fbpx
ঈদুল ফিতরের রাত একজন মুমীনের জন্য সৌভাগ্যের রাত। কেননা রাত শুরু হওয়ার মাধ্যমেই সে তার উপর আরোপিত ফরয বিধান রোজার সম্পদন করে আর যেহেতু সে উক্ত বিধান পালন করেছে তাই এ সময় হলো তার প্রতিদান তার প্রতিদান প্রাপ্তির সময়।
ঈদুল ফিতর ও আমাদের করণীয়

সূচিপত্র

ঈদুল ফিতর ও আমাদের করণীয়

ঈদুল ফিতরের রাত একজন মুমীনের জন্য সৌভাগ্যের রাতঃ

মাওলানা সালমান হুসাইন (গোপালগঞ্জ)
ঈদুল ফিতরের রাত একজন মুমীনের জন্য সৌভাগ্যের রাত। কেননা রাত শুরু হওয়ার মাধ্যমেই সে তার উপর আরোপিত ফরয বিধান রোজার সম্পদন করে আর যেহেতু সে উক্ত বিধান পালন করেছে তাই এ সময় হলো তার প্রতিদান তার প্রতিদান প্রাপ্তির সময়। ফলে একজন মুমিন এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করবে কেননা আমাদের খুশি তো অন্যান্য দুনিয়াদার মানুষের খুশির মত নয়। তাদের খুশিতে যেমনিভাবে তারা আল্লাহর নাফারমানিতে লিপ্ত হয় তেমনিভাবে মুমিন ও তাদের মত নিজের খুশি উৎযাপন করবে বরং একজন জ্ঞানী ও প্রকৃত মুমিন এ খুশির রাতে নিজেকে আল্লাহর সামনে সঁপে দিয়ে তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে আর এর মাধ্যমে সে অনেক ফজিলত প্রাপ্ত হবে।

একটি হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

من قام ليلة العيد . وفي لفظ : من أحياها محتسبًا لم يمت قلبه يوم تموت القلوب 

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ:যে ঈদের রাত জাগ্রত থাকে” অন্য বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি ঈদের রাত সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থাকে, তার অন্তর মারা যাবে না, যে দিন সকল অন্তর মারা যাবে।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-৩১)

তাই উক্ত ফজিলত পাওয়ার আশায়  ঈদের রাত্রি জাগরন করে ইবাদত করা উচিত । আর সম্ভব না হলে কমপক্ষে ইশাও ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করা ।

কেননা হাদীস শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا الْمُغِيرَةُ بْنُ سَلَمَةَ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، – وَهُوَ ابْنُ زِيَادٍ – حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي عَمْرَةَ، قَالَ دَخَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ الْمَسْجِدَ بَعْدَ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ فَقَعَدَ وَحْدَهُ فَقَعَدْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ يَا ابْنَ أَخِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ ‏”‏ ‏

‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন মাগরিবের সলাতের পর ‘উসমান ইবনু ‘আফ্‌ফান মাসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন- ভাতিজা, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামা’আতের সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত সলাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফাজ্‌রের সলাত জামা’আতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে সলাত আদায় করল।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৭৭)

ঈদুল ফিতরের দিবসের আমল ও ফজীলতঃ

১. মিসওয়াক করাঃ

মিসওয়াক করা একটি বিশেষ ও ফযিলত পূর্ণ ইবাদাত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেসওয়াক করার ব্যপারে অনেক গুরত্ব দিতেন । এমনকি তিনি বলেছেন

عَن أَبِي هُرَيْرَةَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاةٍ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্‌ওয়াক করার হুকুম করতাম।
 (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৮৮৭, মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ৭৪১৬)

অপর এক হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

عن عَائِشَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” عَشْرَةٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَالِاسْتِنْشَاقُ، وَنَتْفُ الْإِبْطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ” قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দশটি কাজ স্বভাবগতঃ

  • ০১. মোচ কাঁটা।
  • ০২. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা।
  • ০৩. দাড়ি লম্বা করা।
  • ০৪. মিসওয়াক করা।
  • ০৫. নাকে পানি দেওয়া।
  • ০৬. বগলের পশম উপড়ে ফেলা।
  • ০৭. নাভির নীচের পশম কামানো।
  • ০৮. পেশাবের পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা।
  • ০৯. শৌচকর্ম করা।
  • ১০. মুসআব ইব্‌ন শায়বা (রাঃ) বলেনঃ আমি দশম কথাটি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা হল কুল্লি করা। 
    (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫০৪০)

এছাড়াও অসংখ্য হাদিসে মিসওয়াকের ফলিজত বর্ণিত হয়েছে। এজন্য উলামায়ে কেরাম তাকে সুন্নাত বলেছেন।
(আননুতাফু ফিল ফতোয়া ৬৬, তুহফাতুল ফুকাহা ১৭১)

 ২. গোশল করাঃ

হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন যে ঈদের দিন গোসল করা বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

ﻋﻦ اﺑﻦ ﻋﻤﺮ «ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥﻳﻐﺘﺴﻞ ﻟﻠﻌﻴﺪﻳﻦ

ইবনে উমর রাদিআল্লাহু দুই ঈদের দিন গোসল করতেন
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদীস নং-৫৭৭৩)

এছাড়াও ঈদের দিন গোসল করার বিষয়টি অন্যান্য সালাফ থেকে প্রমানিত। যেমন

 ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻭاﻟﻔﻀﻞ ﺑﻦ ﺩﻛﻴﻦ، ﻋﻦ اﺑﻦ ﺯﺭ، ﻋﻦ ﺇﺑﺮاﻫﻴﻢ اﻟﺘﻴﻤﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺴﺘﺤﺐ اﻟﻐﺴﻞ ﻟﻠﺠﻤﻌﺔ ﻭ اﻟﻌﻴﺪﻳﻦ

ইব্রাহীম তাইমী তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন; তিনি জুমআ ও ঈদের নামাজের জন্য গোশল করা পছন্দ করতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৮২)

৩. উত্তম ও পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়াঃ

এক্ষেত্রে কাপড় নতুন হওয়া জরুরি নয় বরং ব্যবহৃত পরিচ্ছন্ন কাপড় ও হতে পারে। হাদীসে এসেছে-

 ﺃﻥ اﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻛﺎﻥ ﻳﻠﺒﺲ ﻓﻲ اﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺃﺣﺴﻦ ﺛﻴﺎﺑﻪ 

হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ঈদের দিন উত্তম পোষাক পরতেন।
(আসসুনানুল কুবরা, হাদিস নং-৬১৪৩)

যেহেতু ঈদগাহে অনেক মানুষ একত্রিত হয় তাই নিজের শরীর ও পোশাক পরিছন্ন না হলে নিজের এবং অন্যান্যদের কষ্ট হয় ।তাই মানবিক ও উত্তম আখলাকের ও পরিচয় হলো এসময় নিজের যাবতীয় সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া।

৪. ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে যাওয়ার পূর্বে কিছু খেয়ে যাওয়াঃ

হাদিসে এসেছেঃ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُفْطِرُ عَلَى تَمَرَاتٍ يَوْمَ الْفِطْرِ قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ إِلَى الْمُصَلَّى قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غريب صحيح ‏.

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন নামায আদায় করতে বের হওয়ার আগে খেজুর দিয়ে নাস্তা করতেন।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৫৪৩, উক্ত হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযি সহীহ বলেছেন) ইবনু মাজাহ- ১৭৫৪)

অপর এক হাদীসে এসেছে প্রিয়‌নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন নামাতে যাওয়ার আগে বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেয়ে যেতেনঃ

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَغْدُو يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ‏. وَقَالَ مُرَجَّى بْنُ رَجَاءٍ حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنِي أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَيَأْكُلُهُنَّ وِتْرًا‏.‏

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্‌রের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৯৫৩)

৫. ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায় করাঃ

ِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاةِ‏.‏

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, প্রত্যক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতের বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
(সহিহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৩)

৬. ঈদের নামাজ পড়ার জন্য এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে আসাঃ

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ‏. تَابَعَهُ يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ فُلَيْحٍ‏.‏ وَحَدِيثُ جَابِرٍ أَصَحُّ‏.‏

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদের দিন (বাড়ি ফেরার পথে) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইব্‌নু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনায় আবূ তুমাইলা ইয়াহইয়া (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির (রাঃ) হতে হাদীসটি অধিকতর বিশুদ্ধ।
(বুখারী, হাদিস নং ৯৮৬)

৭. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ صَلاَةُ الْجَمِيعِ تَزِيدُ عَلَى صَلاَتِهِ فِي بَيْتِهِ، وَصَلاَتِهِ فِي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وَأَتَى الْمَسْجِدَ، لاَ يُرِيدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ، لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطَّ عَنْهُ خَطِيئَةً، حَتَّى يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ، وَإِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَ فِي صَلاَةٍ مَا كَانَتْ تَحْبِسُهُ، وَتُصَلِّي ـ يَعْنِي عَلَيْهِ ـ الْمَلاَئِكَةُ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي يُصَلِّي فِيهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ ‏”‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা’আতের সাথে সালাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সালাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) তার জন্যে এ বলে দু’আ করেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! তাকে রহম করুন- যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার কোন কাজ সেখানে না করে। 
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৪৭৭)

হযরত আলী রাদিআল্লাহু বলেছে

، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تَخْرُجَ، إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ تَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَسَنٌ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يَخْرُجَ الرَّجُلُ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ يَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ لِصَلاةِ الْفِطْرِ قَالَ أَبُو عِيسَى وَيُسْتَحَبُّ أَنْ لا يَرْكَبَ إِلا مِنْ عُذْرٍ 

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।

নোটঃ
আবু ‘ঈসা (ইমাম তিরমিযি) বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। বেশিরভাগ বিদ্বান এ হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। কোন অজুহাত না থাকলে যানবাহনে চড়ে না গিয়ে বরং ঈদের মাঠে হেঁটে যাওয়াকে তাঁরা মুস্তাহাব বলেছেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া মুস্তাহাব।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং-৫৩০)

৮. ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার সময় আস্তে তাকবীর পড়াঃ

(আন নুতাফু ফিল ফতোয়া ৬৬, তুহফাতুল ফুকাহা ১৬৭)

৯. ঈদের নামাজের আগে ও পরে নফল নামাজ না পড়াঃ

، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ يَوْمَ الْفِطْرِ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلابَعْدَهَا وَمَعَهُ بِلالٌ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে ‘ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করেন। তিনি এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি।
(সহিহ বুখারী, হাদীস নং-৯৮৯)

কিভাবে ঈদের নামাজ পড়বেঃ

একটি তাকবির বলে হাত বাধবে অতঃপর ছানা পড়ে ইমাম সাহেব অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দিবে, তাকবীর গুলোতে হাত উঠাতে হবে তবে তৃতীয় তাকবির বলার পর হাত বাঁধবে অতঃপর ইমাম সাহেব সূরা ফাতেহা ও অন্য সূরা পড়বেন এবং রুকু সিজদা করার মাধ্যমে প্রথম রাকআত শেষ করবেন।
অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতে প্রথমে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দিবে আর এ সকল তাকবীরের সময় হাত উঠাবে অতঃপর একটি তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাবে অতঃপর অন্যান্য নামাযের ন্যায় নামায পূর্ণ করবে।

১.ঈদের নামাযে আযান ইকামত দিতে হয় নাঃ

এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছেঃ

قَالَ وَأَخْبَرَنِي عَطَاءٌ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ أَرْسَلَ إِلَى ابْنِ الزُّبَيْرِ فِي أَوَّلِ مَا بُويِعَ لَهُ إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ يُؤَذَّنُ بِالصَّلاةِ يَوْمَ الْفِطْرِ إِنَّمَا الْخُطْبَةُ بَعْدَ الصَّلاةِ

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাবী বলেন, আমাকে ‘আতা (রহঃ) বলেছেন যে, ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) এর বায়’আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁর কাছে এ বলে লোক পাঠালেন যে, ‘ঈদুল ফিত্‌রের সালাতে আযান দেয়া হতো না এবং খুত্‌বা হল সালাতের পরে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৫৯)

অপর এক বর্ণনা এসেছেঃ

ٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ، سَمُرَةَ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعِيدَيْنِ غَيْرَ مَرَّةٍ وَلاَ مَرَّتَيْنِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلاإِقَامَةٍ ‏

ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একবার দু’বার নয়, অনেক বার দু’ ঈদেরসলাত আযান ও ইক্বামাত ব্যতীত আদায় করেছি।
(সহিহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৩৬, সুনানে তিরমিযি হাদীস নং ৫৩২, সুনানে আবূ দাউদ-১০৪২)

নোটঃ
এ অনুচ্ছেদে জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ‘ঈসা বলেনঃ জাবির ইবনু সামূরার হাদীসটি হাসান সহীহ্। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ ও অন্যরা এ হাদীস অনুযায়ী দুই ‘ঈদের নামায ও নফল নামাযের জন্য আযান দিতেন না।
(সুনানে-তিরমিজি, হাদিস নং ৫৩২)

২.ঈদের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল সূরা পড়তেনঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই সুরা আ’লা ও সুরা গাশিয়াহ পড়তেন। 
একটি হাদিসে এসেছেঃ

، عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ وَفِي الْجُمُعَةِ بِـ ‏(‏ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى ‏)‏ وَ ‏(‏هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ ‏)‏ وَرُبَّمَا اجْتَمَعَا فِي يَوْمٍ وَاحِدٍ فَيَقْرَأُ بِهِمَا ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي وَاقِدٍ وَسَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏ وَرُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ يَقْرَأُ فِي صَلاةِ الْعِيدَيْنِ
بِـ ‏(‏اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ ‏)‏.‏

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ‘ঈদের নামাযে এবং জুমু‘আর নামাযে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা” এবং “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ্” সূরা দুটি পাঠ করতেন। কখনো কখনো ঈদ এবং জুমু’আর নামায একই দিনে হয়ে যেত। তিনি তখনও দুই নামাযে উল্লেখিত সূরা দুটিই পাঠ করতেন ।
(সুনানে তিরমিযি হাদীস নং ৫৩৩, সুনানে ইবনু মাজাহ-১১১৯)

নোটঃ
এ অনুচ্ছেদে আবূ ওয়াকিদ, সামুরা ইবনু জুনদুব ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ‘ঈসা বলেনঃ নু‘মান ইবনু বাশীরের হাদীসটি হাসান সহীহ্। আরো কয়েকটি সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের মতই বর্ণনা এসেছে। অপর একটি সূত্রে বর্ণিত আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ‘ঈদের নামাযে সূরা ‘কাফ’ ও সূরা ‘ইকতারাবাতিস সাআহ’ পাঠ করতেন। 
(সুনানে-তিরমিজি, হাদীস নং ৫৩৩)

৩.ঈদের নামাযে কখন খুতবা পড়বেঃ

ঈদের নামাতে নামাতে পড়ার পরে খুতবা পাঠ করবে। (তবে জুমআ এর বিপরীত , কেননা জুমআর নামাযের আগেই খুতবা পড়তে হয়) হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ

، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ كَانُوا يُصَلُّونَ الْعِيدَيْنِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ ‏

‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) ঈদের সলাত খুত্‌বার আগে আদায় করতেন।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৩৭)

ঈদের নামাজের পর দোয়া করাঃ দোয়া সতন্ত্র একটি ইবাদত ।তাই বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। আর যেহেতু ঈদের দিন হলো প্রতিদানের দিন তাই এসময়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে চেয়ে নেওয়া উচিত।

হাদিসে এসেছেঃ

وَ حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ حَفْصَةَ بِنْتِ، سِيرِينَ عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ، قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى الْعَوَاتِقَ وَالْحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ فَأَمَّا الْحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلاَةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِينَ ‏.‏ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِحْدَانَا لاَ يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ ” لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا ‏”‏ ‏

উম্মু ‘আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন। আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহাতে বের করে দেই- পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। তবে ঋতুবতী মহিলারা সলাত থেকে বিরত থাকবে। বাকী পুণ্যের কাজে ও মুসলিমদের দু‘আয় শারীক হবে। আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো চাদর ওড়না নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য বোন তাকে নিজ চাদর বা ওড়না পরিয়ে দিব।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৪১)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন।

এখানে মন্তব্য করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পোস্ট