আল্লাহর কিতাব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বিষয়ঃ আল্লাহর কিতাব
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ (2
[البقرة: 2]
সরল অনুবাদ
ইহা সেই কিতাব, নেই কোন সন্দেহ এতে, [১] ইহা হেদায়েত [২] মুত্তাকীদের জন্য।
সূরার নাম ঃ বাক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
(সূরা সাজদা ৩২:২)
কোন কোন আলেমগণ বলেছেন, বাক্যটি ঘোষণামূলক হলেও তার অর্থ নিষেধমূলক। অর্থাৎ, لاَ تَرتَابُوا فِيهِ (এতে সন্দেহ করো না)।
এ ছাড়াও এতে যেসব ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে তার সত্যতা সম্পর্কে, যেসব বিধি-বিধান ও মসলা-মাসায়েল বর্ণিত হয়েছে সে সবের উপর মানবতার কল্যাণ ও মুক্তি যে নির্ভরশীল সে ব্যাপারে এবং যেসব আক্বীদা (তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত) সংক্রান্ত বিষয় আলোচিত হয়েছে তার সত্য হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
[২] এই ঐশী গ্রন্থ আসলে তো সমস্ত মানুষের হিদায়াত এবং পথ প্রদর্শনের জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু এই নির্ঝরের পানি দ্বারা কেবল তারাই সিক্ত হবে, যারা ‘আবে হায়াত’ (সঞ্জীবনী পানি)-এর সন্ধানী এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। আর যাদের অন্তরে মৃত্যুর পর আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করার অনুভূতি এবং চিন্তা নেই, যাদের মধ্যে সুপথ সন্ধানের অথবা ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার কোনই উৎসাহ ও আগ্রহ নেই, তারা সুপথ কোথা থেকে এবং কেনই বা পাবে?
(সকাল তো তাদের জন্য, যারা ঘুম ছেড়ে চোখের পাতা মেলে জেগে ওঠে।)
আয়াতে কারীমাহ্
قُلْ يَاأَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ (64
[آل عمران: 64]
সরল অনুবাদ
আপনি বলুন: হে আহলে কিতাবগণ ! তোমরা এসো এমন এক কথার দিকে যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান-যে; আমরা এবাদত করব না আল্লাহ ছাড়া আর কারো এবং তাঁর সাথে কোনো শরীক সাব্যস্ত করব না [১] এবং আল্লাহ ছাড়া আমারা কেউ কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করব না। [২] অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমরা বল; সাক্ষী থাকো, আমরা তো অবশ্যই মুসলিম (অনুগত) [৩]
সূরার নাম ঃ আলে ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৬৪
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আর দ্বিতীয় যে জিনিসটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা হল, তোমরা যে তোমাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদেরকে হালাল ও হারাম করার অধিকার দিয়ে রেখেছ, তা তাদেরকে রব্ব মনে করারই অন্তর্ভুক্ত। যেমন, [اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ] আয়াতও এ কথার সাক্ষ্য দেয়। তাদের এ কাজও সঠিক নয়। কারণ, হালাল ও হারাম করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।
(ইবনে কাসীর ও ফাতহুল ক্বাদীর)
(বুখারী ৭নং)
কেননা, প্রজাদের ইসলাম স্বীকার না করার কারণই হবে তুমি। আলোচ্য আয়াতে তিনটি মৌলিক বিষয় উল্লিখিত হয়েছে,
(ক) কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা,
(খ) তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং
(গ) কাউকে শরীয়তী বিধান প্রণয়নের ইলাহী মর্যাদা না দেওয়া। এটাই সেই ‘অভিন্ন বাক্য’ যার উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতি আহলে-কিতাবদেরকে আহবান জানানো হয়েছে। সুতরাং এই শতধা-বিচ্ছিন্ন উম্মতকেও ঐক্যবদ্ধ করতে উক্ত তিনটি বিষয়কে এবং এই ‘অভিন্ন বাক্য’কে অধিকরূপে মূল ভিত্তি ও বুনিয়াদ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত
আয়াতে কারীমাহ্
وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (23
[البقرة: 23]
সরল অনুবাদ
আর যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করো আমি যা নাযিল করেছি আমার বান্দার উপর তাতে, তাহলে নিয়ে এসো কোন সূরা তার অনুরুপ। আর ডাকো তোমাদের সাহায্যকারীদের আল্লাহ ছাড়া যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
সূরার নাম ঃ বাক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৩
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
তাওহীদের পর এবারে রিসালাতের প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমি আমার বান্দার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি, সেটা যে আল্লাহরই পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ ব্যাপারে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে, তবে তোমরা তোমাদের সকল সহযোগীদের সাথে নিয়ে এই ধরনের কোন একটি সূরা রচনা করে দেখিয়ে দাও! আর যদি এ রকম করতে না পার, তাহলে জেনে নিও যে, বস্ত্ততঃ এ বাণী কোন মানুষের প্রচেষ্টার ফল নয়, বরং তা আল্লাহর বাণী। তোমাদের উচিত, আল্লাহর কালাম এবং রসূলের রিসালাতের উপর ঈমান এনে সেই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চেষ্টা করা, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
আয়াতে কারীমাহ্
فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ (24
[البقرة: 24]
সরল অনুবাদ
আর যদি তোমরা তা না পারো এবং তোমরা কখনোই তা পারবে না। [১] তবে ভয় করো সে আগুনকে, যার জ্বালানী হবে মানুষ এবং পাথর, [২] যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য। [৩]
সূরার নাম ঃ বাক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৪
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আর দ্বিতীয়তঃ জানা গেল যে, জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্ব আছে এবং এখনোও তা বিদ্যমান রয়েছে।
সালফে-সালেহীনদের এটাই আক্বীদা (বিশ্বাস)। এটা কেবল উপমা বা দৃষ্টান্তমূলক কোন জিনিস নয়; যেমন অনেক আধুনিকতাবাদী ও হাদীস অস্বীকারকারীরা বোঝাতে চায়।
আয়াতে কারীমাহ্
وَآمِنُوا بِمَا أَنْزَلْتُ مُصَدِّقًا لِمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوا أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ (41
[البقرة: 41]
সরল অনুবাদ
আর তোমরা ঈমান আনো তাতে, যা আমি নাযিল করেছি, যা প্রত্যায়ন করে তোমাদের কাছে যা আছে তা, অতএব তোমরা এর [১] প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ো না এবং বিক্রি করো না আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে [২] আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো
সূরার নাম ঃ বক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৪১
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
(ইবনে কাসীর)
‘প্রথম অবিশ্বাসকারী হয়ো না’ এর অর্থ, প্রথমতঃ তোমাদের যে জ্ঞান রয়েছে, অন্যরা সে জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। কাজেই তোমাদের দায়িত্ব সর্বাধিক।
দ্বিতীয়তঃ মদীনায় ইয়াহুদীদেরকেই সর্বপ্রথম ঈমানের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল; যদিও হিজরতের পূর্বে অনেক মানুষ ইসলাম কবুল করে নিয়েছিল। তাই সতর্ক করা হচ্ছে যে, ইয়াহুদীদের মধ্যে তোমরা প্রথম অবিশ্বাসকারী হয়ো না। কারণ, যদি তোমরা তা হও, তাহলে সমস্ত ইয়াহুদীদের কুফরী ও অবিশ্বাস করার (পাপের) বোঝা তোমাদের উপর চাপব
আয়াতে কারীমাহ্
وَلَمَّا جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ كِتَابَ اللَّهِ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ (101
[البقرة: 101]
সরল অনুবাদ
আর যখন এলেন তাদের কাছে একজন রসূল আল্লাহর তরফ থেকে, যিনি তাদের কাছে যা আছে তা সমর্থক। তখন যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের একদল আল্লাহর কিতাবকে পিছনে নিক্ষেপ করল, যেন তারা জানে না।
সূরার নাম ঃ বক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১০১
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
মহান আল্লাহ নবী করীম (সাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলছেন যে, আমি রসূলকে বহু উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী দান করেছি; যা দেখে ইয়াহুদীদেরও ঈমান আনা উচিত ছিল। তাছাড়া তাদের কিতাব তাওরাতেও তার গুণাবলীর উল্লেখ এবং তার উপর ঈমান আনার অঙ্গীকার রয়েছে, কিন্তু তারা পূর্বে কি কোন অঙ্গীকারের কোনই পরোয়া করেছে যে, এই অঙ্গীকারেরও করবে? অঙ্গীকার ভঙ্গ করা তাদের একটি দলের অভ্যাসই ছিল। এমন কি আল্লাহর কিতাবকেও তারা পশ্চাতে নিক্ষেপ করল; যেন তারা তা (আল্লাহর বাণী বলে) জানেই না।
আয়াতে কারীমাহ্
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ (121
[البقرة: 121]
সরল অনুবাদ
যাদের আমি কিতাব দিয়েছি, [১] তারা তা যথাযথভাবে তেলাওয়াত করে, [২] তারাই তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে। আর যারা তা প্রত্যাখ্যান করে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত। [৩]
সূরার নাম ঃ বক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১২১
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
(ক) অত্যধিক একাগ্রতা ও মনোযোগের সাথে পড়ে। জান্নাতের কথা এলে জান্নাত কামনা করে এবং জাহান্নামের কথা এলে তা থেকে পানাহ চেয়ে নেয়।
(খ) তার হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম মনে করে এবং আল্লাহর কালামের কোন বিকৃতি ঘটায় না। (যেমন, ইয়াহুদীরা করত।)
(গ) এতে যা কিছু লেখা আছে, তা সবই লোকমাঝে প্রচার করে, এর কোন কিছুই গোপন করে না। সুস্পষ্ট আয়াতগুলোর উপর আমল করে, অস্পষ্ট আয়াতগুলোর উপর ঈমান রাখে এবং যে কথাগুলো বুঝে আসে না, তা আলেমদের মাধ্যমে বুঝে নেয়।
(ঘ) এর প্রত্যেকটি কথার অনুসরণ করে।
(ইবনে কাসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (146
[البقرة: 146]
সরল অনুবাদ
আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, তারা তাঁকে (আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানে, যেমন তারা জানে নিজেদের সন্তানদের। তবে অবশ্যই তাদের একটি সম্প্রদায় সত্য গোপন করে জেনেশুনে।
সূরার নাম ঃ বক্বরা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৪৬
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আয়াতে কারীমাহ্
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (174
[البقرة: 174]
সরল অনুবাদ
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন এবং গ্রহণ করে তার বিনিময় তুচ্ছমূল্য তারা তো কেবল তাদের পেটে আগুনই ঢুকায়। আর আল্লাহ তাদের সাথে কেয়ামতের দিন না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
সূরার নাম ঃ বক্বারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৭৪
আয়াতে কারীমাহ্
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ (3
[آل عمران: 3]
সরল অনুবাদ
আল্লাহ্ নাযিল করেছেন আপনার প্রতি কিতাব (পবিত্র কোরআন) সত্যসহ, সমর্থকরূপে এর পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তার এবং তিনি নাযিল করেছেন তাওরত ও ইঞ্জিল।
সূরার নাম ঃ আল-ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৩
আয়াতে কারীমাহ্
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَمَنْ يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ (19
[آل عمران: 19 ]
সরল অনুবাদ
নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর নিকট (একমাত্র মনোনীত) ধর্ম।[১] যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরও তাদের মধ্যে মতানৈক্য ঘটিয়েছিল![২] আর যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে[৩] অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে), নিশ্চয় আল্লাহ সত্বর হিসাব গ্রহণকারী।
সূরার নাম ঃ আল-ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৯
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আর এই ঈমানের সাথে সাথে সেই আকীদা ও আমলগুলো পালন করতে হবে, যেগুলো কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এখন আল্লাহর নিকট দ্বীনে-ইসলাম ব্যতীত আর কোন দ্বীন গৃহীত হবে না।
মহান আল্লাহ বলেন, “যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে, তার পক্ষ হতে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত।”
(সূরা আলে ইমরান ৩:৮৫ আয়াত)
নবী করীম (সাঃ)-এর নবুঅত ও রিসালাত সমগ্র মানবতার জন্য।
(সূরা আ’রাফ ৭:১৫৮ আয়াত)
(সূরা ফুরকান ২৫:১ আয়াত)
হাদীসে রসূল (সাঃ) বলেছেন, “সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ আছে! ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের যে কেউ আমার উপর ঈমান না এনেই মারা যাবে, সে জাহান্নামী হবে।” (সহীহ মুসলিম) তিনি আরো বলেন, “আমি সাদা-কালো সকলের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।” (অর্থাৎ, সকল মানুষের জন্য নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি।) আর এই কারণেই তিনি সেই সময়ের সমস্ত বাদশাহদের প্রতি পত্র প্রেরণ করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন।
(বুখারী, মুসলিম, ইবনে কাসীর)
অর্থাৎ, তারা সত্যকে জেনে ও চিনেছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও কেবল দুনিয়ার খেয়ালী স্বার্থের পিছনে পড়ে ভ্রান্তমূলক কথার উপরে কায়েম থাকত এবং সেটাকেই দ্বীন বুঝানোর চেষ্টা করত। যাতে তাদের নাকও যেন উঁচু থাকে এবং জনগণের মাঝে তাদের বিশ্বস্ততাও যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে। পরিতাপের বিষয় যে, ইদানীং মুসলিম উলামাদের এক বিরাট সংখ্যক দল ঠিক এই ধরনেরই জঘন্য উদ্দেশ্য সাধনের তাকীদে তাদের মতনই ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করে চলেছে। আল্লাহ তাদেরকে ও আমাদেরকে হিদায়াত করুন। আমীন।
আয়াতে কারীমাহ্
يَاأَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (71
[آل عمران: 71]
সরল অনুবাদ
আহলে কিতাবগণ ! কেন তোমরা মিশ্রিত করছো হককে বাতিলের সাথে এবং গোপন করছ হক, অথচ তোমরা জান ?
সূরার নাম ঃ আল-ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৭১
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
এখানে ইয়াহুদীদের দু’টি অতি বড় অপরাধের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দান করা হচ্ছে।
প্রথম অপরাধ হল, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে মিশ্রিত করণ; যাতে মানুষের কাছে সত্য ও মিথ্যা পরিষ্কার না হয়।
দ্বিতীয় অপরাধ হল, সত্যকে গোপন করা। অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর যে নিদর্শন ও গুণাবলী তাওরাতে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা মানুষ থেকে গোপন করা, যাতে কমসে-কম এই নিদর্শনাদির দিক থেকে যেন তাঁর সত্যতা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। আর এই উভয় অপরাধ তারা জেনে-শুনেই করত। যার কারণে তারা বড়ই দুর্দশার শিকার হয়েছিল। তাদের অপরাধের কথা সূরা বাক্বারাতেও (২:৪২ আয়াতে) উল্লেখ হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন,
[وَلا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ]
অর্থাৎ, “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে গোপন করো না।” ‘আহলে কিতাব’ (ঐশীগ্রন্থধারী) শব্দটি কোন কোন মুফাসসিরের নিকট ব্যাপক; যা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান উভয়কেই শামিল।
অর্থাৎ, তাদের উভয়কেই এই অপরাধ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
আবার কেউ বলেছেন, ‘আহলে কিতাব’ বলতে ইয়াহুদীদের সেই কয়েকটি গোত্রকে বুঝানো হয়েছে, যারা মদীনায় বসবাস করত। যেমন, বানী ক্বুরাইযা, বানী নায্বীর এবং বানী ক্বাইনুক্বা। আর এই উক্তিকেই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ, (বিভিন্ন কার্যকলাপের তাকীদে) মুসলিমদের সরাসরি সম্পর্ক এদের সাথেই ছিল এবং নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে বিরোধিতায় এরাই ছিল অগ্রণী।
আয়াতে কারীমাহ্
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيمًا (105
[النساء: 105]
সরল অনুবাদ
নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি কিতাব আপনার প্রতি সত্যসহ, যাতে আপনি ফায়সালা করেন [১] লোকদের মাঝে আল্লাহ যা আপনাকে জানিয়েছেন সে অনুযায়ী, আর আপনি হবেন না বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী। [২]
সূরার নাম ঃ নিসা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১০৫
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
এ থেকে যে বিষয়গুলো জানা গেল তা হল, প্রথমতঃ নবী করীম (সাঃ) একজন মানুষ বিধায় তিনি ভুল বোঝাবুঝির শিকার হতেন।
দ্বিতীয়তঃ তিনি গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন না। গায়বের খবর জানলে তিনি সত্বর তাদের প্রকৃত ব্যাপার জেনে নিতেন।
তৃতীয়তঃ মহান আল্লাহ স্বীয় পয়গম্বরের হিফাযত করেন। তাই কখনোও যদি প্রকৃত ব্যাপার গুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণে নবীর দ্বারা (সত্যের) বিপরীত কিছু হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছত, সঙ্গে সঙ্গেই মহান আল্লাহ সে ব্যাপারে নবীকে সতর্ক করে তাঁর সংশোধন করে দিতেন। আর এটাই হল নবীদের নিষ্পাপ হওয়ার দাবী। এ এমন এক উচ্চ মর্যাদা যা আম্বিয়া ব্যতীত আর কেউ লাভ করতে পারে না।
আয়াতে কারীমাহ্
لَكِنِ اللَّهُ يَشْهَدُ بِمَا أَنْزَلَ إِلَيْكَ أَنْزَلَهُ بِعِلْمِهِ وَالْمَلَائِكَةُ يَشْهَدُونَ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا (166
[النساء: 166]
সরল অনুবাদ
আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী। সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।
সূরার নাম ঃ নিসা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৬৬
আয়াতে কারীমাহ্
يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (174
[النساء: 174]
সরল অনুবাদ
হে মানব সম্প্রদায় ! তোমাদের কাছে তো এসেছে প্রমাণ [১] তোমাদের রবের তরফ থেকে। আমি অবতীর্ণ করেছি তোমাদের প্রতি উজ্জ্বল জ্যোতি (আল- কোরআন)। [২]
সূরার নাম ঃ নিসা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৭৪
সংক্ষিপ্ত তাফসীর