আল্লাহর সার্বভৌমত্ব

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (24)

[الحشر: 24]

সরল অনুবাদ

তিনিই আল্লাহ্, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, আকৃতিদাতা, উত্তম নামসমূহ তাঁরই। আকাশমন্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রা ঘোষনা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী মহাপ্রজ্ঞাময়।

সূরার নাম ঃ হাশর
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৪

আয়াতে কারীমাহ্

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي الْآخِرَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ (1

[سبأ: 1]

সরল অনুবাদ

সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর যিনি মালিক [১] যা কিছু আছে আসমান এবং যা কিছু আছে যমীনে তাঁর, আর আখেরাতে সমস্ত প্রসংশা তাঁরই।[২] তিনি প্রজ্ঞাময়, সব কিছু অবহিত।

সূরার নাম ঃ সাবা
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ০১

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] অর্থাৎ, তা তাঁরই মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে আছে এবং তাতে তাঁরই ইচ্ছা ও ফায়সালা চলে। মানুষ যে সকল নিয়ামত পেয়েছে, তার সব কিছু তাঁরই সৃষ্টি এবং তা তাঁরই অনুগ্রহ। যার ফলে আকাশ ও পৃথিবীর সকল বস্তুর প্রশংসা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহরই ঐ নিয়ামতের উপর প্রশংসা; যা তিনি তাঁর সৃষ্টিকে প্রদান করেছেন।
[২] এ প্রশংসা কিয়ামতের দিন মু’মিন ব্যক্তিগণ করবে। যেমন, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন…….।
(সূরা যুমার ৩৯:৭৪ আয়াত)
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই; যিনি আমাদেরকে এর পথ দেখিয়েছেন।
(সূরা আ’রাফ ৭:৪৩ আয়াত)
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন।
(সূরা ফাত্বির ৩৫:৩৪ আয়াত) ইত্যাদি।
তার পরেও দুনিয়াতে আল্লাহর হামদ্ ও প্রশংসা করা এক প্রকার ইবাদত; যা পালন করতে মানুষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আখেরাতে (বেহেশ্তে) তা মু’মিনদের রূহের খোরাক হবে, যাতে তারা আনন্দ ও খুশী উপভোগ করবে।
(ফাতহুল ক্বাদীর)

আয়াতে কারীমাহ্

 إِنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ (116

[التوبة: 116]

সরল অনুবাদ

নিশ্চয় আসমান ও যমীনের সার্বভৈমত্ব আল্লাহরই। তিনিই জবীন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। তোমাদের জন্য আল্লাহ্ ছাড়া কোন বন্ধু নেই এবং সাহায্যকারী নেই।

সূরার নাম ঃ তাওবাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১১৬

আয়াতে কারীমাহ্

لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ قُلْ فَمَنْ يَمْلِكُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ أَنْ يُهْلِكَ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (17

[المائدة: 17]

সরল অনুবাদ

নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, মসীহ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ। আপনি জিজ্ঞেস করুন, যদি তাই হয়, তবে বল যদি আল্লাহ মসীহ ইবনে মরিয়ম, তাঁর জননী এবং ভূমন্ডলে যারা আছে, তাদের সবাইকে ধ্বংস করতে চান, তবে এমন কারও সাধ্য আছে কি যে আল্লাহর কাছ থেকে তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বাঁচাতে পারে? আসমান ও যমীন এ দুইয়ের মাঝে যা কিছু আছে তার মালিকানা একমাত্র আল্লাহর। তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। আল্লাহ্ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।

সূরার নাম ঃ মায়িদাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৭

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজ অসীম ক্ষমতা ও পূর্ণ সার্বভৌমত্বের কথা বর্ণনা করেছেন। উদ্দেশ্য খ্রিষ্টানদের সেই আকীদা ও বিশ্বাসকে খন্ডন করা, যাতে তারা মনে করে যে, মসীহ (আঃ) স্বয়ং আল্লাহ। ‘মসীহ (আঃ) স্বয়ং আল্লাহ’ (যীশুই ঈশ্বর) এই আকীদায় বিশ্বাসী প্রথমে অল্প সংখ্যক লোক ছিল অর্থাৎ, খ্রিষ্টানদের একটি ফির্কাই ছিল, যারা ‘ইয়াকূবিয়াহ’ নামে পরিচিত।
কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রায় সকল ফির্কাই কোন না কোন দিক দিয়ে ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ মনে করে থাকে। এই জন্য খ্রিষ্টধর্মে ত্রিত্ববাদ অথবা ট্রিনিটির বিশ্বাস মূল ভিত্তি হিসাবে গুরুত্ব লাভ করেছে।
অথচ কুরআনে কারীমের এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, কোন নবী বা রসূলকে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করা প্রকাশ্য কুফরী। খ্রিষ্টানরা মসীহ (আঃ)-কে আল্লাহ বানিয়ে এই কুফরী করেছে। যদি অন্য কোন ফির্কা বা দল অন্য কোন নবী বা রসূলকে মানুষ ও রসূল হওয়ার আসন থেকে উঠিয়ে আল্লাহর আসনে আসীন করে, তাহলে তারাও কুফরী করবে। (আমরা এই ভ্রান্ত আকীদা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)