fbpx

কবর

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ কবর
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

وَلَا تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونَ (84

[التوبة: 84]

সরল অনুবাদ

ওদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার উপর কখনো (জানাযার) নামায পড়বে না এবং তার কবরের কাছেও দাঁড়াবে না;[১] তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং তারা অবাধ্য অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছে। [২]

সূরার নাম ঃ আত তাওবাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৮৪

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

 [১] এই আয়াত যদিও মুনাফিক্বদের সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, তবুও এর নির্দেশ ব্যাপক। প্রত্যেক সেই ব্যক্তি যার মৃত্যু কুফরী ও মুনাফিক্বীর উপরেই হয়ে থাকে, সে এরই অন্তর্ভুক্ত।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ এই যে, যখন আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের মৃত্যু হয়ে গেল, তখন তার ছেলে আব্দুল্লাহ (যে মুসলিম ছিল এবং তার নাম বাপের মতই ছিল) রসূলের (সাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলল, (বরকতস্বরূপ) আপনি আপনার কামীস (জামা)টা আমাকে দিন, যাতে আমার পিতাকে কাফন স্বরূপ পরিয়ে দিই এবং আপনি তার জানাযার নামাযও পড়ে দিন। মহানবী (সাঃ) নিজের কামীস খানা দিয়ে দিলেন এবং তার জানাযার নামায পড়ানোর জন্যও উপস্থিত হলেন।
উমার (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে বললেন,
‘আল্লাহ তাআলা এমন লোকের জানাযা পড়তে নিষেধ করেছেন, তাহলে আপনি কেন এর ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনার দু’আ করবেন?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা আমাকে এর এখতিয়ার দান করেছেন। অর্থাৎ, বাধা দেননি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যদি তুমি ৭০ বার তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন না।’ আমি তার জন্য ৭০ বার অপেক্ষা অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করব।” সুতরাং তিনি তার জানাযার নামায পড়ালেন। আল্লাহ তাআলা তৎক্ষণাৎ এই আয়াত অবতীর্ণ করে বললেন, আগামীতে মুনাফিক্বদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দু’আ কোনক্রমেই করা যাবে না।
(বুখারী, সূরা বারাআতের ব্যাখ্যা, মুসলিম মুনাফিক্বদের বিবরণ)
[২] এটা ছিল জানাযার নামায ও ক্ষমা প্রার্থনা নিষেধ হওয়ার কারণ বিশেষ। যার অর্থ হল যাদের মৃত্যু কুফরী, শিরক ও মুনাফিক্বীর উপর হবে, তাদের না জানাযা নামায পড়া হবে, আর না তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েয হবে। এক হাদীসে তো এমনও এসেছে যে, নবী (সাঃ) যখন কবরস্থানে পৌঁছলেন তখন জানা গেল যে, আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে দাফন করে দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তিনি তাকে কবর থেকে বের করতে আদেশ করলেন। তিনি তাকে নিজের হাঁটুর উপর রেখে তার উপর নিজ মুখের (বরকতময়) থুথু মারলেন। অতঃপর তাঁর কামীস তাকে পরিয়ে দিলেন।
(বুখারীঃ কামীস পরিধান পরিচ্ছেদ, জানাযা অধ্যায়, মুসলিমঃ মুনাফিক্বদের মন্দ গুণাবলী পরিচ্ছেদ)
কিন্তু এ সব তার কোন কাজে আসেনি। এ হতে জানা গেল যে, যে ঈমান থেকে বঞ্চিত হবে, তার জন্য পৃথিবীর বড় বড় ব্যক্তিত্বের ক্ষমা প্রার্থনার দু’আ এবং সুপারিশ কোন উপকারে আসবে না।

আয়াতে কারীমাহ্

وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لَا رَيْبَ فِيهَا وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَنْ فِي الْقُبُورِ (7

[الحج: 7]

সরল অনুবাদ

আর কিয়ামাত অবশ্যই আসবে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং যারা কবরে আছে আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করবেন।

সূরার নাম ঃ আল হাজ্জ্ব
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ০৭

আয়াতে কারীমাহ্

وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ (22

[فاطر: 22]

সরল অনুবাদ

এবং সমান নয় জীবিত ও মৃত।[১] আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান; [২] আর তুমি মৃতকে শোনাতে পার না। [৩]

সূরার নাম ঃ ফাতির
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ২২

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] أحياء থেকে উদ্দেশ্য হল ঈমানদার মানুষ এবং أموات থেকে উদ্দেশ্য হল কাফের ও অবিশ্বাসী মানুষ অথবা আলেম ও জাহেল অথবা জ্ঞানী ও অজ্ঞ মানুষ।
[২] অর্থাৎ, আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করতে চান এবং জান্নাত যার ভাগ্যে থাকে, তাকে দলীল শ্রবণ ও তা গ্রহণ করার সুমতি দান করেন।
[৩] অর্থাৎ, যেরূপ কবরে মৃত ব্যক্তিকে কোন কথা শুনানো যায় না, অনুরূপ কুফরী ও অবিশ্বাস যাদের অন্তরকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে, হে নবী! তুমি তাদেরকে সত্যের বাণী শুনাতে পারবে না। উদ্দেশ্য এই যে, যেমন মৃত্যু ও কবরে দাফন হওয়ার পর মৃতব্যক্তি কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তেমনি কাফের ও মুশরিক; যাদের জীবনে দুর্ভাগ্য লিপিবদ্ধ আছে, দাওয়াত ও তবলীগ দ্বারা তাদের কোন উপকার হয় না।

আয়াতে কারীমাহ্

سورة الممتحنة
بسم الله الرحمن الرحيم

 يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ قَدْ يَئِسُوا مِنَ الْآخِرَةِ كَمَا يَئِسَ الْكُفَّارُ مِنْ أَصْحَابِ الْقُبُورِ (13 

সরল অনুবাদ

হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না [১]  আল্লাহ যাদের প্রতি রাগান্বিত। তারা পরকাল সম্পর্কে তেমনি নিরাশ যেমন কবরবাসী কাফিররা নিরাশ  [২] (কারণ তারা পরকালকে অবিশ্বাস করার কারণে তার জন্য কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি।)

সূরার নাম ঃ আল মুম্‌তাহিনাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৩

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] এ থেকে কেউ ইয়াহুদীদের, কেউ মুনাফিকদের এবং কেউ সমস্ত কাফেরদেরকে বুঝিয়েছেন। আর এই শেষের উক্তিটাই বেশী সঠিক মনে হচ্ছে। কেননা, এতে ইয়াহুদী ও মুনাফিকরাও এসে যায়। এ ছাড়া সমস্ত কাফেররা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হওয়ারই যোগ্য। অতএব অর্থ হবে, কোন কাফেরের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রেখো না। যেমন, কুরআনের আরো কয়েকটি স্থানে এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
[২] পরকাল সম্পর্কে হতাশ হওয়ার অর্থ, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা অস্বীকার করা। কবরবাসী থেকে নিরাশ হওয়ার অর্থও এটাই যে আখেরাতে পুনরায় তাদেরকে উঠানো হবে না।
এর দ্বিতীয় অর্থ এও করা হয়েছে যে, কবরস্থ কাফের সর্বপ্রকার মঙ্গল থেকে নিরাশ। কেননা, মৃত্যুবরণ করার পর সে তার কুফরীর পরিণাম দেখে নিয়েছে। অতএব সে মঙ্গলের কি আর আশা করতে পারে?
(ইবনে জারীর ত্বাবারী)