْظَرُونَ (8

[الأنعام: 8]

সরল অনুবাদ

তারা বলে, ‘তার নিকট কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করা  হয় না কেন?’ আমি যদি কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করতাম, তাহলে তাদের কর্মের চূড়ান্ত মীমাংসা তো হয়েই যেত। অতঃপর তাদেরকে কোন অবকাশ দেওয়া হত না। [১]

সূরার নাম ঃ আল আনআম
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ০৮

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] মহান আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্য নবী ও রসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন মানুষেরই মধ্য থেকে। প্রত্যেক জাতিতে তাদেরই মধ্য হতে একজনকে অহী এবং রিসালাত দানে ধন্য করতেন। কারণ, এ ছাড়া কোন রসূলই (দ্বীনের) তবলীগ এবং দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না। যেমন, যদি ফিরিশতাকে আল্লাহ রসূল বানিয়ে প্রেরণ করতেন,
তাহলে প্রথমতঃ তাঁরা মানুষের ভাষায় কথোপকথন করতে পারতেন না
এবং দ্বিতীয়তঃ তাঁরা মানবিক স্বভাব-প্রকৃতি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে মানুষের বিভিন্ন অবস্থার বিভিন্ন ভাব ও আচরণকে বুঝতেও পারতেন না।
এই অবস্থায় হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব কিভাবে তাঁরা আদায় করতে পারতেন?
তাই মানুষের প্রতি আল্লাহর এটা বড়ই অনুগ্রহ যে, তিনি মানুষকেই নবী ও রসূল বানিয়েছেন। আর এটাকে কুরআনেও মহান আল্লাহ অনুগ্রহ স্বরূপ উল্লেখ করেছেন।

{لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ}

“আল্লাহ মু’মিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে তাদেরই মধ্য হতে একজন রসূল পাঠিয়েছেন।”
(সূরা আলে ইমরান ৩:১৬৪)
কিন্তু নবীদের মানুষ হওয়া কাফেরদের বিস্ময় ও বিচলিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা মনে করত যে, রসূল মানুষের মধ্য থেকে নয়, বরং ফিরিশতাদের মধ্য হতে হওয়া উচিত। অর্থাৎ, তাদের মতে, মানুষ রসূল হওয়ার উপযুক্ত নয়। যেমন, বর্তমানের বিদআতীরাও এটা মনে করে। تَشَابَهَتْ قُلُوْبُهُمْ কাফের ও মুশরিকরা রসূলদের মানুষ হওয়ার কথা তো অস্বীকার করতে পারত না। কারণ, তারা তাঁদের বংশ পরিচয়ের ব্যাপারে প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত ছিল, ফলে তারা রিসালাতকে অস্বীকার করত।
পক্ষান্তরে বর্তমানের বিদআতীরা রিসালাতের কথা তো অস্বীকার করে না, কিন্তু মানুষ হওয়াকে রসূল হওয়ার পরিপন্থী মনে করে রসূলদের মানুষ হওয়ার কথা অস্বীকার করে। যাই হোক মহান আল্লাহ এই আয়াতে বলছেন, যদি আমি কাফেরদের দাবী অনুযায়ী কোন ফিরিশতাকে রসূল বানিয়ে প্রেরণ করতাম অথবা এই রসূলের সত্যায়নের জন্য কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করতাম (যেমন, এখানে এই কথাটাই বলা হয়েছে) অতঃপর তারা যদি তার উপর ঈমান না আনত, তবে কোন অবকাশ না দিয়েই তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হত।