باسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং মানুষকে সফলতা ও চীরস্থায়ী জান্নাতে যাওয়ার পথ ও পবিত্র কুরআনুল কারীমে এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস শরীফে বিষদভাবে আলোচনা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেনঃ
أنا هديناه السبيل اما شاكرا و اما كفورا
অর্থঃ আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।
(আল কুরআন ;আদ দাহ্র /৭৬:৩)
যে সকল মানুষ আল্লাহ তায়ালার এ সকল বানী শোনার পরও সতর্ক হবে না এবং নিজের জীবনের আত্মসংশোধন করবে না বরং গোনাহ ও আল্লাহর নামারমানিতে নিজের জীবন ব্যয় করবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। বস্তুত কোন বুদ্ধিমান মানুষ যদি জাহান্নামের অবস্থা সম্পর্কে জানে এবং একটু তার ভয়াবহতা ও আযাবের কথা চিন্তা করে তাহলে সে গোনাহের কাজ করতে সাহস পাবে না। কেননা কোরআন ও হাদীসে জাহান্নামের যে ভয়াবহতা ও আযাবের কথা উল্লেখ রয়েছে, কোন মানুষের পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব নয়। তাই প্রকৃত বুদ্ধমান মানুষ কখনোই নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন, আমীন।
কোরআন ও হাদীসে জাহান্নামের যে পরিচয় ও চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, নিম্নে আমরা তার কিছু অংশ উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ্।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
َ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا ” .
আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে সেদিন এর সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের জন্য নিয়োজিত থাকবে সত্তর হাজার ফেরেশতা। তারা এগুলো ধরে এটাকে টানতে থাকবে।
(সহীহ মুসলিম ৮/১৪৯, জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৭৩)
، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ تُبْصِرَانِ وَأُذُنَانِ تَسْمَعَانِ وَلِسَانٌ يَنْطِقُ يَقُولُ إِنِّي وُكِّلْتُ بِثَلاَثَةٍ بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ وَبِكُلِّ مَنْ دَعَا مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَبِالْمُصَوِّرِينَ ” . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত দিবসে জাহান্নাম হতে একটি গর্দান (মাথা) বের হবে। এর দুটি চোঁখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে, দুটি কান থাকবে যা দিয়ে সে শুনবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। সে বলবে, তিন ধরনের লোকের জন্য আমাকে নিয়োজিত করা হয়েছেঃ (১) প্রতিটি অবাধ্য অহংকারী যালিমের জন্য, (২) আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কোন কিছুকে যে ব্যক্তি ইলাহ বলে ডাকে তার জন্য এবং (৩) ছবি নির্মাতাদের জন্য।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৭৪)
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الصَّخْرَةَ الْعَظِيمَةَ لَتُلْقَى مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَتَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا وَمَا تُفْضِي إِلَى قَرَارِهَا ” . قَالَ وَكَانَ عُمَرُ يَقُولُ أَكْثِرُوا ذِكْرَ النَّارِ فَإِنَّ حَرَّهَا شَدِيدٌ وَإِنَّ قَعْرَهَا بَعِيدٌ وَإِنَّ مَقَامِعَهَا حَدِيدٌ .
হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:‘উত্বাহ ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) আমাদের এই বসরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামের এক প্রান্ত হতে বড় একটি পাথরকে গড়িয়ে ছেড়ে দেয়া হলে এটা সত্তর বছর পর্যন্ত গড়াতেই থাকবে তবু স্থির হবার জায়গায় আসতে পারবে না।
(সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৬১২)
নোটঃ
বর্ণনাকারী বলেন, ‘ হযরত ওমর(রাঃ) বলতেন, তোমরা বেশি বেশি জাহান্নামের কথা স্মরণ কর। কেননা এটার গরম তীব্র, এর গহ্বর অনেক গভীর এবং এর ডাণ্ডাগুলো লোহা দ্বারা নির্মিত।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭৫)
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِي، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لَوْ أَنَّ رُصَاصَةً مِثْلَ هَذِهِ وَأَشَارَ إِلَى مِثْلِ الْجُمْجُمَةِ أُرْسِلَتْ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ وَهِيَ مَسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ لَبَلَغَتِ الأَرْضَ قَبْلَ اللَّيْلِ وَلَوْ أَنَّهَا أُرْسِلَتْ مِنْ رَأْسِ السِّلْسِلَةِ لَصَارَتْ أَرْبَعِينَ خَرِيفًا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ قَبْلَ أَنْ تَبْلُغَ أَصْلَهَا أَوْ قَعْرَهَا ” قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ إِسْنَادُهُ حَسَنٌ صَحِيحٌ
ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথার খুলীর দিকে ইশারা করে বলেছেনঃ এটার মতই একটি সীসা যদি আকাশ হতে যমিনের দিকে ছেড়ে দেয়া হয় তবে রাত হওয়ার পূর্বেই তা পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে। অথচ এত দু’য়ের মাঝখানে পাঁচ শত বছরের পথের ব্যবধান রয়েছে। আর জাহান্নামের জিঞ্জীরের অগ্রভাগ হতে সীসাটি নীচের দিকে নিক্ষেপ করা হলে তা চল্লিশ বছর ধরে রাত-দিন চলতে থাকবে, গর্তের শেষ সীমায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৮. মিশকাত ৫৬৮৮, তা’লীকুর রাগীব ৪/২৩২)
، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ غِلَظَ جِلْدِ الْكَافِرِ اثْنَانِ وَأَرْبَعُونَ ذِرَاعًا وَإِنَّ ضِرْسَهُ مِثْلُ أُحُدٍ وَإِنَّ مَجْلِسَهُ مِنْ جَهَنَّمَ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ . هَذَا حَدِيثٌ حَسَن صحيح
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামে কাফির ব্যক্তির গাধ্যয়ের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ গজ মোটা, তার মাড়ির দাঁত হবে উহূদের সমান বড় এবং মক্কা-মদীনার দূরত্বের সমান বিস্তৃত হবে তার বসার জায়গা (নিতম্বদেশ)।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৯, সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহাহ্ ১১০৫)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ الصَّعُودُ جَبَلٌ مِنْ نَارٍ يُتَصَعَّدُ فِيهِ الْكَافِرُ سَبْعِينَ خَرِيفًا وَيَهْوِي فِيهِ كَذَلِكَ مِنْهُ أَبَدًا
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের মধ্যে ‘সাঊদ’ নামে আগুনের একটি পাহাড় আছে। কাফিরগণ সত্তর বছরে এর উপর উঠবে এবং সত্তর বছরে গড়িয়ে পড়বে। তারা তাতে অনন্তকাল ধরে উঠবে ও নামবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭৬)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামে কাফিরদের দু‘ কাঁধের মাঝখানে দ্রুতগামী আরোহী ব্যক্তির তিন দিনের দূরত্বের পথ হবে।
(ই.ফা. ৬৯২৩, ই.সে. ৬৯৮০, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭০৭৮)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” ضِرْسُ الْكَافِرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِثْلُ أُحُدٍ وَفَخِذُهُ مِثْلُ الْبَيْضَاءِ وَمَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ مَسِيرَةَ ثَلاَثٍ مِثْلُ الرَّبَذَةِ ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . ” وَمِثْلُ الرَّبَذَةِ ” كَمَا بَيْنَ الْمَدِينَةِ وَالرَّبَذَةِ . وَالْبَيْضَاءُ جَبَلٌ مِثْلُ أُحُدٍ .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত দিবসে কাফির ব্যক্তির মাড়ির দাঁত হবে উহূদ পাহাড়সম বড়, তার ঊরু হবে ‘বাইযা’ পাহাড়সম বিশাল এবং তার নিতম্বদেশ হবে রাবাযার মতো তিনদিন চলার পথের দূরত্বের সমান বিস্তৃত।
(সুনানে তিরমিযি ২৫৭৭)
، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ الْكَافِرَ لَيُسْحَبُ لِسَانُهُ الْفَرْسَخَ وَالْفَرْسَخَيْنِ يَتَوَطَّؤُهُ النَّاسٍ .
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (কিয়ামাতের দিন) কাফির ব্যক্তি তার জিহ্বা এক-দুই ফারসাখ পরিমান জায়গা জুড়ে বিছিয়ে রাখবে। লোকেরা তা পদদলিত করবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮০)
নোটঃ
মাসালুর রাবাযা’ অর্থ মাদীনা ও রাবাযা নামক স্থানের মাঝাখানের দূরত্বের সমান। আর ‘বাইযা’ একটি পাহাড়ের নাম যা উহূদ পাহাড়ের সমতুল্য।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৭৮)
জাহান্নামিরা পিপাসার্ত হয়ে পরিচিত জান্নাতিদের কাছে পানি প্রার্থনা করে । তাদের ঐ কথোপকথন পবিত্র কুরআনুল কারীমে এভাবে ইরশাদ করেছেন।
وَنَادَىٰ أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ ۚ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ
জাহান্নামবাসীরা জান্নাতিদের ডেকে বলবে; আমাদের কে কিছু পানি দাও অথবা আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যে নেয়ামত দান করেছেন তার কিছু দাও,তখন জান্নাতবাসী বলবে; আল্লাহ তায়ালা এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্যে হারাম করে দিয়েছেন।
(সুরা আরাফ ৫০)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন;
.تصلى نارا حامية. تسقى من عين انية. ليس لهم طعام الا من ضريع
.لا يسمن ولا يغني من جوع
তারা জলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। যরি ব্যতীত তাদের জন্যে অন্য কোন খাবারের ব্যবস্থা নেই। আর (যরি) তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধা নিবারণে কোন উপকার ও করবে না।
(সূরা গাশিয়াহ ৪-৭)
নোটঃ
যরি (ضريع) হলো পৃথিবীর এক প্রকার কন্টক বিশিষ্ট ঘাস, মা মাটিতে ছড়ায়। দুর্গন্ধযুক্ত বিষক্ত কাটার কারনে কোন জন্তু জানোয়ার ও এর কাছে যায় না।
(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ১৪৫২)
প্রয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي قَوْلِهِ: (كَالْمُهْلِ ) قَالَ “ كَعَكَرِ الزَّيْتِ فَإِذَا قَرَّبَهُ إِلَى وَجْهِهِ سَقَطَتْ فَرْوَةُ وَجْهِهِ فِيهِ .
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার বাণী “কাল-মুহলি” (তা যেন গলিত তামা)-এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ তা হল তেলের গাদ সদৃশ। জাহান্নামীদের মধ্যে কোন জাহান্নামী যখনই এটা তার মুখের নিকটে নিবে সাথে সাথে তার মুখমন্ডলের চামড়া খসে তাতে পড়ে যাবে।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮১)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الْحَمِيمَ لَيُصَبُّ عَلَى رُءُوسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْحَمِيمُ حَتَّى يَخْلُصَ إِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلِتَ مَا فِي جَوْفِهِ حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানীয় ঢালা হবে, এমনকি তা পেট পর্যন্ত পৌঁছবে এবং পেটের সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দিবে, তারপর তা পায়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়বে। এটাই হল ‘সাহর’ (গলে যাওয়া)। আবার তা পূর্বের ন্যায় হয়ে যাবে (এবং এমনিভাবে শাস্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮২)
।عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي قَوْلِهِ: (يُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ * يَتَجَرَّعُهُ
) قَالَ ” يُقَرَّبُ إِلَى فِيهِ فَيَكْرَهُهُ فَإِذَا أُدْنِيَ مِنْهُ شَوَى وَجْهَهُ وَوَقَعَتْ فَرْوَةُ رَأْسِهِ فَإِذَا شَرِبَهُ قَطَّعَ أَمْعَاءَهُ حَتَّى يَخْرُجَ مِنْ دُبُرِهِ يَقُولُ اللَّهُ: (وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ ) وَيَقُولُ: (وَإِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ ) ” .
আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “জাহান্নামীদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে, যা সে এক এক ঢোক করে গলধঃকরণ করবে”
(সূরাঃ ইবরাহীম–১৬, ১৭)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; পুঁজ যখন তার মুখের নিকটে নিয়ে আসা হবে সে তা অপছন্দ করবে। তারপর যখন আরো নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার মুখমন্ডল পুড়ে যাবে এবং মাথার চামড়া গলে পড়ে যাবে। তারপর সে যখন তা পান করবে তখন তা তার নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবে এবং তা মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তাদের গরম পানি পান করানো হবে, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন করে দিবে” (সূরাঃ মুহাম্মাদ— ১৫)। তিনি আরো বলেনঃ “পিপাসার্ত হয়ে তারা পানীয় প্রার্থনা করলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। তা কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং (জাহান্নাম) কতই না নিকৃষ্ট স্থান”
(সূরাঃ কাহ্ফ— ২৯)। {সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮৩}
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: (كَالْمُهْلِ ) كَعَكَرِ الزَّيْتِ فَإِذَا قُرِّبَ إِلَيْهِ سَقَطَتْ فَرْوَةُ وَجْهِهِ فِيهِ ”.
وَبِهَذَا الإِسْنَادِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لِسُرَادِقِ النَّارِ أَرْبَعَةُ جُدُرٍ كِثَفُ كُلِّ جِدَارٍ مِثْلُ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ سَنَةً ” .
وَبِهَذَا الإِسْنَادِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” لَوْ أَنَّ دَلْوًا مِنْ غَسَّاقٍ يُهَرَاقُ فِي الدُّنْيَا لأَنْتَنَ أَهْلُ الدُّنْيَا . قَالَ. وَمَعْنَى قَوْلِهِ ” كِثَفُ كُلِّ جِدَارٍ ” يَعْنِي غِلَظَهُ .
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ কালমুহ্লি” (গলিত ধাতুর ন্যায়) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; তা হল গরম তেলের গাদ সদৃশ (যা জাহান্নামীদের পান করার জন্যে দেয়া হবে)। যখনই সে এটা (মুখের) নিকটে নিবে তার মুখমন্ডলের চামড়া এতে গলে পড়ে যাবে।
একই সনদ সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন; জাহান্নামের বেষ্টনী হবে চারটি প্রাচীর এবং প্রতিটি প্রাচীর হবে চল্লিশ বছরের দূরত্বের সমান পুরু।
(মিশকাত ৫৬৮১, তা’লিকুর রাগীব ৪/২৩১)
একই সনদসূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের পুঁজের এক বালতিও যদি দুনিয়াতে ঢেলে দেয়া হত, তবে সমস্ত দুনিয়াই দুর্গন্ধময় হয়ে যেত।
(যঈফ, মিশকাত ৫৬৮২, সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৪)
، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ: (اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” لَوْ أَنَّ قَطْرَةً مِنَ الزَّقُّومِ قُطِرَتْ فِي دَارِ الدُّنْيَا لأَفْسَدَتْ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا مَعَايِشَهُمْ فَكَيْفَ بِمَنْ يَكُونُ طَعَامَهُ ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং মুসলমান না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করো না” —
(সূরা আল- ইমরানঃ ১০২)
তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘যাক্কুম’–এর একটি বিন্দুও যদি দুনিয়াতে পতিত হতো তাহলে দুনিয়াবাসীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে যেত। আর এটা যাদের খাদ্য হবে তাদের কি অবস্থা হবে।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮৫ , ইবনে মাযাহ– হাদিস নং-৪৩২৫)
، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” يُلْقَى عَلَى أَهْلِ النَّارِ الْجُوعُ فَيَعْدِلُ مَا هُمْ فِيهِ مِنَ الْعَذَابِ فَيَسْتَغِيثُونَ فَيُغَاثُونَ بِطَعَامٍ مِنْ ضَرِيعٍ لاَ يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِي مِنْ جُوعٍ فَيَسْتَغِيثُونَ بِالطَّعَامِ فَيُغَاثُونَ بِطَعَامٍ ذِي غُصَّةٍ فَيَذْكُرُونَ أَنَّهُمْ كَانُوا يُجِيزُونَ الْغُصَصَ فِي الدُّنْيَا بِالشَّرَابِ فَيَسْتَغِيثُونَ بِالشَّرَابِ فَيُرْفَعُ إِلَيْهِمُ الْحَمِيمُ بِكَلاَلِيبِ الْحَدِيدِ فَإِذَا دَنَتْ مِنْ وُجُوهِهِمْ شَوَتْ وُجُوهَهُمْ فَإِذَا دَخَلَتْ بُطُونَهُمْ قَطَّعَتْ مَا فِي بُطُونِهِمْ فَيَقُولُونَ ادْعُوا خَزَنَةَ جَهَنَّمَ فَيَقُولُونَ أَلَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى . قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلاَّ فِي ضَلاَلٍ . قَالَ فَيَقُولُونَ ادْعُوا مَالِكًا فَيَقُولُونَ: (يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ) قَالَ فَيُجِيبُهُمْ: (إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ ) ” . قَالَ الأَعْمَشُ نُبِّئْتُ أَنَّ بَيْنَ دُعَائِهِمْ وَبَيْنَ إِجَابَةِ مَالِكٍ إِيَّاهُمْ أَلْفَ عَامٍ . قَالَ ” فَيَقُولُونَ ادْعُوا رَبَّكُمْ فَلاَ أَحَدَ خَيْرٌ مِنْ رَبِّكُمْ فَيَقُولُونَ: (رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ * رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ ) قَالَ فَيُجِيبُهُمْ: (اخْسَؤُوا فِيهَا وَلاَ تُكَلِّمُونِ ) قَالَ فَعِنْدَ ذَلِكَ يَئِسُوا مِنْ كُلِّ خَيْرٍ وَعِنْدَ ذَلِكَ يَأْخُذُونَ فِي الزَّفِيرِ وَالْحَسْرَةِ وَالْوَيْلِ ” . .
আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামীদের উপর ক্ষুধা চাপিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা অন্যান্য শাস্তির মতই ক্ষুধার যন্ত্রণায়ও নিপিড়িত হবে। তারা কাতর কণ্ঠে ফারিয়াদ করবে এবং কাটাযুক্ত গুল্মের খাবার দিয়ে তাদের ফারিয়াদ পূর্ণ করা হবে। এ খাবার না তাদেরকে মোটাতাজা করবে, না তাদের ক্ষুধা দূর করবে। তারা আবার খাবারের জন্য ফারিয়াদ করবে। তাদের তখন এমন খাবার দেয়া হবে যা তাদের গলায় আটকে যাবে। তারা তখন মনে করবে দুনিয়াতে পানি পান করে গলায় আটকানো খাবার বের করার কথা। সুতরাং তারা পানীয়ের জন্য ফারিয়াদ জানাবে এবং তাদেরকে লোহার কাঁটাযুক্ত গরম পানি দেয়া হবে। এটা তাদের মুখের নিকটে নেয়া মাত্র তা তাদের মুখমণ্ডল পুড়ে ফেলবে এবং যখন উহা তাদের পেটে প্রবেশ করবে তখন তা তাদের নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবে। তখন তারা (পরস্পর) বলবে, জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ককে ডাকো। সে তাদের বলবে, “তোমাদের নিকটে কি রাসূলগণ সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ নিয়ে আসেননি? তারা বলবে, হ্যাঁ এসেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক বলবে, তোমরা ডাকতে থাক কিন্তু কাফিরের ডাক নিষ্ফল”
(সূরাঃ মু’মিন– ৫০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারা বলাবলি করবে, তোমরা মালিককে (জাহান্নামের প্রধান তত্ত্বাবধায়ককে) ডাকো। তারা বলবে, “হে মালিক! আপনার রব যেন আমাদের মৃত্যু ঘটান”
(সূরাঃ যুখরুফ– ৭৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাদের জবাব দেয়া হবে, “তোমরা এভাবেই থাকবে (মৃত্যুও আসবেনা)”
(সূরাঃ যুখরুফ–৪৩:৭৭)
আ’মাশ (রহঃ) বলেন; আমি জেনেছি যে, তাদের এ আহ্বান ও মালিকের জবাবদানের মাঝখানে এক হাজার বছর চলে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর তারা (পরস্পর) বলবে, তোমাদের রবকে ডাকো, কেননা তোমাদের রবের চাইতে উত্তম আর কেউ নেই। তারা বলবে, “হে আমাদের রব! দুর্ভাগ্য আমাদের পরাজিত করেছে এবং আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়। হে আমাদের আল্লাহ! আমাদেরকে এখান হতে বের করে নিন। আমরা যদি আবার এরূপ করি, তাহলে অবশ্যই আমরা যালিম”
(সূরাঃ মু’মিনূন– ১০৬, ১০৭)
তিনি বলেন, তাদের জবাব দেয়া হবে, “এখানেই তোরা লাঞ্ছিত অবস্থায় থাক, আর কোন্ কথা বলবে না” –
(সূরা আল-মু’মিনূনঃ ১০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন হতে তারা সব ধরণের কল্যাণলাভ থেকে হতাশ হয়ে যাবে এবং এ ভয়ংকর অবস্থায় গর্দভের ন্যায় চিৎকার দিতে থাকবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৬)
জাহান্নামের আগুন অত্যন্ত তীপ্ত ও প্রচন্ড তাপমাত্রা বিশিষ্ট।কোন মানুষের পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব নয় । পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
فاتقوا النار التي وقودها الناس و الحجارة اعدت المتقين
তবে তোমরা (জাহান্নামের )সেই আগুনকে ভয় কর তার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর , তা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছেন।
(সূরা বাকারা ২৪)
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন
ان الذين كفروا بايتنا سوف نصليهم نارا كلما نضجت جلودهم بدلنهم جلودا غيرها ليذوقوا العذاب ان الله كان عزيزا حكيما
নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে,আমি তাদেরকে জাহান্নামের ঢোকাব ।যখনই তাদের চামড়া জলে সিদ্ধ হয়ে যাবে, তখন আমি তাদেরকে তার পরিবর্তে অন্য চামড়া দিয়ে দিব,রাতে তারা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাক্ষমতাবান হেকমতের অধিকারী।
(সূরা নিসা আয়াত নং ৫৬)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” نَارُكُمْ هَذِهِ الَّتِي يُوقِدُ بَنُو آدَمَ جُزْءٌ وَاحِدٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزءًا مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ ” . قَالُوا وَاللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ ” فَإِنَّهَا فُضِّلَتْ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এই আগুন যা তোমরা প্রজ্বলিত কর তা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবীগন বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্র কসম! এ আগুনই তো জাহান্নামীদের আযাবের জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেনঃ এটাকে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রতিটি অংশের উত্তাপ এর সমান হবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৯)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ أُوقِدَ عَلَى النَّارِ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى احْمَرَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى ابْيَضَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى اسْوَدَّتْ فَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ ” .
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা রং ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং তা এখন ঘোর কালো বর্ণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৯১)
কোরআন হাদীসে এব্যপারে অসংখ্য শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে ।এই সংখিপ্ত প্রবন্ধে তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয় ।তাই আমরা তা থেকে সামান্য কিছু শাস্তির কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।যেন আল্লাহ তায়ালা সকলের অন্তরে জাহান্নামের ভয় দিয়ে দেন । এবং সকলকে এই কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করেন।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
انه من يات ربه مجرما فإن له جهنم لا يموت فيها ولا يحيى
নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবে ও না এবং বাঁচবে ও না ।
(সূরা তহা ৭৫)
فالذين كفروا قطعت لهم ثياب من نار يصب من فوق رؤوسهم الحميم
19) يصهر به ما في بطونهم والجلود
20) ولهم مقامع من حديد
21) كلما أرادوا أن يخرجوا منها من غم أعيدوا فيها وذوقوا عذاب الحريق
সুতরাং তারা কুফরী করবে তাদের জন্য রয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথায় ফুটন্ত পানি গেলে দেওয়া হবে।ফলে তাদের পেটে তা আছে, তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে । তাদের জন্য রয়েছে লোহার হাতুড়ি, তারা তখন যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে , তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এবং বলা হবে আস্বাধন কর দহন যন্ত্রনা।
(সূরা হজ আয়াত নং ১৯-২২)
পবিত্র কুরআনুল কারীমে সুরা মুমিনুন এর ১০৩_১০৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
ومن خفت موازينه فأولئك الذين خسروا أنفسهم في جهنم خالدون
103) تلفح وجوههم النار وهم فيها كالحون
আর তাদের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে তারাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে , তারা দোজখেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বিভৎস আকার ধারণ করবে।
(সূরা আল মুমিনুন ১০৩-১০৪)
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَالَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيَهْ (25
وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ (26
يَالَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ (27
مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَهْ (28
هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ (29)
خُذُوهُ فَغُلُّوهُ (30
ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ (31
ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ (32
إِنَّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ (33
وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ (34
فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ (35
{وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ (36
لَا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ (37
[الحاقة: 25 – 37]
২৫) কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘হায়, আমাকে যদি আমার আমলনামা দেয়া না হত’!
২৬) ‘আর যদি আমি না জানতাম আমার হিসাব’!
২৭) ‘হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত ফয়সালা হত’!
২৮) আমার ধনসম্পদ আমার কোন কাজেই এলোনা।
২৯) ‘আমার ক্ষমতাও আমার থেকে চলে গেল!
৩০) (বলা হবে,) ‘তাকে ধর অতঃপর তাকে বেড়ি পরিয়ে দাও।’
৩১) ‘তারপর তাকে তোমরা নিক্ষেপ কর জাহান্নামে’।
৩২) ‘তারপর তাকে বাঁধ এমন এক শেকলে যার দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাত।’
৩৩) সে তো মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করত না,
৩৪) আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করত না।
৩৫) কাজেই আজ এখানে তার কোন বন্ধু নেই,
৩৬) ক্ষত হতে পড়া পুঁজ ছাড়া কোন খাদ্য নেই,
(সুরা হাক্কা ২৫-৩৭)
إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ (43
طَعَامُ الْأَثِيمِ (44
كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ (45
كَغَلْيِ الْحَمِيمِ (46
خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَى سَوَاءِ الْجَحِيمِ (47
ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ (48
ذُقْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ (49
إِنَّ هَذَا مَا كُنْتُمْ بِهِ تَمْتَرُونَ (50
[الدخان: 43 – 50]
৪৩) নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ (হবে)
৪৪) পাপীর খাদ্য;
৪৫) গলিত তামার মত পেটে ফুটতে থাকবে।
৪৬) ফুটন্ত পানির মত,
৪৭) (বলা হবে) ‘ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও’।
৪৮) অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও।
৪৯) (এবং বল,) আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত।
৫০) এটা তো সেই (শাস্তি) যার সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করতে।
(সুরা দুখান ৪৩-৫০)
নোট;
এখানে মূলত জাহান্নামীদের সম্মান সূচক সম্মোধন উদ্দেশ্য নয়। বরং হেয় প্রতিপন্ন করে বলা হবে, তুই দুনিয়ায় নিজেকে বড় ক্ষমতাশালী ও মর্যাদাবান লোক মনে করতি আর সেজন্য তোর অহংকারের সীমা ছিল না। আজ দেখে নে, অহমিকা ও বড়াইয়ের পরিনাম কী এবং সত্য অস্বীকার করার পরিণাম কী এবং সত্য অস্বীকার করার শাস্তি কেমন!
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল-গাশিয়া-য় ইরশাদ করেছেন;
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ (2
عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ (3
تَصْلَى نَارًا حَامِيَةً (4
تُسْقَى مِنْ عَيْنٍ آنِيَةٍ (5
لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِيعٍ (6
لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ (7
[الغاشية: 2 – 7]
২) সেদিন অনেক চেহারা হবে অবনত।
৩) কর্মক্লান্ত, পরিশ্রান্ত।
৪) তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে;
৫) তাদেরকে উত্তপ্ত প্রস্রবণ হতে (পানি) পান করানো হবে।
৬) কাঁটাযুক্ত শুকনো ঘাস ছাড়া তাদের জন্য আর কোন খাদ্য থাকবে না।
৭) যা পুষ্টিসাধন করবে না, আর ক্ষুধাও মিটাবে না।
(সুরা গাশিয়াহ ২-৭)
أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ (62
إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِينَ (63
إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ (64
طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ (65
فَإِنَّهُمْ لَآكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ (66
ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيمٍ (67
ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ (68
[الصافات: 62 – 68]
৬২) আপ্যায়ন হিসেবে এটা উত্তম, না, (জাহান্নামের) জাক্কুম গাছ?
৬৩) এ গাছটাকে আমি যালিমদের পরীক্ষা করার জন্য (একটা উপকরণ) বানিয়েছি (কেননা, যালিমরা বলে যে, জাহান্নামের ভিতর আবার গাছ হয় কী করে?)
৬৪) এ বৃক্ষ জাহান্নামের তলদেশ হতে উদগত হয়,
৬৫) এর মোচা শয়তানের মাথার মত।
৬৬) জাহান্নামের অধিবাসীরা তাত্থেকে খাবে আর তা দিয়ে পেট পূর্ণ করবে।
৬৭) এর উপর তাদেরকে দেয়া হবে ফুটন্ত পানির (পূঁজ সম্বলিত) মিশ্রণ।
৬৮) অতঃপর অবশ্যই ওদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের দিকে।
(সূরা আস সাফফাত ৬২-৬৮)
নোট;
কোরআন মাজীদ যখন বিভিন্ন আয়াতে ঘোষণা করল যে, জাহান্নামে ঝাক্কুম থাকবে এবং তা হবে জাহান্নামীদের খাদ্য, কাফেরগণ তা শুনে চিৎকার শুরু করে দিলো। তারা বলতে লাগল, আগুনের মধ্যে গাছ থাকবে কি করে? আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যাক্কুম গাছের কথা উল্লেখ করে কাফেরদের একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেলা হয়েছে। তারা আল্লাহ তা’আলার কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে, দেখেন তারা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়।
প্রিয় পাঠক! একটু লক্ষ্য করলে একান্ত মনে চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাই আমরা যে দুনিয়ার মোহে পড়ে আল্লাহ তাআলাকে ভুলে আছি তার সাধারণত দুটি কারণ।
১. দুনিয়ার সম্পদ এর আধিক্য কামনা করা।
২. সন্তানাদি এর ভবিষ্যৎ কামনায় অধিক চেষ্টা করা।
সন্তান সন্তানাদি ধন সম্পদ একদিক দিয়ে যেমন আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত তেমনি ভাবে তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার মাধ্যম।
اِنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ؕ وَ اللّٰہُ عِنۡدَہٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۵
১৫) তোমাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহরই নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার।
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ (6
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ (7
وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ (8
[الزلزلة: 6 – 8]
৬) মানুষ তার প্রতিপালকের বড়ই অকৃতজ্ঞ।
৭) এবং নিশ্চয়ই সে নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী।
৮) এবং অবশ্যই সে ধন-সম্পদের আসক্তিতে অত্যন্ত প্রবল।
(সূরা আদিয়াতের ৬-৮)
মানুষ যখন সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধির চিন্তা শুরু করে তখন আস্তে আস্তে সে ভুলে যায় যে, এ সম্পদ মূলত আল্লাহ তায়ালারই দান ও অনুগ্রহ। সুতরাং তিনি তাকে মূলত দুনিয়াতে ব্যবহার করার জন্য সামান্য ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু এই সম্পর্কে যখন সে নিজের সম্পদ মনে করা শুরু করে তখন সম্পদের মোহে পড়ে সে এসকল সম্পদে আল্লাহ তাআলা যে বিধি-বিধান রয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করে না। ফলে আল্লাহ তায়ালার এই অনুগ্রহ ও নেয়ামতকে সে সঠিক ব্যবহার না করার কারণে নিজের আজাবের মাধ্যম বানায়।
আল্লাহ তায়ালার আরেকটি একটি বড় নিয়ামত হলো; সন্তান-সন্ততি। এ সন্তানসন্ততি যদি নেককার হয় তাহলে তা পিতামাতা এবং অন্যান্যদের জন্য বিশাল বড় একটা নেয়ামত এবং পরকালের নাজাতের মাধ্যম হয়। কিন্তু এই সন্তান-সন্ততিকে যদি পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের জ্ঞান না দেয়া হয় তাহলে সে যেমনি ভাবে নিজের জীবনকে ধ্বংস করে ফেলে তেমনি ভাবে পিতামাতার জন্য বোঝাও আজাবের কারণ হয়।
৬৪) আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন।
৬৫) সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তারা না পাবে কোন অভিভাবক এবং না কোন সাহায্যকারী।
৬৬) যেদিন তাদের মুখ-মন্ডল আগুনে উলট পালট করা হবে সেদিন তারা বলবেঃ হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও রাসূলকে মানতাম!
৬৭) তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল’।
৬৮)হে আমাদের রাব্ব! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদেরকে দিন মহা অভিসম্পাত।
(সূরা আহযাব ৬৪-৬৮)
প্রিয় পাঠক! পূর্বে কোরআন-হাদিসের অসংখ্য বাণী দিয়ে জাহান্নামের শাস্তির কিছু নমুনা পেশ করা হল। এছাড়াও জাহান্নাম বহু প্রকার শাস্তি রয়েছে। আমরা একটু চিন্তা করি যে, দুনিয়ার আগুনে সামান্য সময়ের জন্য কেউ অবস্থান করতে বা শরীরের কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ রাখতে পারি না। এমনকি কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সে আগুনের মাঝে নিজে বা নিজের শরীরের কোন অঙ্গ-পতঙ্গ ইচ্ছাকৃতভাবে রাখে না বা রাখতে ও চায়না। কিন্তু আখেরাতের আযাব এবং জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুন থেকে তাপমাত্রা বহুগুণ বেশি। উপরোক্ত আলোচনায় যে সকল শাস্তির কথা এসেছে কখনো কি আমরা একটু সুস্থ মস্তিষ্ক ও ও একান্ত মনে চিন্তা করেছি যে (আল্লাহ না করুক) কোনো কারণে যদি জাহান্নামে প্রবেশ করতে হয় তাহলে কি কোন উপায় আছে। তাই প্রতিটি মুসলমান এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্য কর্তব্য হল নিজের জীবনের হিসাব করা। আমি আমার জীবন টাকে কোন কাজে ব্যয় করছি। তাহলে আমি নিজেই দেখতে পাবো আমার জীবনের গতি কোন দিকে এবং এভাবে যদি চিন্তা করে আমার জীবনকে পরিচালিত করতে পারি এবং যাবতীয় গোনার কাজ পরিহার করে নেক কাজ বেশি বেশি করতে পারি তাহলে একদিকে যেমনি ভাবে তা আমার দুনিয়ার জীবন ও দুনিয়ার অবস্থান সুন্দর করবে তেমনি ভাবে তা আমার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কবর, হাশর পুলসিরাত সব স্থানে নাজাতের মাধ্যম হবে। সর্বোপরি আমি আল্লাহ তাআলার বৃহৎ বড় নেয়ামত জান্নাতের অধিকারী হব। যেখানে আল্লাহ তাআলা আমার জন্য অগণিত নিয়ামত রেখছেন।
প্রিয় পাঠক! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী সামনে রেখে সকলের জন্য ভালো-মন্দ বিবেচনাকরা এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালনা করার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ يَزِيدَ الضُّبَعِيِّ، حَدَّثَنَا مُطَرِّفٌ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعُلِمَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ قَالَ فَقَالَ ” نَعَمْ ” . قَالَ قِيلَ فَفِيمَ يَعْمَلُ الْعَامِلُونَ قَالَ ” كُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ ” .
‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; বলা হলো; হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! জাহান্নামীদের হতে জান্নাতীদের সুনির্দিষ্ট হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ… প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি (রাবী) বলেন; বলা হলো; তাহলে ‘আমালকারী কিসের জন্য ‘আমাল করবে? তিনি বললেন, প্রত্যেক লোকের জন্যে সে কর্মটি সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্যে তাকে বানানো হয়েছে।
(ই.ফা. ৬৪৯৬, ই.সে. ৬৫৪৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৬৩০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জান্নাতের জন্য কবুল করেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেন। সর্বদা কাজে-কর্মে কথাবার্তা, আচার-আচরণ সর্বক্ষেত্রে দিনকে সামনে রেখে নিজের জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করেন। আমীন।
আল্লাহ তায়ালা লেখক পাঠক এবং সকলকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন এবং বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করেন। যাবতীয় গুনাহের কাজ পরিহার করার তৌফিক দান করেন।
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ
কপিরাইট © ২০২৪ ইসলামী শরীয়াহ্ অর্গানাইজেশন. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত. ব্যবহারবিধি ও স্বত্বাধিকার আইন.