fbpx

জাতি ও জনগোষ্ঠি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ জাতি ও জনগোষ্ঠি
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنْجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنْتُمْ تَنْظُرُونَ (50

[البقرة: 50]

সরল অনুবাদ

যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিধা বিভক্ত করেছিলাম (১) এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফিরআউনের অনুসারীদেরকে (সমুদ্রে) ডুবিয়ে দিলাম, আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৫০

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

(১) সমুদ্র বিদীর্ণ ক’রে পথ তৈরী করার ব্যাপারটা একটি মু’জিযা (অলৌকিক ঘটনা) ছিল;  এটা জোয়ার-ভাটার ব্যাপার ছিল না; যেমন স্যার সাইয়েদ আহমাদ খান এবং অন্যান্য মু’জিযা অস্বীকারকারিগণ মনে করেন।

আয়াতে কারীমাহ্

فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَنْزَلْنَا عَلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا رِجْزًا مِنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ (59

[البقرة: 59]

সরল অনুবাদ

কিন্তু যারা অন্যায় করেছিল, তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। (১) সুতরাং যালেমদের প্রতি আমি আকাশ হতে শাস্তি (২) প্রেরণ করলাম, কারণ তারা সত্যত্যাগ করেছিল।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৫৯

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

(১) এর স্পষ্ট বর্ণনা সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, সিজদানত অবস্থায় প্রবেশ কর, কিন্তু তারা পাছাকে যমীনে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে প্রবেশ করে এবং ‘হিত্ত্বাহ’এর পরিবর্তে (হিনত্বাহ) ‘হাববাতুন ফী শা’রাহ’ (অর্থাৎ, শীষে গম) বলতে বলতে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে কতই না অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতা জন্ম নিয়েছিল এবং আল্লাহর বিধানের সাথে তারা কিভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুতঃ যখন কোন জাতি চারিত্রিক ও আচার-আচরণে অধঃপতনের শিকার হয়, তখন আল্লাহর বিধানের সাথেও তাদের কার্যকলাপ অনুরূপ হয়ে যায়।
(২) এই আকাশ হতে আগত শাস্তি বা আসমানী আযাব কি ছিল? কয়েকটি উক্তি এ ব্যাপারে এসেছে। যেমন, আল্লাহর গযব, কঠিন ঠান্ডাজনিত কুয়াশা অথবা প্লেগ রোগ। শেষোক্ত অর্থের সমর্থন হাদীসে পাওয়া যায়।
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “এই প্লেগ সেই আযাব ও শাস্তির অংশ যা তোমাদের পূর্বে কোন জাতির উপর নাযিল করা হয়েছিল। তোমাদের উপস্থিতিতে কোন স্থানে যদি এই প্লেগ মহামারী দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না এবং কোন স্থানে যদি এই মহামারী হয়েছে বলে শোন, তবে সেখানে প্রবেশ করবে না।”
(সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাম, পরিচ্ছেদঃ প্লেগ, কুলক্ষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি ২২১৮নং)

আয়াতে কারীমাহ্

وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ (65

[البقرة: 65]

সরল অনুবাদ

তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারে (১) (বিশ্রামের দিনে) সীমালংঘন করেছিল, তাদেরকে তোমরা নিশ্চিতভাবে জান। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।’

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৬৫

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

(১) শনিবারের দিন ইয়াহুদীদেরকে মাছ ধরতে এবং অন্যান্য যে কোনও পার্থিব কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা একটি বাহানা বানিয়ে আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করল। শনিবারের দিন (পরীক্ষা স্বরূপ) মাছ সংখ্যায় অনেক বেশী আসত। তারা খাল কেটে নিল, তাতে মাছগুলো আটকা পড়ে যেত এবং পরদিন রবিবারে সেগুলো ধরে নিত।

আয়াতে কারীমাহ্

فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ (79

[البقرة: 79]

সরল অনুবাদ

সুতরাং অভিসম্পাত তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং নিকৃষ্ট মূল্য লাভের জন্য বলে এটা মহান আল্লাহ্‌র নিকট থেকে, তাদের হাত যা রচনা করেছে, তার জন্য তাদের শাস্তি অবধারিত এবং তারা যা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি রয়েছে।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৭৯

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

এখানে ইয়াহুদীদের আলেমদের দুঃসাহসিকতা এবং তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিলুপ্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তারা নিজেরাই মনগড়া বিধান তৈরী ক’রে বড় ধৃষ্টতার সাথে বুঝাতো যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
হাদীস অনুযায়ী ‘ওয়াইল’ জাহান্নামের এক উপত্যকা যার গভীরতা এত বেশী যে, একজন কাফেরকে তার তলদেশে পড়তে চল্লিশ বছর সময় লাগবে!
(আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে হিববান, হাকেম, ফাতহুল ক্বাদীর)
কোন কোন আলেমগণ এই আয়াতের ভিত্তিতে ক্বুরআন বিক্রি করা নাজায়েয বলেছেন। কিন্তু এই আয়াত থেকে এ রকম দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়। এই আয়াতের লক্ষ্য কেবল তারা, যারা দুনিয়া অর্জনের জন্য আল্লাহর কালামের মধ্যে হেরফের করে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে।

আয়াতে কারীমাহ্

وَقَالُوا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَعْدُودَةً قُلْ أَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدًا فَلَنْ يُخْلِفَ اللَّهُ عَهْدَهُ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ (80

 [البقرة: 80]

সরল অনুবাদ

আর তারা বলে, ‘গণা কয়েকটি দিন ছাড়া (দোযখের) আগুন কখনো আমাদেরকে স্পর্শ করবে না।’ (হে মুহাম্মাদ, তুমি) বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর নিকট থেকে এমন কোন অঙ্গীকার[১] পেয়েছ যে, আল্লাহ সে অঙ্গীকার কখনো ভঙ্গ করবেন না? অথবা তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলছ, যা তোমরা জান না।’ [২]

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৮০

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] ইয়াহুদীরা বলত যে, দুনিয়ার বয়স হল সাত হাজার বছর। আর প্রত্যেক হাজার বছরের পরিবর্তে আমরা একদিন জাহান্নামে থাকব। অতএব এই হিসেবে আমরা কেবল সাত দিন জাহান্নামে থাকব।
কেউ কেউ বলতো, আমরা কেবল চল্লিশ দিন বাছুরের পূজা করেছি, অতএব এই চল্লিশ দিন জাহান্নামে থাকব। মহান আল্লাহ বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ? এটাও অস্বীকৃতিসূচক জিজ্ঞাসা। অর্থাৎ, এরা ভুল বলছে, আল্লাহর সাথে এই ধরনের কোন অঙ্গীকার তাদের নেই।
[২] অর্থাৎ, তোমাদের এই দাবী যে, আমরা জাহান্নামে গেলেও কেবল কিছু দিনের জন্য তা হবে, এটা তোমাদের নিজের পক্ষ থেকে মনগড়া কথা এবং এই ধরনের অনেক কথাবার্তা তোমরা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ, যা তোমদের নিজেদেরই জানা নেই। এরপর মহান আল্লাহ তাঁর সেই মূলনীতির কথা উল্লেখ করছেন, যার ভিত্তিতে কিয়ামতের দিন তিনি ভাল ও মন্দজনদেরকে তাদের ভাল-মন্দের প্রতিদান ও প্রতিফল দেবেন।