fbpx

ঈমান

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ ঈমাণ
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ (3

[3 : البقرة]

সরল অনুবাদ

যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, [১] যথাযথভাবে নামায পড়ে[২] ও তাদেরকে যা দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। [৩]

সূরার নাম ঃ বাক্বারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৩ 

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] গায়বী, অদৃশ্য তথা অদেখা বিষয়সমূহ হল এমন সব জিনিস যার উপলব্ধি জ্ঞান ও ইন্দ্রিয় দ্বারা সম্ভব নয়। যেমন মহান আল্লাহর সত্তা, তাঁর অহী (প্রত্যাদেশ), জান্নাত ও জাহান্নাম, ফিরিশতা, কবরের আযাব এবং মৃত দেহের পুনরুত্থান ইত্যাদি।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এমন কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করাও ঈমানের অংশ যা জ্ঞান ও ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। আর তা অস্বীকার করা কুফরী ও ভ্রষ্টতা।
[২] যথাযথভাবে নামায পড়া বা নামায কায়েম করার অর্থ হল, নিয়মিতভাবে রসূল (সাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী নামায আদায়ের প্রতি যত্ন নেওয়া। নচেৎ নামায তো মুনাফিকরাও পড়তো।
[৩] ‘ব্যয় করা’ কথাটি ব্যাপক; যাতে ফরয ও নফল উভয় প্রকার (ব্যয়, খরচ, দান বা সদকা)ই শামিল। ঈমানদাররা তাদের সামর্থ্যানুযায়ী উভয় প্রকার সদকার ব্যাপারে কোন প্রকার কৃপণতা করে না। এমনকি পিতা-মাতা এবং পরিবার ও সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করাও এই ‘ব্যয় করা’র মধ্যে শামিল এবং তাও নেকী লাভের মাধ্যম।

আয়াতে কারীমাহ্

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ (121)

[121 ঃ البقرة]

সরল অনুবাদ

তাদের মাঝে যাআমি যাদেরকে কিতাব (ধর্মগ্রন্থ) দান করেছি [১] তারা যথাযথভাবে তা (ধর্মগ্রন্থ) পাঠ করে থাকে। [২] তারাই তাতে (ধর্মগ্রন্থ) বিশ্বাস করে। আর যারা তা অমান্য করে, তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত। [৩]

সূরার নাম ঃ বাক্বারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ  ১২১

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] আহলে-কিতাবের অযোগ্য উত্তরসুরিদের নিকৃষ্ট চরিত্র ও কর্মকান্ডের প্রয়োজনীয় আলোচনার পর তাদের মধ্যে যে কিছু সৎ ও উন্নত চরিত্রের লোক ছিল, এই আয়াতে তাদের গুণাবলী এবং তারা যে মু’মিন ছিল সেই সংবাদ দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন সালাম এবং আরো কিছু অন্য লোক ছিলেন। ইয়াহুদীদের মধ্য থেকে এদেরকেই ইসলাম কবুল করার তাওফীক হয়েছিল।
[২] ‘তারা যথাযথভাবে তা পাঠ করে’ (তারা তার হক আদায় করে তেলাঅত করে) এর কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে। যেমনঃ
(ক) অত্যধিক একাগ্রতা ও মনোযোগের সাথে পড়ে। জান্নাতের কথা এলে জান্নাত কামনা করে এবং জাহান্নামের কথা এলে তা থেকে পানাহ চেয়ে নেয়।
(খ) তার হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম মনে করে এবং আল্লাহর কালামের কোন বিকৃতি ঘটায় না। (যেমন, ইয়াহুদীরা করত।)
(গ) এতে যা কিছু লেখা আছে, তা সবই লোকমাঝে প্রচার করে, এর কোন কিছুই গোপন করে না। আয়াতগুলোর উপর আমল করে, অস্পষ্ট আয়াতগুলোর উপর ঈমান রাখে এবং যে কথাগুলো বুঝে আসে না, তা আলেমদের মাধ্যমে বুঝে নেয়।
(ঘ) এর প্রত্যেকটি কথার অনুসরণ করে। (ফাতহুল ক্বাদীর) বস্তুতঃ (উল্লিখিত) সব অর্থই যথাযথভাবে তেলাঅতের আওতায় পড়ে। আর হিদায়াত এমন লোকদের ভাগ্যেই জুটে, যারা উল্লিখিত কথাগুলির প্রতি যত্ন নেয়।
[৩] আহলে-কিতাবের মধ্যে যে নবী করীম (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনবে না, সে জাহান্নামে যাবে। যেমন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
(ইবনে কাসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

 إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3

  [ 3-الْعَصْرِ]

সরল অনুবাদ

কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে[১] এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়। [২] আর উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের। [৩]

সূরার নাম ঃ আছর
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৩ 

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] তবে ক্ষতি হতে সেই ব্যক্তিরা নিরাপত্তা লাভ করবে, যারা ঈমান এনে নেক আমল করবে। কেননা, তার পার্থিব জীবন যেমনভাবেই অতিবাহিত হোক না কেন, মৃত্যুর পর সে চিরস্থায়ী নিয়ামত এবং জান্নাতের চিরসুখ লাভ করে ধন্য হবে। পরবর্তীতে মু’মিনদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।
[২] অর্থাৎ, তারা একে অপরকে আল্লাহ তাআলার শরীয়তের আনুগত্য করার এবং নিষিদ্ধ বস্তু এবং পাপাচার হতে দূরে থাকার উপদেশ দেয়।
[৩] অর্থাৎ, মসীবত ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য, শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফরযসমূহ পালন করতে ধৈর্য, পাপাচার বর্জন করতে ধৈর্য, কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়। যদিও ধৈর্যধারণের উপদেশ সত্যের উপদেশেরই অন্তর্ভুক্ত, তবুও তা বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাতে ধৈর্যধারণ ও তার উপদেশের মর্যাদা, মাহাত্ম্য এবং সুচরিত্রতায় তার পৃথক বৈশিষ্ট্য থাকার কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

আয়াতে কারীমাহ্

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ (153

[153 : البقرة]

সরল অনুবাদ

হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।[১]

সূরার নাম ঃ বাক্বারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৫৩

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] মানুষের দু’টি অবস্থা হয়, আরাম ও স্বস্তি এবং কষ্ট ও অস্বস্তি। আরাম ও স্বস্তির সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং কষ্ট ও অস্বস্তির সময় ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনার তাকীদ করা হয়েছে।
হাদীসে এসেছে, “মু’মিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর ক্ষতিকর কোন কিছু হলে, সে ধৈর্য ধারণ করে। এই উভয় অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর।”
(মুসলিম ২৯৯৯নং)

ধৈর্য দু’প্রকারের। প্রথম হল, হারাম ও পাপ কাজ ত্যাগ করা ও তা থেকে দূরে থাকার উপর এবং লোভনীয় (অবৈধ) জিনিস বর্জন ও সাময়িক সুখ ত্যাগ করার উপর ধৈর্য ধারণ করা।
দ্বিতীয় হল, আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করতে গিয়ে যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তা ধৈর্য ও সংযমের সাথে সহ্য করা।
কেউ কেউ সবর ও ধৈর্যের ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন, আল্লাহর পছন্দনীয় কর্মসমূহ সম্পাদন করা; তাতে দেহ ও আত্মায় যতই কষ্ট অনুভব হোক না কেন। আর আল্লাহর অপছন্দনীয় কর্মসমূহ থেকে দূরে থাকা; তাতে প্রবৃত্তি ও কামনা তাকে সেদিকে যতই আকৃষ্ট করুক না কেন।
(ইবনে কাসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ (172

[172 : البقرة]

সরল অনুবাদ

ওহে, যারা ঈমাণ এনেছ ! তেমরা খাও সে সব পবিত্র বস্তু হতে যা তোমাদের রিয্ক হিসেবে দিয়েছি এবং শোকর কর আল্লাহর যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত কর। 

সূরার নাম ঃ বাক্বারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৭২

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] এই আয়াতে ঈমানদারদেরকে সেই সমস্ত পবিত্র জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আল্লাহ হালাল করেছেন। আর খেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার তাকীদ করা হয়েছে।
প্রথমতঃ এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ কর্তৃক হালালকৃত জিনিসগুলোই পাক-পবিত্র এবং তাঁর হারামকৃত জিনিসগুলো অপবিত্র; যদিও তা মানুষের কাছে প্রিয় ও তৃপ্তিকর। (যেমন, ইউরোপবাসীদের নিকট শুয়োরের গোশত খুবই প্রিয়)।
দ্বিতীয়তঃ মূর্তিদের নামে উৎসর্গীকৃত জানোয়ার ও জিনিসাদি মুশরিকরা যে নিজেদের উপর হারাম করে নিত তাদের এ কাজ ভুল ছিল, এইভাবে কোন হালাল জিনিস হারাম হয় না। তোমরাও তাদের মত (হালালকে) হারাম করো না। (হারাম কেবল সেই জিনিসগুলো যার বর্ণনা পরের আয়াতে রয়েছে।)
তৃতীয়তঃ যদি তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত সম্পাদনকারী হও, তাহলে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে যত্নবান হও।