দোয়া (প্রার্থনা)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বিষয়ঃ দোয়া (প্রার্থনা)
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي (25
وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي (26
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي (27
يَفْقَهُوا قَوْلِي (28
[طه: 25 – 28]
সরল অনুবাদ
- মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও (ত্বোয়া-হা-২৫)
- আর আমার জন্য আমার কাজকে সহজ করে দাও।
(ত্বোয়া-হা-২৬) - আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও।
(ত্বোয়া-হা-২৭) - যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
(ত্বোয়া-হা-২৮)
সূরার নাম ঃ ত্বোয়া-হা
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ২৫-২৮
আয়াতে কারীমাহ্
فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ قَالَ رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ (21
[القصص: 21]
সরল অনুবাদ
অতঃপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতে। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর।
সূরার নাম ঃ আল কাসাস
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ২১
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আয়াতে কারীমাহ্
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ (100
[الصافات: 100]
সরল অনুবাদ
হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে এক সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান কর।
সূরার নাম ঃ আস ছাফ্ফাত
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১০০
আয়াতে কারীমাহ্
قَالَ رَبِّ انْصُرْنِي عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِينَ (30
[العنكبوت: 30]
সরল অনুবাদ
সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।’
সূরার নাম ঃ আল আনকাবুত
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৩০
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
অর্থাৎ, যখন লূত (আঃ) নিজ জাতির সংস্কার হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে গেলেন, তখন মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলেন।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ (118
[المؤمنون: 118]
সরল অনুবাদ
বলূনঃ হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।
সূরার নাম ঃ আল মুমিনূন
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১১৮
আয়াতে কারীমাহ্
رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ (83
[الشعراء: 83]
সরল অনুবাদ
হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অর্ন্তভুক্ত কর।
সূরার নাম ঃ আশ শুআরা
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৮৩
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
حُكم বলতে হিকমত, প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বুঝ, বিবেক, বিচারশক্তি, অথবা নবুঅত ও রিসালত বা আল্লাহর সীমা ও নির্দেশাবলীর জ্ঞান।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
رَبِّ نَجِّنِي وَأَهْلِي مِمَّا يَعْمَلُونَ (169
[الشعراء: 169]
সরল অনুবাদ
হে আমার প্রতিপালক! তারা যা করে তা থেকে তুমি আমাকে ও আমার পরিবারবর্গকে রক্ষা কর।
সূরার নাম ঃ আশ শুআরা
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১৬৯
আয়াতে কারীমাহ্
فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًا مِنْ قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ (19
[النمل: 19]
সরল অনুবাদ
তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি যে অনুগ্রহ দান করেছ তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আমাকে শক্তি দান কর আর যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও আর তোমার দয়ায় আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।’
সূরার নাম ঃ আন নম্ল
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১৯
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আয়াতে কারীমাহ্
قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (16
[القصص: 16]
সরল অনুবাদ
তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি নিজের আত্মার উপর যুলম করেছি, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’ অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন, অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
সূরার নাম ঃ আল কাসাস
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১৬
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
এই অনিচ্ছাকৃত আকস্মিক হত্যা যদিও কাবীরাহ গোনাহ ছিল না (কারণ মহান আল্লাহ নবীগণকে তা হতে সুরক্ষা করেন) তা সত্ত্বেও তিনি এই গোনাহকে এমন ভাবলেন, যার ফলে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরী মনে করলেন। দ্বিতীয়তঃ এ আশঙ্কাও তাঁর ছিল যে, ফিরআউন যদি জানতে পারে, তাহলে তার বদলা নিতে সে হয়তো তাঁকেও হত্যা করবে।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ (97
وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ (98
[المؤمنون: 97، 98]
সরল অনুবাদ
- বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।
(আল মুমিনূন-৯৭) - এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।
(আল মুমিনূন-৯৮)
সূরার নাম ঃ আল মুমিনূন
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৯৭-৯৮
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আয়াতে কারীমাহ্
وَزَكَرِيَّا إِذْ نَادَى رَبَّهُ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ (89
[الأنبياء: 89]
সরল অনুবাদ
আর স্মরণ কর যাকারিয়ার কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একা (সন্তানহীন) ছেড়ে দিও না এবং তুমিই সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’
সূরার নাম ঃ আল আম্বিয়া
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৮৯
আয়াতে কারীমাহ্
وَقُلْ رَبِّ أَنْزِلْنِي مُنْزَلًا مُبَارَكًا وَأَنْتَ خَيْرُ الْمُنْزِلِينَ (29
[المؤمنون: 29]
সরল অনুবাদ
আরো বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক![১] আমাকে এমনভাবে অবতারণ কর, যা হবে কল্যাণকর; আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।’[২]
সূরার নাম ঃ আল মুমিনূন
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ২৯
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
(সূরা যুখরুফ ৪৩:১৩-১৪ আয়াত)
আয়াতে কারীমাহ্
وَقُلْ رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا (80
[الإسراء: 80]
সরল অনুবাদ
বলুনঃ ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কল্যাণ সহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণ সহ বের কর। আর তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ [১]
সূরার নাম ঃ বনী-ইসরাঈল
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৮০
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
[১] কেউ কেউ বলেন, এটা হিজরতের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন নবী (সাঃ)-এর মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদীনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল, সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করো।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُ قَالَ رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ (38
[آل عمران: 38]
সরল অনুবাদ
সেখানেই যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন। বললেন, হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।
সূরার নাম ঃ আল ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৩৮
আয়াতে কারীমাহ্
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِأَخِي وَأَدْخِلْنَا فِي رَحْمَتِكَ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ (151)
[الأعراف: 151]
সরল অনুবাদ
মূসা বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, ক্ষমা কর আমাকে আর আমার ভাইকে এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যে সর্বাধিক করুণাময়।
সূরার নাম ঃ আল আরাফ
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৫১
আয়াতে কারীমাহ্
قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلَّا تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُنْ مِنَ الْخَاسِرِينَ (47
[هود: 47]
সরল অনুবাদ
নূহ (আঃ) বলেন- ‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হতে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। যদি তুমি আমাকে ক্ষমা না কর আর আমার প্রতি দয়া না কর তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’
সূরার নাম ঃ হুদ
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৪৭
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
যখন নূহ (আঃ) অবগত হলেন যে, তাঁর প্রার্থনা ঠিক হয়নি, তখন অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে নিলেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর দয়া ও ক্ষমার প্রার্থী হলেন।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا (24
[الإسراء: 24]
সরল অনুবাদ
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো[১] এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’
সূরার নাম ঃ বনী-ইসরাঈল
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ২৪
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
[১] পাখী যখন তার বাচ্চাদেরকে নিজ করুণার ছায়ায় রাখতে চায়, তখন তাদের জন্য নিজের ডানাকে নত করে দেয়।
অর্থাৎ, তুমিও পিতা-মাতার সাথে ঐরূপ উত্তম এবং করুণাসিক্ত আচরণ কর। আর তাঁদের ঐরূপ সেবাযত্ন কর, যেরূপ তাঁরা তোমার সেবাযত্ন করেছিলেন; যখন তুমি শিশু ছিলে।
অথবা এর অর্থ হল, পাখী যখন উড়ার এবং ঊর্ধ্বে যাওয়ার ইচ্ছা করে, তখন তার ডানা দু’টিকে প্রসারিত করে দেয়। আর যখন নীচে অবতরণ করার ইচ্ছা করে, তখন ডানা দু’টি গুটিয়ে নেয়। এই দিক দিয়ে বাজু বিছিয়ে দেওয়ার অর্থ হবে, পিতা-মাতার সামনে নম্র ও বিনয়ী হয়ে যাও।(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ (40
[إبراهيم: 40]
সরল অনুবাদ
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও আর আমার সন্তানদেরকেও, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমার প্রার্থনা কবূল কর।
সূরার নাম ঃ ইব্রাহীম
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৪০
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
নিজের সাথে স্বীয় সন্তানদের জন্যও দু’আ করলেন। ইতিপূর্বেও নিজের সাথে স্বীয় সন্তানদের জন্য দু’আ করলেন যে, তাদেরকে পাথরের মূর্তিপূজা থেকে বাঁচিয়ে রাখো।
এ থেকে জানা গেল যে,
দ্বীনের আহবায়কদেরকে স্বীয় পরিবারের হিদায়াত এবং তাদের দ্বীনী শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে উদাসীন থাকা উচিত নয়। বরং দাওয়াত ও তবলীগে তাদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে রাখা উচিত।যেমন মহান আল্লাহ স্বীয় শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-কেও নির্দেশ দিয়েছেন:وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ অর্থাৎ, স্বীয় নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর।
(সূরা শু’আরা ২৬:২১৪)