যিনা

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ যিনা/ব্যাভিচার
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِنْكُمْ فَإِنْ شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّى يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا (15

وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنْكُمْ فَآذُوهُمَا فَإِنْ تَابَا وَأَصْلَحَا فَأَعْرِضُوا عَنْهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ تَوَّابًا رَحِيمًا (16

[النساء: 15، 16]

সরল অনুবাদ

  • তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হতে চার জন (পুরুষ) সাক্ষী উপস্থিত কর। সুতরাং যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তাদেরকে গৃহবন্দী করে রাখ, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয়[১] অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন। [২]
  • আর তোমাদের মধ্যে যে দু’জন এতে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হবে[৩] তাদের উভয়কে শাস্তি দাও।[৪] তবে যদি তারা তওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদেরকে রেহাই দাও। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।

সূরার নাম ঃ আন নিসা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৫ ও ১৬

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] এটা হল ব্যভিচারী নারীর এমন শাস্তি যা ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন ব্যভিচারের কোন শাস্তি নির্দিষ্ট ছিল না, তখন সাময়িকভাবে এই শাস্তি কার্যকরী ছিল। এখানে একটি কথা স্মরণে রাখা দরকার যে, আরবী ভাষায় এক থেকে দশ পর্যন্ত গণনায় একটি শিরোধার্য (ব্যাকরণের) নীতি হল, عدد বা সংখ্যা যদি পুংলিঙ্গ হয়, তাহলে তার معدود বা গণিত বিষয়ক শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ হবে। আর যদি সংখ্যা স্ত্রীলিঙ্গ হয়, তাহলে গণিত বিষয়ক শব্দ পুংলিঙ্গ হবে। এখানে (আয়াতে) أَرْبَعَةٌ (অর্থাৎ, চার সংখ্যা) স্ত্রীলিঙ্গ সুতরাং তার গণিত বিষয়ক শব্দ যা এখানে উল্লিখিত হয়নি, ঊহ্য আছে, অবশ্যই তা পুংলিঙ্গ হবে। ফলে অর্থ দাঁড়াবে চারজন পুরুষ। আর এ থেকে এ কথা পরিষ্কারভাবে জানা যায় যে, ব্যভিচারের প্রমাণের জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষী অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ, যেমন ব্যভিচারের শাস্তি অতি কঠিন, তেমনি তার প্রমাণের জন্য চারজন সাক্ষী হওয়ার কড়া শর্ত লাগানো হয়েছে। চারজন মুসলিম পুরুষকে স্বচক্ষে (ব্যভিচার সম্পাদন) দেখতে হবে। তাছাড়া তার শরীয়ত-নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
[২] এখানে পথ বা ব্যবস্থা বলতে ব্যভিচারের শাস্তি বুঝানো হয়েছে যা পরে নির্দিষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ, বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর জন্য হল ‘রজম’ (পাথরের আঘাতে হত্যা) এবং অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর শাস্তি হল, একশ’ বেত্রাঘাত। (এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা নূরে এবং বহু সহীহ হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।)
[৩] কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন সমলিঙ্গী ব্যভিচার; যাতে দু’জন পুরুষ আপোসে এ কুকাজ সম্পাদন করে থাকে। আবার কেউ এর অর্থ নিয়েছেন, অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলা। আর পূর্বের আয়াতকে তাঁরা বিবাহিত পুরুষ ও মহিলার সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। আবার কেউ কেউ এই দ্বিবচন শব্দের অর্থ করেছেন, পুরুষ ও মহিলা। তাতে তারা বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত। ইবনে জারীর ত্বাবারী দ্বিতীয় অর্থ অর্থাৎ, অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলা অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং পূর্বের আয়াতে বর্ণিত শাস্তিকে নবী করীম (সাঃ) কর্তৃক বর্ণিত শাস্তি দ্বারা ও এই আয়াতে বর্ণিত শাস্তিকে সূরা নূরে বর্ণিত একশ’ বেত্রাঘাত শাস্তি দ্বারা রহিত সাব্যস্ত করেছেন।
(তাফসীর ত্বাবারী)
[৪] অর্থাৎ, মৌখিক ধমক ও তিরস্কারের মাধ্যমে অথবা হাত দ্বারা স্বল্প মার-ধর করে। তবে এখন এটা রহিত; যেমন পূর্বেই আলোচিত হয়েছে।

আয়াতে কারীমাহ্

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا (32

[الإسراء: 32]

সরল অনুবাদ

তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। [১]

সূরার নাম ঃ বনী-ইসরাঈল
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৩২

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] ইসলামে ব্যভিচার যেহেতু বড়ই অপরাধমূলক কাজ; এত বড় অপরাধ যে, কোন বিবাহিত পুরুষ অথবা মহিলার দ্বারা এ কাজ হয়ে গেলে, ইসলামী সমাজে তার জীবিত থাকার অধিকার থাকে না। আবার তাকে তরবারির এক আঘাতে হত্যা করাও যথেষ্ট হয় না, বরং নির্দেশ হল, পাথর মেরে মেরে তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে। যাতে সে সমাজে (অন্যদের জন্য) শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে যায়। সেহেতু এখানে বলা হয়েছে, ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অর্থাৎ, তাতে উদ্বুদ্ধকারী উপায়-উপকরণ থেকেও দূরে থাক। যেমন, ‘গায়ের মাহরাম’ ( যার সাথে বিবাহ হারাম নয় এমন বেগানা ) নারীকে দেখা-সাক্ষাৎ করা, তার সাথে অবাধ মেলামেশার ও কথা বলার পথ সুগম করা। অনুরূপ মহিলাদের সাজ-সজ্জা করে বেপর্দার সাথে বাড়ী থেকে বের হওয়া ইত্যাদি যাবতীয় কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা জরুরী। যাতে এই ধরনের অশ্লীলতা থেকে বাঁচা যায়।

আয়াতে কারীমাহ্

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ (4

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ (5

 [النور: 4، 5]

সরল অনুবাদ

  • যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান। [১]
  • কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়,[২] আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।

সূরার নাম ঃ আন নূর
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৪ ও ৫

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] এই আয়াতে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন সতী-সাধ্বী পবিত্রা মহিলার বা সচ্চরিত্র পুরুষের উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে (অনুরূপ যে মহিলা কোন সতী-সাধ্বী মহিলা বা সচ্চরিত্র পুরুষের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়) সে প্রমাণ স্বরূপ চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারলে তার ব্যাপারে তিন প্রকার বিধান দেওয়া হয়েছে।
(ক) তাকে আশি বার বেত্রাঘাত করা হবে।
(খ) তাদের সাক্ষ্য কখনই গ্রহণ করা হবে না
(গ) তারা আল্লাহ ও মানুষের নিকট ফাসেক বলে গণ্য হবে।
[২] তওবার কারণে বেত্রাঘাতের শাস্তি তো ক্ষমা হবে না, সে তওবা করুক বা না করুক বেত্রাঘাতের শাস্তি তাকে ভোগ করতেই হবে। তবে অন্য দুই বিধান (সাক্ষ্য গ্রহণ না করা ও ফাসেক হওয়া) সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে,-
কিছু উলামা বলেছেন যে, তওবার পর সে ফাসেক থাকবে না; তবে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
আবার কিছু উলামা বলেছেন, তওবার পর ফাসেক থাকবে না এবং তার সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য হবে।
ইমাম শাওকানী (রঃ) দ্বিতীয় মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর أَبَدًا (কখনও) শব্দের অর্থ বলেছেন, যতক্ষণ সে অপবাদ দেওয়ার কাজে সক্রিয় থাকবে। যেমন বলা হয়, কাফেরের সাক্ষ্য কখনই গ্রহণীয় নয়। এখানে ‘কখনই’ বলতে সে যতক্ষণ কাফের থাকবে।