fbpx
কোরবানীর গরুর গোশত নিয়ে সমাজে বিভিন্ন প্রচলন রয়েছে নিম্নে আমরা সে বিষয়ে কিছু শরয়ী মাসয়ালা উল্লেখ করব ইনশাল্লাহ।
কুরবানীর গোশত ও চামড়া

সূচিপত্র

কুরবানীর গোশত ও চামড়া

কোরবানীর গরুর গোশত নিয়ে সমাজে বিভিন্ন প্রচলন রয়েছে নিম্নে আমরা সে বিষয়ে কিছু শরয়ী মাসয়ালা উল্লেখ করব ইনশাল্লাহ।

মাসয়ালা ০১ ;

কুরবানী দাতার জন্য কুরবানী গোশত দিয়ে  খানা শুরু করা মুস্তাহাব।

মাসায়ালা ০২ ;

কুরবানীর পশুর গোশত নিজে খাওয়া যায় তেমনিভাবে অন্যান্য মানুষকে ও দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ধনী গরীবের কোন পার্থক্য নেই।
(হিদায়া ৪/৭৮)

মাসয়ালা ০৩ ;

কুরবানীর গোশত যেমনিভাবে মুসলমানদের দেওয়া যায় তেমনভাবে অমুসলিমকে ও দেওয়া যাবে ।তবে যেসকল কুরবানীর গোশত সদকা করা আবশ্যক সেগুলো কাফেরদের দেওয়া যাবে না।
(আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৪৯৬ ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৫০)

মাসয়ালা ০৪ ;

কুরবানীর পশু তিনি যবেহ করবেন তাকে তার যথাযথ পারিশ্রমিক বা হাদিয়া দিয়ে দেওয়া উচিত। হাঁ… তিনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না নেন তাবে ভিন্ন কথা ।

মাসয়ালা ০৫ ;

জবেহকারী বা যারা পশু কাটবে বা পশু সংক্রান্ত কাজ করবে পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানীর গোশত বা চামড়া দেওয়া যাবে না। বরং আলাদাভাবে তাদের পরিশ্রমিক দিতে হবে । অতঃপর কুরবানী দাতার চাইলে অতিরিক্ত ভাবে হাদিয়া হিসাবে দিতে পারেন ।
(হিদায়া ৪/৮৮ ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ১৭/৪৪২ আদদুররুল মুহতার ৯/৪৭৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৫৯)

মাসয়ালা ০৬ ;

কুরবানীর পশুর চামড়া ব্যতীত অন্য কোন খাদ্যের উপযোগী যেমন গোশত, হাড্ডি, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা যাবে না। তবে কেউ ভুলবশত বা অজ্ঞতাবশত যদি বিক্রি করে  তাহলে তা সদকা করে দেওয়া আবশ্যক।
(বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮১, তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৮৮,  জাওহারাতুন নায়্যিরহ ২/৩২৮)

মাসয়ালা ০৭ ;

কুরবানী দাতা চাইলে কুরবানীর পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারেন বা কাউকে হাদিয়া দিতে পারবে। তবে তা বিক্রি করলে উক্ত টাকা সদকা করে দেওয়া আবশ্যক।

মাসয়ালা ০৮ ;

কুরবানীর পশু বা অন্যান্য পশুর চামড়া পশু থেকে আলাদা করার পূর্বে বিক্রি করা বৈধ নয়।তবে এক্ষেত্রে এমনটি করা যেতে পারে, চামড়া পশু থেকে আলাদা করার পূর্বে ক্রেতা বিক্রেতার সাথে সরাসরি ক্রয় চুক্তি না করে মালিক থেকে ক্রয়ের ওয়াদা চুক্তি করবে। অতঃপর চামড়া পশু থেকে আলাদা করার পর স্বতন্ত্রভাবে ক্রয় চুক্তি করবে।
(কিতাবুল আছল ৩/৪৩৮, আল মাবসুত লিল সারাখছি ১২/২৩৫, আল-
জাওহারাতুন নায়্যিরাহ ১/৪৬৪, আল বাহলুর রায়েক ৬/১২৪, আদ-দুররুল মুহতার ৭/৩৫১, ইমদাদুল আহকাম ৩/৪১৯)

মাসয়ালা ০৯ ;

পশুর প্রান যাওয়ার আগেই গলা মটকিয়ে দেওয়া, গলার বিশেষ রগে ছুরি দিয়ে খোচানো, পশুর হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
(আন নুতাফু ফিল ফাতাওয়া ২২৯, বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩১)

মাসয়ালা ১০ ;

কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রির টাকা যাকাতগ্রহনের উপযুক্ত কাউকে মালিক বানিয়ে দেওয়া আবশ্যক। মালিক বানানো ছাড়া তা আদায় হবে না। সুতরাং মসজিদ, মাদ্রাসা,রাস্তা হাসপাতাল ইত্যাদি সামাজিক কাজে ও ব্যয় করা যাবে না ।

মাসয়ালা ১১ ;

যেসকল মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং আছে এবং বাস্তবিক পক্ষেই যথাস্থানে ব্যয় করা হয় এসকল লিল্লাহ বডিং এ দেওয়া যাবে। এতে বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে । একদিকে যেমন সদকার সাওয়াব পাওয়া যাবে । অন্যদিকে দ্বীন ইলম শিক্ষা করতে সহযোগিতা করার দরুন এটা তার জন্য একটি সদকায়ে জারিয়া হিসাবে তার আমলনামায় এর সাওয়াব পৌঁছে যাবে।

মাসায়ালা ১২ ;

কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম,এক তৃতীয়াংশ গরীব মিসকিনকে, একতৃতীয়াংশ আত্মীয়দের,এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য ।তবে যদি কেউ এর বিপরীত করে তাহলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন বা সমালোচনা করা যাবে না । বরং তা মারাত্মক গোনাহ।তাই এসকল হীন ও নিম্নমানের কাজ ও আখলাক থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।
(হিদায়া ৪/৮৮ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০আল ইখতিয়ার ৫/২০)

মান্নতের কুরবানীর মাসয়ালা ১৩ ;

মান্নত ও নিয়তের মাঝে হুকুমের দিক দিয়ে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য বোঝা সাধারণ মানুষের কাছে একটু জটিল। তাই কোন বিষয়ে মান্নত করার আগে একটু চিন্তা করার দরকার এটা কী বৈধ জিনিসের মান্নত করছি, তা কী শরীয়ত সম্মত কিনা ? তেমনিভাবে আমি কোথায় মান্নত করছি? এজন্য এসকল মাসয়ালা জানতে আমরা নিকটাস্ত অভিজ্ঞ মুফতী সাহেব থেকে জেনে নিব। বিভিন্ন আমলের মান্নত করা যায় । কুরবানী তন্মধ্যে একটি।নিম্ন আমরা সে বিষয়ে কিছু মাসয়ালা পেশ করছি।

এছাড়া যেহেতু উপরে আমরা কুরবানীর পশুর চামড়া ও গোশতের বিভিন্ন বিধান বলে এসেছি তাই এখানে মান্নতের কুরবানীর পশুর চামড়া ও গোশতের বিধান উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। কেননা অন্যান্য কুরবানীর থেকে মান্নতের কুরবানীর বিধান অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন। তাই যেন আমরা বাস্তব জীবনে ভুল থেকে হেফাজত থাকতে পারি এজন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

কোন বৈধ ও শরীয়ত সম্মত এবং ঐ প্রকারের ওয়াজিব আমল ও শরীয়তের আছে এমন কোন ইবাদাতের মান্নত করলে তা পূরন করা আবশ্যক । পবিত্র কুরআনুল কারীম আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন ;

و ليوفوا نذورهم

তারা যেন তাদের মান্নত পূর্ণ করে ।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;

عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ “‏ مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَ اللَّهَ فَلاَ يَعْصِهِ ‏”‏ ‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র আনুগত্যের মানত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র নাফরমানীর মানত করে, সে যেন তা না করে।
(সুনানে ইবুন মাজাহ ২১২৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩২৮৯)

মাসয়ালা ১৪ ;

মান্নাতের গরুর গোশত পুরাটাই সদকা করে দিতে হবে। নিজে বা নিজের উর্ধতন আত্মীয় বাবা ,দাদা, অধনস্ত আত্মীয় ছেলে,মেয়ে ইত্যাদি কে দেওয়া যাবে না এবং কোন ধনী কে ও দেওয়া যাবে না। কোন অমুসলিমকে ও দেওয়া যাবে না। মান্নতের চামড়ার ও এই একই বিধান।
(ইলাউস সুনান হাদিস নং ৩০২৩, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/২৪৯, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪)

মাসয়ালা ১৫ ;

মান্নতের নির্দিষ্ট পশুতে মান্নত করার পর কাউকে শরীক নেওয়া যাবে না। বরং পুরোটাই কুরবানী করতে হবে।
(আদদুররুল মুখতার ৩/৭৩৫)

মাসয়ালা ১৬ ;

গরুর একভাগ চলতি বছরের কুরবানীর নিয়ত করল আর বিগত বছরের কাযা কুরবানীর জন্য বাকী ছয়ভাগ নিজে দিল বা অন্য কোন শরীক দিল তাহলে চলতি বছরের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। আর তারা বিগত বছরের কাযার নিয়ত করেছে তাদের কাযা আদায় হবে না । আর এ গরুর পুরো গোশত সদকা করে দেওয়া জরুরি। এমনকি চলতি বছরের কুরবানী দাতার ও নিজের অংশ ভক্ষন করতে পারবে না ।
(ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৯ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬)

মাসয়ালা ১৭ ;

কোন ব্যক্তি যদি তারপক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়ত করে তাহলে উক্ত পশুর গোশত ও সদকা করে দিতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মাসয়ালা গুলো আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

এখানে মন্তব্য করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা