fbpx
মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন ভালো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে তখন উক্ত কাজ সম্পাদন করতে পারলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে এবং মনে আনন্দ ও শান্তি অনুভব করে। এই ভালো কাজ যখন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে হয় তখন তার পরিমান ও গতি অনেক গুনে বৃদ্ধি পায়। এটা মানুষের থেকে কাম্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার এর মূলনীতি

সূচিপত্র

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার এর মূলনীতি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মাওলানা সালমান হুসাইন (গোপালগঞ্জ)
মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন ভালো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে তখন উক্ত কাজ সম্পাদন করতে পারলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে এবং মনে আনন্দ ও শান্তি অনুভব করে। এই ভালো কাজ যখন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে হয় তখন তার পরিমান ও গতি অনেক গুনে বৃদ্ধি পায়। এটা মানুষের থেকে কাম্য। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন

سابقوا الى مغفرة من ربكم وجنة عرضها كعرض السماء و الأرض 

তোমরা ধাবিত হও তোমাদের প্রতিপালকের (খমা) ও সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে যা প্রশস্ততায় আকাশ ও পৃথিবীর মত।
(সূরা হাদীদ ২২)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

 َقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَنْ سَنَّ فِي الإسْلامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الإسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ ‏”‏ ‏.‏

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন উত্তম প্রথা বা কাজের প্রচলন করে সে তার এ কাজের সাওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে সে এর বিনিময়েও সাওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সাওয়াব কোন অংশে কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে (ইসলামের পরিপন্থী) কোন খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা (গুনাহ এবং শাস্তি) বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ বোঝাও তাকে বইতে হবে। তবে এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোন অংশেই কমবে না।
(ই.ফা. ২২২০, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২৪১)

অপর এক হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ يَسْتَحْمِلُهُ فَلَمْ يَجِدْ عِنْدَهُ مَا يَتَحَمَّلُهُ فَدَلَّهُ عَلَى آخَرَ فَحَمَلَهُ ‏.‏ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّ الدَّالَّ عَلَى الْخَيْرِ كَفَاعِلِهِ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক এসে তার নিজের জন্য একটি বাহন চাইল। কিন্তু তাকে তিনি দেয়ার মত কোন বাহন না পেয়ে তাকে অন্য এক লোকের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। সেই ব্যক্তি তাকে একটি বাহন দিল। সে এ ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললে তিনি বলেনঃ সৎকাজের পথপ্রদর্শক উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য।(অর্থাৎ সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন।তবে এতে আমলকারীর সওয়াবে কোন কমতি হবে না)
(হাদিসটি হাসান সহীহঃ সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহাহ্‌- ১১৬০, জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৬৭০)

তাই সকলের উচিত ভালো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা অর্থাৎ নিজে ভালো কাজ করা এবং অন্য মানুষকে ও ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা। আর মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য বরমানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ওপুরষ্কারের আয়োজন করা হয়।

এ সকল প্রতিযোগিতায় কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

যে কাজে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে তা অবশ্যই কোন বৈধ ও শরীয়ত সম্মত কোন কাজ হতে হবে।যেমন ‌হিফযুল কুরআন বা হিফযুল হাদিস ইত্যাদির আয়োজন করা।কোন গোনাহের কাজের প্রতিযোগিতা করা যাবে না। কেননা গোনাহের কাজ করা যেমন গোনাহ তেমনিভাবে তার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা বা সহযোগিতা করা ও গোনাহ। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

مَنْ سَنَّ فِي الإسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ ‏”‏ ‏.‏

যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে (ইসলামের পরিপন্থী) কোন খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা (গুনাহ এবং শাস্তি) বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ বোঝাও তাকে বইতে হবে। তবে এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোন অংশেই কমবে না।
(ই.ফা. ২২২০, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২৪১)

গোনাহের কাজের প্রতিযোগিতা,হলো নাচ- গানের প্রতিযোগিতা করা,বা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি আংকন ইত্যাদি।(যাবতীয় গোনাহের কাজ)

পুরস্কারের ক্ষেত্রে লক্ষনীয়ঃ

  • ১) কোন ব্যক্তি বলল; তোমরা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করো আমি পুরষ্কারের ব্যবস্থা করব। (উক্ত ব্যক্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও করেন নাই)। এভাবে পুরষ্কারের আয়োজন করা বৈধ।এতে কোন সমস্যা নেই।
  • ২) যদি দুইজন প্রতিযোগি হয় এবং একজন বলে; তুমি জিতলে আমি তোমাকে অমুক বস্তু পুরস্কার দিব, কিন্তু অপর পক্ষের থেকে কোন পুরস্কারের ঘোষনা না থাকে (অর্থাৎ অপরজন কোন পুরস্কারের ঘোষনা না করে বা প্রথম জন অপর জনকে পুরষ্কার দিতে হবে বলে শর্ত না করে তাহলে এভাবে পুরষ্কারের আয়োজন করা বৈধ।
  • ৩)যদি উভয়ে এই শর্ত করে যে জিতলে আমাকে অমুক বস্তু দিতে হবে আর পারলে আমি তোমাকে অমুক বস্তু দিব তাহলে উক্ত পুরষ্কার প্রদান করা বৈধ নয়। বরং তা শরীয়ত নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
    (আন নুতাফু ফিল ফতোয়া ৫৩১)

(والله أعلم باالصواب)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উক্ত মাসয়ালা গুলো বোঝার তাওফিক দান করুন

এখানে মন্তব্য করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা