fbpx
কুরবানী শব্দের অর্থ হলো; আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন জিনিস উৎসর্গ করা। কুরআনুল কারীমের একাধিক স্থানে কুরবানী শব্দটি উক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- إذ قربا قربانا فتقبل من أحدهما ولم بتقبل من الآخر তখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হলো এবং অপর জনের উৎসর্গ গৃহীত হয় নি। এছাড়া ও সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে এবং সুরা আহকবের ২৮ নং আয়াতে উক্ত অর্থে কুরবানী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
কুরবানীর ইতিহাস ও তাৎপর্য

সূচিপত্র

কুরবানীর ইতিহাস ও তাৎপর্য

কুরবানী শব্দের অর্থ হলো; আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন জিনিস উৎসর্গ করা। কুরআনুল কারীমের একাধিক স্থানে কুরবানী শব্দটি উক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

إذ قربا قربانا فتقبل من أحدهما ولم بتقبل من الآخر

তখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হলো এবং অপর জনের উৎসর্গ গৃহীত হয় নি।
এছাড়া ও সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে এবং সুরা আহকবের ২৮ নং আয়াতে উক্ত অর্থে কুরবানী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস;

কুরবানীর এ ধারা বহু আগে থেকেই মানুষের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। হযরত আদম আলাইহিস সালামের দু’সন্তানের মাঝে কোন একটি বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে উভয়েই আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ করেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ 

আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’। 
(সূরা মায়েদার আয়াত নং ২৭)

উক্ত আয়াতের তাফসীরে মুফাসিরীনগন লিখেছেন; আদম আলাইহিস সালামের দুই সন্তান হাবিল ও কাবীল কোরবানির জন্য সিদ্ধান্ত নেয় ।হাবিল একটি সুষ্ঠ সবল দুম্বা কুরবানী করল আর কাবিল যেহেতু শস্য উৎপাদন করত তাই সে তার উৎপাদিত ফসল‌ থেকে কিছু অংশ কোরবানির উদ্দেশ্যে পেশ করেছিল।
হাবিলের কুরবানী আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হয়েছিল তাই আলামত হিসাবে আসমানী আগুন এসে ভষ্ম করে দিয়েছিল । কিন্তু কাবিলের কুরবানী কবুল না হওয়ায় তা তার আপনস্থানেই পড়ে ছিল । এ বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন

إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ 

যখন তারা উভয়েই কুরবানী পেশ করল তখন আল্লাহ তাআলা তাদের একজনের কুরবানী কবুল করলেন,অন্যজনের কুরবানী কবুল করা হলো না ।আর আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র মুত্তাকিনদের থেকেই কবুল করেন।
(সূরা মায়েদা আয়াত নং ২৭)

অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের ঐতিহাসিক ঘটনার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে কুরবানীর দাওয়াত পৌঁছে দিলেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের কুরবানীর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَابُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَاأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ (102

فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ (103

وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَاإِبْرَاهِيمُ (104

قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (105

إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ (106

وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ (107

অতঃপর সে পুত্র (ইসমাইল আলাইহিস সালাম ) যখন পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সাথে চলাফেরা করার উপযুক্ত হলো, তখন সে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করেছি। এবার চিন্তা করে বল, তোমার অভিমত কী ? পুত্র বলল আব্বাজী ! আপনাকে যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ্, আপনি আমাকে সবরকারীদের একজন পাবেন। সুতরাং (তা ছিল এক বিষ্ময়কর দৃশ্য) যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং পিতা পুত্রকে কাত করে (জবেহ করার উদ্দেশ্যে) শুইয়ে দিলেন, আর আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম; হে ইব্রাহিম! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। নিশ্চয়ই আমি সৎকর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিলো এক স্পষ্ট পরীক্ষা। এবং আমি এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে সে শিশুকে মুক্ত করলাম।
(সূরা আস-সাফফাত আয়াত নং ১০২-১০৭)

সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা;

(পিতা _পুত্র উভয়ে তো নিজেদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন প্রসঙ্গে এটাই ধরে নিয়েছিলেন যে, পিতা পুত্রকে যবেহ করবেন। তাই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামকে যবেহ করার উদ্দেশ্যে কাত করে জমিনে শোয়ালেন।
পিতা পুত্র উভয়ে যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ পালনের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী সব কিছুই করে ফেলে ছিলেন, তাই তারা উক্ত পরীক্ষায় পরিপূর্ণভাবে সফল হয়েছেন অনন্তর আল্লাহ তাআলা তার কুদরতের এক কারিশমা দেখালেন। ছুরি হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের গলায় না চলে তার স্থলে একটি দুম্বার গলায় চলল। আল্লাহ তাআলা সেটিকে নিজ কুদরতে সেখানে পাঠিয়ে দেন। আর হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে জীবিত ও নিরাপদ রাখলেন।)

নোট;
( এখানে যে তিনদিন স্বপ্নে দেখে তিনদিন ১০০ উট জবেহ করার কথা এবং জবেহ করার সময় ইসমাইল আলাইহিস সালামের চোখ, হাত, পা বাঁধার ব্যপারে যে সকল চমকপ্রদ তথ্য বলা হয়, সে সকল তথ্য পবিত্র কুরআনুল কারীম ও প্রমানযোগ্য কোন হাদিসে তা বর্ণিত হয় নি। তাই আমরা সেগুলো উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকেছি । আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সহীহভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন।)

আর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি উক্ত বিধান কে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নাত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং নিজের জীবদ্দশায় আমলের মাধ্যমে এবং সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী উম্মতকে উক্ত বিধান পালন করতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে তা পৃথিবীর এক অবিচ্ছেদ্য বিধান হিসাবে স্বীকৃত হয়ে থাকল ।

ُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْعَسْقَلاَنِيُّ، حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ مِسْكِينٍ، حَدَّثَنَا عَائِذُ اللَّهِ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ‏”‏ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏

যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৭,
সুনানে তিরমিযী হাদিস নং১৪৯৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)

নোট;
একটি বিষয় পাঠকগণ হয়ত খেয়াল করছেন যে, কুরবানীর মূল বিষয় (অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন কিছু উৎসর্গ করা) শুরু থেকেই চলে আসছে । তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না।
*অন্যান্য উম্মতের থেকে এ উম্মতের কুরবানীর আরো বড় একটি পার্থক্য হলো; অন্যান্য উম্মত কুরবানীকৃত পশুর গোশত নিজেরা বা অন্য কোন মানুষ খাওয়ার বিধান ছিল না বরং কুরবানী করে কোন জায়গায় রেখে আসত অতঃপর যে কুরবানী কবুল হবে তাকে আসমানী অগ্নি এসে ভষ্ম করে দিয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের জন্য সে বিধান রাখেন নি । বরং এই উম্মতের জন্য কুরবানীর পশুর গোশত এবং খাওয়ার উপযোগী জিনিসগুলো বৈধ করেছেন । এমনকি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানে উক্ত গোশত খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে ইরশাদ হয়েছে
 

 ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻋﻦ اﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗﺎﻝ:  ﺇﺫا ﺿﺤﻰ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻠﻴﺄﻛﻞ ﻣﻦ ﺃﺿﺤﻴﺘﻪ 
ﺭﻭاﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ اﻟﺼﺤﻴﺢ
 

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানী দেয় সে ও যেন তার কোরবানি থেকে খায় ।
(মাজমায়ুজ জাওয়ায়েদ হাদিস নং ৫৯৯০, ৫৯৯১)

কুরবানীর উদ্দেশ্য;

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সম্পদ দান করেছেন এবং মানুষকে সম্পদ ব্যয় করার জন্য বিশেষ কিছু খাত ও বলে দিয়েছেন । যেখানে নিসাবের মালিকদের জন্য ব্যয় করা আবশ্যক করেছেন।যেমন যাকাত , সদকাতুল ফিতর, কোরবানি ইত্যাদি ।
যেহেতু সম্পদ মূলত আল্লাহর-ই দান বা অনুগ্রহ। তাই তিনি কোন বিধান আরোপ করলে হাসিমুখে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে উক্ত ইবাদত পালন করা আমাদের দায়িত্ব।আর কুরবানী এমন একটি ইবাদত তার সকল ফায়েদাই বান্দা ভোগ করে আল্লাহ তাআলা শুধু মাত্র বান্দার তাকওয়া দেখেন । পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ 

আল্লাহর কাছে ওগুলোর না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।
(সূরা হজ্ব ৩৭)

কুরবানীর গুরুত্ব;

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সমর্থবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। এটি মৌলিক ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তে মুহাম্মাদির কোরবানী মিল্লাতে ইব্রাহীমীর সুন্নাত । সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানী। এটি ইসলামের শিয়ার বা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তা পালনে ইসলামের প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এছাড়া ও এই কুরবানীর মাধ্যমে গরীব-দুঃখী ও পাড়া প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও রাসূলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কুরবানীতে । পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের সবক ও আছে এতে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন;

فصل لربك وانحر

অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী করুন।
(সূরা কাউসার ০২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন

قل ان صلاتي و نسكي و محياى و مماتى لله رب العالمين

(হে রাসূল আপনি বলেন) , আমার নামাজ আমার কুরবানী, আমার জীবন আমার মরন
(অর্থাৎ আমার সবকিছু ই রাব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত।
(সূরা আনআম ১৬২)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন; 

ِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَوْمَ عِيدٍ بِكَبْشَيْنِ فَقَالَ حِينَ وَجَّهَهُمَا ‏ “‏ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ ‏”‏ ‏.‏

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন দু’টি মেষ যবেহ করেন। তিনি পশু দু’টিকে কিব্লামুখী করে বলেন; “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াকা ও মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি।”

“আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই”
(সূরা আনআমঃ ৭৯)
“বলো, আমার নামায, আমার ইবাদত (কুরবানী), আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নাই এবং আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম”
(সূরা আনআমঃ ১৬২-৩)
হে আল্লাহ! তোমার নিকট থেকেই প্রাপ্ত এবং তোমার জন্যই উৎসর্গিত। অতএব তা মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ থেকে কবুল করো”।
(তিরমিযী ১৫২১, আবূ দাউদ ২৭৯৫, ২৮১০, আহমাদ ১৪৪২৩, ১৪৪৭৭, ১৪৬০৪, সুনানে দারেমী ১৯৪৬,
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২১)

কোরবানির ফজিলত ও সাওয়াব;

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنِي أَبُو الْمُثَنَّى، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلاً أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا ‏”‏ ‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোরবানির দিন আদম সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা মহামহিম আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি) করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কোরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কোরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দ সহকারে কোরবানি করো।

অপর এক হাদীসে এসেছে;

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْعَسْقَلاَنِيُّ، حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ مِسْكِينٍ، حَدَّثَنَا عَائِذُ اللَّهِ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ‏”‏ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏

যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৭,
সুনানে তিরমিযী হাদিস নং১৪৯৩,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)

এসকল ফজিলত বর্ণিত হওয়ার পরও যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করবে না, তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;

، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلا يَقْرَبَنَّ مُصَلانَا ‏”‏‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও যেন না আসে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)

উল্লেখিত হাদিসে মূলত তাকে ঈদগাহে যাওয়া থেকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য নয় বরং তাকে গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বোঝানো উদ্দেশ্য। যাতে করে সে তা জেনে হলেও কুরবানী আদায় করে ।

আল্লাহ তায়ালা সকলকে সহীহভাবে দ্বীন বোঝার তাওফিক দান করেন। এবং কুরবানী করতে সক্ষম ব্যক্তিদেরকে কুরবানী করার জন্য তাওফিক দান করেন ।আমীন

এখানে মন্তব্য করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা