জান্নাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ জান্নাত
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِزْقًا قَالُوا هَذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (25

[البقرة: 25]

সরল অনুবাদ

যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে(১) তাদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত; যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেওয়া হবে, তখনই তারা বলবে, ‘আমাদেরকে (পৃথিবীতে অথবা জান্নাতে) পূর্বে জীবিকারূপে যা দেওয়া হত, এ তো তাই।’ তাদেরকে পরস্পর একই সদৃশ ফল(২) দান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্য পবিত্র(৩) সহধর্মিণীগণ রয়েছে, অধিকন্তু তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। (৪)

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৫

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

(১) ক্বুরআন কারীম প্রত্যেক স্থানে বিশ্বাস তথা ঈমানের সাথে সাথে সৎকর্ম তথা নেক আমলের কথা উল্লেখ ক’রে এ কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, ঈমান এবং নেক আমল পরস্পর অবিচ্ছেদ্য অংশ। নেক আমল ব্যতীত ঈমান ফলপ্রসূ নয় এবং আল্লাহর নিকট ঈমান ছাড়া নেক আমলের কোন গুরুত্ব নেই। আর নেক আমল তখনই নেক আমল বলে গণ্য হবে, যখন তা সুন্নত (নবী (সাঃ)-এর তরীকা) অনুযায়ী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য খাঁটি নিয়তে করা হবে। সুন্নত পরিপন্থী আমল গ্রহণযোগ্য নয়। অনুরূপ খ্যাতি লাভ ও লোক দেখানোর জন্য কৃত আমলও প্রত্যাখ্যাত।
(২) مُتَشَابِهًا (সদৃশ)এর অর্থ হয়তো বা জান্নাতের সমস্ত ফলের আকার-আকৃতি এক রকম হবে অথবা তা দুনিয়ার ফলের মত দেখতে হবে। তবে এ সাদৃশ্য কেবল আকার ও নাম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। নচেৎ জান্নাতের ফলের সবাদের সাথে দুনিয়ার ফলের সবাদের কোন তুলনাই নেই। জান্নাতের নিয়ামতের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, “(এমন নিয়ামত) যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার সঠিক ধারণা উদয় হয়নি।”
(সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদাহ)
(৩) অর্থাৎ, মাসিক, নিফাস (প্রসবোত্তর রক্ত) এবং অন্যান্য ঘৃণিত জিনিস থেকে পবিত্রা হবে।
(৪) خَالِدِين এর অর্থ চিরস্থায়ী। জান্নাতবাসীরা জান্নাতে চিরকাল থাকবে এবং তারা বড়ই প্রফুল্ল থাকবে। আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং তারা বড় কষ্টে বাস করবে। হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাওয়ার পর একজন ফিরিশতা ঘোষণা দেবেন, “হে জাহান্নামবাসীগণ! আর মৃত্যু নেই। আর হে জান্নাতবাসীগণ! আর মৃত্যু নেই। যে দল যে অবস্থায় আছে, সব সময় ঐ অবস্থাতেই থাকবে।”
(সহীহ বুখারী, কিতাবুর রিক্বাক্ব, মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ)

আয়াতে কারীমাহ্

وَقُلْنَا يَاآدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ (35

 [البقرة: 35]

সরল অনুবাদ

আমি বললাম, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং যেখানে যা ইচ্ছা তৃপ্তি সহকারে খাও। কিন্তু এ গাছের নিকটে যেয়ো না। [১] গেলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের মধ্যে শামিল হবে’।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৩৫

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

(১) এই গাছটি কিসের গাছ ছিল? কুরআন ও হাদীসে এর কোন পরিষ্কার বর্ণনা নেই। তা গমের গাছ বলে যে লোকমাঝে প্রসিদ্ধি আছে তার কোন ভিত্তি নেই। পক্ষান্তরে আমাদের গাছের নাম জানার কোন প্রয়োজন নেই এবং তাতে কোন লাভও নেই।

আয়াতে কারীমাহ্

وَقَالُوا لَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارَى تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (111

[البقرة: 111]

সরল অনুবাদ

তারা বলে, ইয়াহুদী এবং নাসারাগণ ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের অলীক আকাঙ্ক্ষা মাত্র। বলো, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে নিজেদের দলীল পেশ করো’।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১১১

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

এখানে আহলে-কিতাবদের অহংকার ও তাদের সেই আত্মপ্রবঞ্চনার কথাকে আবারও তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে তারা লিপ্ত ছিল। আল্লাহ তাআলা বললেন, এটা কেবল ওদের মনের বাসনা, এ ব্যাপারে কোন দলীল তাদের কাছে নেই।

আয়াতে কারীমাহ্

وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ (133

[آل عمران: 133]

সরল অনুবাদ

তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।

সূরার নাম ঃ আল ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৩৩

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

পার্থিব ধন-সম্পদের পিছনে পড়ে আখেরাত বরবাদ না করে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের আনুগত্যের, আল্লাহর ক্ষমা এবং তাঁর সেই জান্নাতের পথ ধর, যা ধর্মভীরু বা মুত্তাক্বীদের জন্য তিনি প্রস্তুত করেছেন। পরের আয়াতগুলোতে মুত্তাক্বীদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে।

আয়াতে কারীমাহ্

أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ (136

[آل عمران: 136]

সরল অনুবাদ

এরাই তারা যাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে ক্ষমা এবং এমন এক জান্নাত যার নিম্নে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তার স্থায়ী অধিবাসী এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম!

সূরার নাম ঃ আল ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৩৬