আল্লাহর পরিচয়
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বিষয়ঃ আল্লাহর পরিচয়
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)
আয়াতে কারীমাহ্
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ (255
[البقرة: 255]
সরল অনুবাদ
আল্লাহ ; তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। [১] তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত তাঁরই। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত আছেন। যা তিনি ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী [২] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। আর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহামহিম।
সূরার নাম ঃ বাক্বারাহ্ (গাভী)
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৫৫
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
(ইবনে কাসীর)
এটি মহান আল্লাহর গৌরবময় গুণাবলী, তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা এবং তাঁর পরাক্রমশালীতা ও মহানুভবতা সম্বলিত সংক্ষিপ্ত শব্দে বহুল অর্থ বিশিষ্ট অতীব মহান আয়াত।
কেউ বলেছেন, জ্ঞান।
কেউ বলেছেন, শক্তি ও মাহাত্ম্য।
কেউ বলেছেন, রাজত্ব এবং
কেউ বলেছেন, আরশ।
তবে মহান আল্লাহর গুণাবলীর ব্যাপারে মুহাদ্দেসীন ও সালফে-সালেহীনদের নীতি হল, তাঁর গুণগুলি যেভাবে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলির কোন অপব্যাখ্যা ও ধরন-গঠন নির্ণয় না করে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। কাজেই এটাই বিশ্বাস করতে হবে যে, এটা সত্যিকারের কুরসী যা আরশ থেকে পৃথক বস্তু । তার ধরন ও আকৃতি কেমন এবং তাতে মহান আল্লাহ কিভাবে আসীন হন, তা আমরা বর্ণনা করতে পারব না। কেননা, তার অর্থ আমাদের জানা; কিন্তু তার প্রকৃতত্ব আমাদের কাছে অজানা।
আয়াতে কারীমাহ্
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
সরল অনুবাদ
তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা,[১] রূপদাতা। সকল উত্তম নাম তাঁরই।[২] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।[৩] আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [৪]
সূরার নাম ঃ আল-হাশর
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৪
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
[১] বলা হয় যে, خلق ‘খালক্ব’ এর অর্থ, স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী আন্দাজ ও অনুমান করা। আর برأ ‘বারাআ’ অর্থ, সেটাকে সৃষ্টি করা, গড়া এবং অস্তিত্বে নিয়ে আসা।
[২] ‘আসমায়ে হুসনা’ (সুন্দর নামাবলী) এর আলোচনা সূরা আ’রাফ ৭:১৮০ নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে।
[৩] অবস্থার ভাষায় এবং কথ্য ভাষাতেও। যেমন, পূর্বে বর্ণনা হয়েছে।
[৪] যে জিনিসেরই তিনি ফায়সালা করেন, তা হিকমত, কৌশল ও প্রজ্ঞা হতে শূন্য থাকে না।
আয়াতে কারীমাহ্
سورة الإخلاص
بسم الله الرحمن الرحيم
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1
اللَّهُ الصَّمَدُ (2
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3
وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4
সরল অনুবাদ
- বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়।
- আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।
- তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
- এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
সূরার নাম ঃ এখলাস
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১-৪ পর্যন্ত
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়; না তাঁর সত্তায়, না তাঁর গুণাবলীতে এবং না তাঁর কর্মাবলীতে। “তাঁর মত কোন কিছুই নেই।” (সূরা শুরা ৪২:১১ নং আয়াত)
হাদীসে ক্বুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, “মানুষ আমাকে গালি দেয়; অর্থাৎ, আমার সন্তান আছে বলে। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে না জন্ম দিয়েছি; না কারো হতে জন্ম নিয়েছি। আর না কেউ আমার সমতুল্য আছে। (সহীহ বুখারী সূরা ইখলাসের তফসীর অধ্যায়।)
এই সূরা ঐ সকল লোকদের বিশ্বাস খন্ডন করে, যারা একাধিক উপাস্যে বিশ্বাসী, যারা মনে করে আল্লাহর সন্তান আছে, যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক স্থাপন করে এবং যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না।
আয়াতে কারীমাহ্
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَفْعَلُ مِنْ ذَلِكُمْ مِنْ شَيْءٍ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ (40
[الروم: 40
সরল অনুবাদ
আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তারপর তিনি তোমাদের রিযিক দান করেছেন অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দিবেন এরপর তোমাদের জীবিত করবেন। তোদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এসস্ত কাজের মধ্যে কোন একটি করতে পারে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ্ তা থেকে পবিত্র ও মহান।
সূরার নাম ঃ রুম
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ৪০
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
এখান থেকে আবার মুশরিকদেরকে বুঝাবার জন্য বক্তব্যের ধারা তাওহীদ ও আখেরাতের বিষয়বস্তুর দিকে ফিরে এসেছে।
[আইসারুতি-তাফসীর]
অর্থাৎ তোমাদের তৈরী করা উপাস্যদের মধ্যে কেউ কি সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা? জীবন ও মৃত্যু দান করা কি কারো ক্ষমতার আওতাভুক্ত আছে? অথবা মরার পর সে আবার কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে? তাহলে তাদের কাজ কি? তোমরা তাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছো কেন?
[তাবারী।]
আয়াতে কারীমাহ্
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
সরল অনুবাদ
তিনি গগন ও ভূবনের উদ্ভাবনকর্তা এবং যখন তিনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন শুধু বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়।[১]
সূরার নাম ঃ বাক্বারাহ্ (গাভী)
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১১৭
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
[১] অর্থাৎ, তিনি সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনের প্রতিটি জিনিসের (সৃষ্টিকর্তা ও) মালিক। প্রত্যেকটি জিনিস তাঁর অনুগত। আসমান ও যমীনকে কোন নমুনা ছাড়াই তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়াও তিনি যা করতে চান তার জন্য কেবল ‘কুন’ (হও) শব্দই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়। এমন সুমহান সত্তার আবার সন্তানাদির প্রয়োজন হয় কি করে?
(আহসানুল বায়ান)