fbpx
ইসলামী দা‘ওয়াত চিরন্তন ও শাশ্বত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি ফরয কাজ। যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলই পৃথিবীতে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষদেরকে নিরলসভাবে দা‘ওয়াত দিয়েছেন। উম্মাতে মুহাম্মাদী হিসেবে আমাদেরকেও এ কাজে অংশগ্রহণ করা ঈমানের অপরিহার্য দাবী।
ইসলামী দাওয়াতের পরিচয় ও প্রয়োজনীয়তা

সূচিপত্র

ইসলামী দাওয়াতের পরিচয় ও প্রয়োজনীয়তা

ড. ফেরদৌস আলম ছিদ্দিকী
ইসলামী দা‘ওয়াত চিরন্তন ও শাশ্বত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি ফরয কাজ। যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলই পৃথিবীতে ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষদেরকে নিরলসভাবে দা‘ওয়াত দিয়েছেন। উম্মাতে মুহাম্মাদী হিসেবে আমাদেরকেও এ কাজে অংশগ্রহণ করা ঈমানের অপরিহার্য দাবী। এছাড়া প্রকৃত মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করার জন্যও দা‘ওয়াতী কাজের কোন বিকল্প নেই। এজন্য ইসলামে এটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

দা‘ওয়াতের পরিচয়:

দা‘ওয়াত (الدعوة) অর্থ: ডাকা, আহবান করা, আমন্ত্রন জানানো, নিমন্ত্রন করা, প্রচার করা, প্রার্থনা করা, সাহায্য কামনা করা ইত্যাদি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো call, invitation, publicity, announcement, preaching etc. The Hanswehr Dictionary of Modern Written Arabic এ দা‘ওয়াহ শব্দের অর্থ করা হয়েছে Missionary activity, Missionary work, Propaganda.
পরিভাষায়: কোন ব্যক্তির নিজস্ব মতবাদ, চিন্তাধারা বা জীবন প্রণালীর দিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অন্যকে আহবান করা, সে আহবান মেনে নিতে প্রভাবিত করা, মেনে নেয়ার পর সেটি বাস্তব জীবনে চর্চার দিক নির্দেশনা দানের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে দা‘ওয়াহ বলা হয়।
ড. ‘আবদুল খালেক বলেন, “কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষকে কোন বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করাকে দা‘ওয়াহ বলা হয়।” আধুনিক অভিধানগুলোতে যে কোন ধর্ম বা ভাল-মন্দ যে কোন লক্ষ্য অর্জন সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণা অর্থে দা‘ওয়াহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ফলে দা‘ওয়াহ যে কোন মত বা পথের দিকে হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে সকল প্রকার দাসত্ব, মত ও পথ পরিহার করে কেবল আল্লাহর দাসত্ব বা গোলামী করার আহবানকে ইসলামী দা‘ওয়াহ বলা হয়। অন্যকথায় আল্লাহর দীনের প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে ইসলামের বিধি-বিধান অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য নিজের বাকশক্তি এবং কর্মক্ষমতাকে সার্বিকভাবে প্রয়োগ করাকে ইসলামী দা‘ওয়াহ বলা হয়।
ড. রউফ শালাবীর মতে, “দা‘ওয়াহ হলো সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন। যার দ্বারা মানবসমাজকে কুফুরী হতে ঈমানী অবস্থায়, অন্ধকার হতে আলোতে এবং জীবনে সংকীর্ণতা হতে পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনের প্রশস্ত অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়।”
দা‘ওয়াতের আর একটি মৌলিক পরিভাষা হচ্ছে তাবলীগ। এ দুটি শব্দ একটি অন্যটির পরিপূরক। যেমন- দা‘ওয়াত অর্থ ডাকা এবং তাবলীগ অর্থ পৌঁছে দেয়া। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে আনীত বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন

وَمَا عَلَى الرَّسُوْلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيبْنُ

“এবং রাসূলের উপর দা‘ওয়াত সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই।”
(সূরাহ আন নূর: ৫৪)

ইসলামী দা‘ওয়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

প্রত্যেক সৎ কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلْ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

“বলুন, আমার সালাত, কুরবানী, জীবন ও মৃত্যু সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।”
(সূরাহ আল আন‘আম: ১৬২)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِيْ نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَاللهُ رَءُوْفٌ بِالْعِبَادِ

“মানুষের মধ্যে এক শ্রেণির লোক রয়েছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজেদের জীবন বিক্রয় করে দেয়। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।”
(সূরাহ আল বাকারাহ: ২০৭)

ইসলামী দা‘ওয়াহ ইসলামী জীবনব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ইসলামী দা‘ওয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اُدْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ

“তোমার প্রতিপালকের পথের দিকে আহবান কর হিকমাত ও উত্তম কৌশলের মাধ্যমে।”
(সূরাহ আন নাহল: ১২৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

قُلْ هَذِهِ سَبِيلِيْ أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيْرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

“বলে দিন, এটি আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দা‘ওয়াত দেই, আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”
(সূরাহ ইউসূফ: ১০৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ

“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হওয়া উচিত, যারা কল্যাণের দিকে দা‘ওয়াত দিবে। সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে বাধা দিবে। আর তারাই কেবল সফলকাম।”
(সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১০৪)

ইসলামী দা‘ওয়াতের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। সকল মানুষকে আল্লাহর ‘ইবাদাতকারী হিসেবে প্রস্তুত করা এর অন্যতম লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ

“আমি কেবল আমার ‘ইবাদাতের জন্যই জ্বিন ও মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছি।”
(সূরাহ আয যারিয়াত: ৫৬)

ইসলামী দা‘ওয়াহ সমাজে শান্তি, সহানুভূতি, সৌভাগ্য ও স্বাচ্ছন্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। অর্থাৎ সমাজের নেতৃত্ব যেন সৎ, যোগ্য ও মুত্তাকী লোকদের হাতে থাকে এবং তাদের দ্বারা যেন শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়, এটি নিশ্চিত করার জন্য ইসলামী দা‘ওয়াহ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَابْتَغِ فِيْمَا آتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلا تَنْسَ نَصِيْبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللهُ إِلَيْكَ وَلاَ تَبْغِ الْفَسَادَ فِيْ الْأَرْضِ إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِيْنَ

“আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, সেটি দ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।”
(সূরাহ আল কাসাস: ৭৭)

খোদাদ্রোহী সকল মতাদর্শকে পরাভূত করে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী দা‘ওয়াতের অন্যতম লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِيْنَهُمُ الَّذِيْ ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِّنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُوْنَنِي لَا يُشْرِكُوْنَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ও‘আদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন ক্ষমতা দান করবেন। যেমন তিনি শাসন ক্ষমতা দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দান করবেন। তারা আমার ‘ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।”
(সূরাহ আন নূর: ৫৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُوْنَ

“যাতে সত্যকে সত্য এবং বাতিলকে বাতিল প্রতিপন্ন করে দেন, যদিও পাপিষ্টরা অসন্তুষ্ট হয়।”
(সূরাহ আল আনফাল: ৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

وَقَاتِلُوْهُمْ حَتَّى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَّيَكُوْنَ الدِّيْنُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ بَصِيرٌ

“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফেতনা শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। অতঃপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্যকারী।” 
(সূরাহ আল আনফাল: ৩৯)

মানুষকে ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর পথ পরিহার করে হিদায়াতের পথে নিয়ে আসা এবং জাহিলিয়্যাতের কালিমা দূর করে আলোর পথে নিয়ে আসাও ইসলামী দা‘ওয়াতের লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ

“এ কিতাব, যেটি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর পথে বের করে আনেন, পরাক্রান্ত প্রশংসার্হ পালন কর্তার নির্দেশ তাঁরই পথের দিকে।”
(সূরাহ ইবরাহীম: ১)

ইসলামী দা‘ওয়াহ ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এ লক্ষ্যগুলো দা‘ওয়াতের বিভিন্ন বিষয়বস্তু ও কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইসলামের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানো। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ

“অতঃপর সুস্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়াই রাসূলগণের দায়িত্ব।”
(সূরাহ আন নাহল: ৩৫)

আল কুরআনে বর্ণিত এ বালাগ শব্দের সুগভীর তাৎপর্য রয়েছে। কোন কিছু বুদ্ধিমত্তার সাথে কৌশলে যথাযথভাবে পৌঁছানোকে বালাগ বলা হয়। এটি স্থান কাল পাত্রভেদে পার্থক্য হতে পারে। কেননা অনুকূল পরিবেশে যেভাবে প্রচার করা যায়, প্রতিকূল পরিবেশে সেভাবে প্রচার করা যাবে না। অনুরূপ সমমনা কাউকে কোন কিছু শুনাতে যে ধরনের ভাবব্যাঞ্জনাভঙ্গি প্রয়োগ করা হয়, নতুন পরিচয় প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির নিকট সেভাবে পৌঁছানো যায় না। ইসলামী দা‘ওয়াতের লক্ষ্য নির্ধারণে তার গুরুত্ব অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।

দা‘ওয়াহ কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার জন্য দা‘ওয়াত প্রাপ্তদেরকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদেরকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তাদের নৈতিক মানকে সুদৃঢ় ও সুসংহত রাখতে হবে। অপবিত্রতা ও কদর্যতা থেকে তাদেরকে মুক্ত রাখতে হবে। কোনভাবেই তাদেরকে উপেক্ষা করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَأَنذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ-وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ

“আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন এবং আপনার অনুসারী মু’মিনদের প্রতি আপনার ডানা নিচু করুন।”
(সূরাহ আশ শু‘আরা:২১৪-২১৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

وَ أَنذِرْ بِهِ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ أَنْ يُحْشَرُواْ إِلَى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهِ وَلِيٌّ وَلَاَ شَفِيْعٌ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ- وَلَاَ تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِم مِّنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِم مِّنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُوْنَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

“আপনি এ (কুরআন) দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করে দিন যারা ভয় করে যে, তাদেরই প্রতিপালকের নিকট হাশরে এমন অবস্থায় একত্রিত করা হবে যে, তিনি ব্যতীত তাদের আর কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে না। হয়তো তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে। আর যারা সকাল-সন্ধ্যা তাঁর সন্তুষ্টি লাভার্থে তাঁকে ডাকে, তাদেরকে আপনি বিতাড়িত করবেন না।”
(সূরাহ আল আন‘আম: ৫১-৫২)

সমাজের সর্বস্তরে তাকওয়ার বীজ বপন করা এবং ‘ইবাদাত ও ইসলামী বিধি-বিধান চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজকে পরিশুদ্ধ করা দা‘ওয়াতের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ইসলাম কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচীগুলো হলো- সালাত কায়েম করা, সাওম পালন করা, হাজ্জ পালনে সহযোগিতা করা, যাকাত ব্যবস্থা চালু করা, মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে নিশ্চয়তা প্রদান করা। এছাড়া সমাজে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে হুদূদ তথা দন্ডবিধি জারি করা। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধনে কাজ করাও দা‘ওয়াতের লক্ষ্য। যাতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়। উন্নততর সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য উন্নত প্রযুক্তি, কৌশলাদি এবং উপকরণাদি উদ্ভাবন ও ব্যবহার করা সহজ হয়। আল্লাহ তা‘আলা রিসালাতের মৌলিক দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন,

هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلالٍ مُّبِيْنٍ

“তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত। ইতোপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।”
(সূরাহ আল জুমু‘আহ: ২)

সর্বপরি খিলাফতের দায়িত্ব পালন করা দা‘ওয়াতের লক্ষ্য। খিলাফত লাভের মাধ্যমে প্রকৃতি জগতকে অনুগত করা ও এর সেবা লাভ করা এবং উন্নত পৃথিবী গড়ার কাজে সুষ্ঠু ব্যবহার করা। আর সেটি হচ্ছে সভ্যতার বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন। এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক, ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত উপকরণাদি এবং স্থাপত্য, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসব দিকে বিভিন্ন রকম নিয়ম উদ্ভাবন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা দা‘ওয়াতের লক্ষ্য। পাশাপাশি সমাজকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা ও নেতৃত্বদানও দা‘ওয়াতের লক্ষ্য। যাতে তাদের জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলী বাস্তবায়ন করা যায়। এ বিধানগুলো বিশ্ব চরাচরের বিশাল নিয়মেরই অংশ এবং এর সাথে সামঞ্জস্যশীল। ইসলামী দা‘ওয়াহ এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। আল্লাহ তা‘আলা দাউদ আ. কে এ ধরনের খিলাফত সম্পর্কে বলেন,

يَا دَاوُوْدُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِيْ الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ

“হে দাউদ, আমি তোমাকে যমীনে খলীফা নিয়োগ করেছি। অতএব মানুষের মাঝে সত্যের মাধ্যমে হুকুমত পরিচালনা কর।”
(সূরাহ সোয়াদ: ২৬)

ইসলামী দা‘ওয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

ইসলামের মূল দা‘ওয়াত দানকারী স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা। তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে এ দা‘ওয়াতের ঘোষণা করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

أُولَئِكَ يَدْعُوْنَ إِلَى النَّارِ وَاللهُ يَدْعُوْ إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ

“তারা দোযখের দিকে আহবান জানায়, আর আল্লাহ নিজেই নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহবান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।”
(সূরাহ আল বাকারাহ: ২২১)

ইসলামী দা‘ওয়াহ মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া পবিত্র দায়িত্ব। মহান আল্লাহ এ দা‘ওয়াত পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানবজাতির নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُواْ اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ

“আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়ে এ নির্দেশ দিয়েছি যে, আল্লাহর ‘ইবাদাত কর এবং তাগুতকে (খোদাদ্রোহী) বর্জন কর।”
(সূরাহ আন নাহল: ৩৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَنَذِيْرًا وَإِنْ مِّنْ أُمَّةٍ إِلاَّ خَلًا فِيْهَا نَذِيْرٌ

“নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্য (দা‘ওয়াত) সহকারে, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি এবং এমন কোন জাতি নেই যার নিকট সতর্ককারী গমন করেনি।”
(সূরাহ ফাতির: ২৪)

সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সা.। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না। তাঁর দা‘ওয়াহ তৎপরতাকে সতেজ রাখা এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর। কারণ এর মাধ্যমেই নবী-রাসূলগণের দায়িত্ব সম্পাদিত হয়। সমাজে সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করার মহান দায়িত্ব সম্পন্ন হয়। সুকর্মের চর্চা হয় এবং দুষ্কর্ম অপসারিত হয়। সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মিথ্যা নির্মূল হয়।
মানবসমাজে বিভিন্ন দিক থেকে ইসলামী দা‘ওয়াতের প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষের অন্তরে জন্মগতভাবেই সত্য গ্রহণের যোগ্যতা বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ

“এটি আল্লাহর দেয়া ফিতরাত (স্বভাব) যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।”
(সূরাহ আর রূম: ৩০)

আল্লাহর দেয়া এ ফিতরাত নিজে থেকে বিকশিত হয়না। অসুস্থ পরিবেশ তাকে বিপথগামী করতে পারে। অন্তরাত্মার এ সুপ্ত শক্তির সুস্থ বিকাশের জন্য সত্য পথের দা‘ওয়াত প্রয়োজন। কারণ সত্যের দা‘ওয়াত না থাকলে বিপথগামী মানুষেরা আপত্তি উত্থাপন করতে পারে। তারা বলতে পারে যে, সত্য পথের আহবানকারী না থাকায় আমরা গোমরাহ হয়েছি। করুনাময় আল্লাহ নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করে সে আপত্তির পথ রুদ্ধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

رُّسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنذِرِيْنَ لِئَلاَّ يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ

“সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণকে প্রেরণ করার পর আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য আপত্তি করার মত কোন অবকাশ না থাকে।”
(সূরাহ আন নিসা: ১৬৫)

দা‘ওয়াত দানকারীগণ হবেন সেই নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরি। দা‘ওয়াতের মাধ্যমে তারা মানুষের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ফিতরাতকে জাগিয়ে তুলবেন। চোখের দৃষ্টিশক্তি কার্যকর করার জন্য যেমন আলোর প্রয়োজন, তেমনি মানুষের জন্মগত ফিতরাতকে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য দা‘ওয়াতের প্রয়োজন। অন্যভাবে বলা যায়, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি জীবনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত প্রয়োজন। আল্লাহ প্রদত্ত এ হিদায়াত প্রচার-প্রসারের কার্যক্রমকেই বলা হয় ইসলামী দা‘ওয়াহ। ফলে পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন করার জন্য ইসলামী দা‘ওয়াহ একটি অপরিহার্য বিষয়।

পৃথিবীর অগণিত মানুষ আল্লাহর পরিচয় লাভের জন্য উন্মুখ। যুগে যুগে দার্শনিকগণ এ বিষয়টি নিয়ে নানারূপ বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। কেউ সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেছে, কেউ মহান স্রষ্টাকে মানবীয় চরিত্রের রূপ দিয়েছে, আবার কেউ আল্লাহকে সঠিক অর্থে মেনে নিয়েছে, কিন্তু তার সত্তা এবং গুণাবলী সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নিজে বিপথগামী হয়েছে, অন্যদেরকেও বিপথগামী করেছে। মূলতঃ স্রষ্টা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের উপাদান হচ্ছে ওহীর জ্ঞান। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর সত্তা এবং গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর সত্তা এবং গুণাবলীতে সঠিক বিশ্বাসকেই তাওহীদ বলা হয়। আল্লাহর অস্তিত্ব এবং গুণাবলী সংক্রান্ত যাবতীয় বিভ্রান্তি অপনোদনের মাধ্যমে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ইসলামী দা‘ওয়াতের প্রধান দায়িত্ব। এ জন্য পৃথিবীর বিশাল অঙ্গনে আল্লাহর সঠিক পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে ইসলামী দা‘ওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম।

সামাজিক অপরাধ যেমন, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অপহরণ, লুণ্ঠন, সন্ত্রাস, ছিনতাই, চোরাকারবার, মাদকাসক্তি, র্শিক, বিদ‘আত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দূর করে একটি ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য ইসলামী দা‘ওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া কল্যাণকর জীবন লাভের জন্য একটি নির্ভুল দিক নির্দেশনা বা জীবনবিধান প্রয়োজন। এ প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ নিজ নিজ প্রজ্ঞা এবং বিবেক বুদ্ধির সাহায্যে জীবনবিধান রচনা করে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যে, মানবরচিত জীবনবিধান তাদের জীবন সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান দিতে পারেনি, বরং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অসংখ্য সমস্যার জন্ম দিয়েছে। ফলে সে বিধান অচল ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর কারণ সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য মানবজীবনের ভূত-ভবিষ্যত সম্পর্কে যে সীমাহীন প্রজ্ঞা প্রয়োজন সেটি মানুষের নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا أُوْتِيْتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيْلًا

“তোমাদেরকে অতি সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে।” 
(সূরাহ বনী ইসরাঈল: ৮৫)

এজন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত নির্ভুল ব্যবস্থাই মানুষের জন্য চিরস্থায়ী এবং কল্যাণকর দিক নির্দেশনা। এ জীবন ব্যবস্থাই সমগ্র বিশ্বে আল কুরআন নামে পরিচিত। এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীছ হিসেবে সংরক্ষিত। আজকের অশান্ত পৃথিবীর শান্তিহারা মানুষের নিকট আল কুরআনের শান্তির আহবানকে পৌঁছে দেয়াই ইসলামী দা‘ওয়াতের দাবী।

ইসলামী দা‘ওয়াহ মূলত;

মানবকল্যাণমূলক দা‘ওয়াত। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের মাধ্যমে এ কল্যাণ অর্জিত হয়। ইসলামী দা‘ওয়াতের কাজে কোন বিনিময় চাওয়া হয়না। ফলে কল্যাণের দিকে আহবান কারীকে সকলেই ভালবাসে। তার দুঃখ-কষ্টে সকলেই এগিয়ে আসে এবং সহযোগিতা করে। ক্রমেই সমাজে দা‘ওয়াতের প্রভাব পড়তে থাকে। সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ড পায়। উন্নত ও আদর্শ সমাজ গড়ে উঠে। এভাবে দা‘ওয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ তথা মানবমণ্ডলীর পার্থিব কল্যাণ সাধিত হয়। পাশাপাশি অর্জিত হয় মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণ তথা আখিরাতের কল্যাণ। ফলে দা‘ওয়াতের মাধ্যমেই অর্জিত হয় উভয় জাহানের কল্যাণ এবং সফলতা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ

“এরাই মূলতঃ সফলকাম।”
(সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১০৪)

ইসলামী দা‘ওয়াতের কাজে সওয়াব অফুরন্ত। এ কাজের সওয়াব চক্রবৃদ্ধিহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেমন কোন ব্যক্তির দা‘ওয়াতে অন্য একজন মানুষ হিদায়াত পাওয়ার পর তার জীবনে যত সওয়াব হবে, এর সমতুল্য সওয়াব ঐ দা‘ওয়াত প্রদানকারীকেও দেয়া হবে। এতে বোধগম্য হয় যে, কারও দা‘ওয়াতে হিদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি অন্য আরও দশজনকে দা‘ওয়াত দেন তাদের সমপর্যায়ের সওয়াব ঐ প্রথম দা‘ঈ পাবেন। এভাবে একে অপরকে দা‘ওয়াত দিতে থাকলে সওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ ধারা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,

عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ عُقْبَةَ بْنَ عَمْرٍو اْلأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْه ُقَالَ : قاَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ 

“আবূ মাস‘উদ ‘উকবাহ ইব্ন ‘আমর আল-আনসারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, কেউ যদি কোন নেক কাজের পথ নির্দেশ দেয়, সে ঐ নেক কাজ সম্পাদনকারী সমতুল্য সওয়াব পাবে।” (মুসলিম, বাবু ফীদ দালালাতি ‘আলা খায়রিন, হাদীস নম্বর: ১৭৮)

সর্বপরি ইসলামী দা‘ওয়াহ হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানের দিকে দা‘ওয়াহ। এ দা‘ওয়াহ ইহলৌকিক ও পারলোকিক জীবনে সার্বিক কল্যাণ লাভের দা‘ওয়াহ। বিশ্ববাসীর কল্যাণের এ দা‘ওয়াহ মুসলিম উম্মাহর জন্য অবশ্য করণীয় দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ إِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

“আর তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? যে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং ঘোষণা দেয়, আমি একজন মুসলিম।”
(সূরাহ ফুসসিলাত: ৩৩)

সুতরাং ইসলামী দা‘ওয়াহ সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

এখানে মন্তব্য করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখক পরিচিতি

নামঃ ড. ফেরদৌস আলম ছিদ্দিকী।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
বি. এ (অনার্স), (১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ),
এম. এ, (১৯৯৯ শিক্ষাবর্ষ),
পিএইচ.ডি, (২০০৬ শিক্ষাবর্ষ),
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশাঃ সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০১৭১৮ -৫৭৭১২২
ই-মেইলঃ dfas122@gmail.com

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা