fbpx

আল্লাহর কার্যাবলী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ আল্লাহর কার্যাবলী
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ  (22

[البقرة: 22]

সরল অনুবাদ

যিনি বানিয়েছেন তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা এবং আসমানকে ছাদ আর বর্ষণ করেন আসমান থেকে পানি অতঃপর তা থেকে উৎপন্ন করেন নানা ধরণের ফলমূল তোমাদের রিয্ক হিসাবে।

সূরার নাম ঃ বাকারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২২-এর প্রথম অংশ

আয়াতে কারীমাহ্

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ (29

[البقرة: 29]

সরল অনুবাদ

তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য[১] যা কিছু আছে যমীনে সে সমস্ত এরপর তিনি মনোনিবেশ করলেন[২] আসমানের প্রতি এবং তা বিন্যস্ত করলেন সাত আসমানে;[৩] আর তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।

সূরার নাম ঃ বাকারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৯

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

(১) এ থেকে সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, যমীনে সৃষ্ট প্রত্যেক জিনিস মূলতঃ হালাল, যতক্ষণ না কোন জিনিসের হারাম হওয়ার কথা দলীল দ্বারা প্রমাণিত হবে।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
(২) সালাফদের কেউ কেউ এর তর্জমা করেছেন, “অতঃপর আসমানের দিকে আরোহণ করেন।”
(সহীহ বুখারী)

মহান আল্লাহর আসমানের উপর আরশে আরোহণ করা এবং বিশেষ বিশেষ সময়ে নিকটের আসমানে অবতরণ করা তাঁর গুণবিশেষ। কোন অপব্যাখ্যা ছাড়াই এর উপর ঐভাবেই ঈমান আনা আমাদের উপর ওয়াজিব, যেভাবে তা ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
(৩) এ থেকে প্রথমতঃ জানা গেল যে, আসমান (আকাশ) এক অনুভূত বস্তু এবং বাস্তব জিনিস। কেবল উচ্চতা (মহাশূন্য)-কে আসমান বলে আখ্যায়িত করা হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ জানা গেল যে, আসমানের সংখ্যা হল সাত। আর হাদীস অনুযায়ী দুই আসমানের মধ্যেকার দূরত্ব হল পাঁচ শত বছরের পথ। আর যমীন সম্পর্কে ক্বুরআনে কারীমে এসেছে, {وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ} “এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে।”
(ত্বালাক্ব ৬৫:১২ আয়াত)

এ থেকে যমীনের সংখ্যাও সাত বলে জানা যায়। নবী (সাঃ)-এর হাদীস দ্বারা এ কথা আরো বলিষ্ঠ হয়। বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত যমীনও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।”
(সহীহ বুখারী ২৯৫৯নং)

উক্ত আয়াত থেকে এ কথাও জানা যায় যে, আসমানের পূর্বে যমীন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সূরা নাযিআত ৭৯:৩০ আয়াতে আসমানের উল্লেখ ক’রে বলা হয়েছে, {وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهاَ} “যমীনকে এর পর বিস্তৃত করেছেন।”
এর ব্যাখ্যা এই করা হয়েছে যে, প্রথমে যমীনই সৃষ্টি হয়েছে, তবে পরিষ্কার ও সমতল করে বিছানো হল সৃষ্টি থেকে ভিন্ন ব্যাপার, যেটা আসমান সৃষ্টির পর সম্পাদিত হয়েছে।
(ফাতহুল ক্বাদীর)

আয়াতে কারীমাহ্

أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ (107

[البقرة: 107]

সরল অনুবাদ

তুমি কি জান না যে, আল্লাহর জন্যই সর্বময় কর্তৃত্ব আসমান ও যমীনের ? আর আল্লাহ্ ছাড়া নেই তোমাদের কোন বন্ধু আর না সাহায্যকারী।

সূরার নাম ঃ বাকারাহ্
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১০৭

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

অর্থাৎ, তিনি সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনের প্রতিটি জিনিসের (সৃষ্টিকর্তা ও) মালিক। প্রত্যেকটি জিনিস তাঁর অনুগত। আসমান ও যমীনকে কোন নমুনা ছাড়াই তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়াও তিনি যা করতে চান তার জন্য কেবল ‘কুন’ (হও) শব্দই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়। এমন সুমহান সত্তার আবার সন্তানাদির প্রয়োজন হয় কি করে?

আয়াতে কারীমাহ্

هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (6

[آل عمران: 6]

সরল অনুবাদ

তিনিই তোমাদের আকৃতি দান করেন মাতৃগর্ভে যেভাবে তিনি ইচ্ছা করেন। তিনি ছাড়া কোন ইরাহ্ নেই; তিনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।

সূরার নাম ঃ আল-ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ৬

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

সুশ্রী অথবা কুশ্রী, ছেলে অথবা মেয়ে, সৌভাগ্যবান অথবা দুর্ভাগ্যবান এবং পূর্ণাঙ্গ অথবা বিকলাঙ্গ ইত্যাদি বিচিত্রময়তা মায়ের গর্ভে যখন এককভাবে আল্লাহই সৃষ্টি করেন, তখন ঈসা (আঃ) ইলাহ কিভাবে হতে পারেন? তিনি নিজেও তো সৃষ্টির নানা পর্যায় অতিক্রম করে দুনিয়াতে এসেছেন। মহান আল্লাহ তাঁরও সৃষ্টি সম্পাদন করেছেন তাঁর মায়ের গর্ভে।

আয়াতে কারীমাহ্

تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ (27

[آل عمران: 27]

সরল অনুবাদ

আপনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান;[১] আর আপনি বের করেন জীবিতকে মৃত থেকে আর বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে।[২] আর আপনি যাকে ইচ্ছা অপরিসীম রিয্ক দান করেন।

সূরার নাম ঃ আল-ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৭

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করানোর অর্থ হল ঋতুর পরিবর্তন। যখন রাত লম্বা হয়, তখন দিন ছোট হয়ে যায়। আবার অন্য ঋতুতে যখন দিন বড় হয়, তখন রাত ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ, কখনো রাতের অংশকে দিনের মধ্যে এবং দিনের অংশকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। যার কারণে রাত ও দিন ছোট-বড় হয়ে যায়।
[২] যেমন (মৃত) বীর্য যা জীবন্ত মানুষ থেকে বের হয়। অতঃপর সেই মৃত (বীর্য) থেকে বের হয় জীবন্ত মানুষ। অনুরূপ মৃত ডিম থেকে প্রথমে মুরগী, তারপর জীবন্ত মুরগী থেকে (মৃত) ডিম অথবা কাফের থেকে মু’মিন এবং মু’মিন হতে কাফের সৃষ্টি হয়। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, মুআ’য (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-কে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার অভিযোগ করলে তিনি তাকে বললেন, তুমি [اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ] আয়াতটি পাঠ করে এই দু’আটি করো,
((رَحْمَنَ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَرَحِيْمَهُمَا تُعْطِيْ مَنْ تَشَاءُ مِنْهُمَا وَتَمْنَعُ مَنْ تَشَاءُ، ارْحَمْنِيْ رَحْمَةً تُغْنِيْنِيْ بِهَا عَنْ رَحْمَةِ مَنْ سِوَاكَ.))
অপর আর এক বর্ণনায় এসেছে, “এটা এমন একটি দু’আ যে, তোমার উপর উহুদ পাহাড় সমানও যদি ঋণ থাকে, মহান আল্লাহ সে ঋণকেও তোমার জন্য আদায় করার ব্যবস্থা করে দিবেন।”
(মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ১০/১৮৬ হাদীসের বর্ণনাকারীরা সবাই নির্ভরযোগ্য)

আয়াতে কারীমাহ্

قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (29

[آل عمران: 29]

সরল অনুবাদ

বলুন: যদি তোমরা গোপন কর যা আছে তোমাদের অন্তরে অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ্ তা সবই জানেন; আর তিনি জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে যমীনে।

সূরার নাম ঃ আল-ইমরান
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ২৯

আয়াতে কারীমাহ্

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ (1

[الأنعام: 1]

সরল অনুবাদ

সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো।[১] এরপরও যারা কুফরী করে তারা তাদের রবের সমকক্ষ দাঁড় করায়।[২]

সূরার নাম ঃ আন’আম
অবর্তীণ ঃ মক্কায়
আয়াত নম্বরঃ ১

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] ظُلُمَات বলতে রাতের অন্ধকার এবং نُور বলতে দিনের আলো বুঝানো হয়েছে। অথবা কুফরীর অন্ধকার এবং ঈমানের জ্যোতি বুঝানো হয়েছে। ‘নূর’ (জ্যোতি) একবচন এবং ‘যুলুমাত’ (অন্ধকার) বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, অন্ধকারের কারণ অনেক এবং তার প্রকারাদিও বিভিন্ন।
পক্ষান্তরে ‘নূর’ (জ্যোতি)র উল্লেখ জিন্স (জাত) স্বরূপ করা হয়েছে, যা তার সমস্ত প্রকারকে নিজের মধ্যে শামিল করে নেয়।
(ফাতহুল ক্বাদীর)

আবার এটাও হতে পারে যে, হিদায়াত এবং ঈমানের রাস্তা যেহেতু একটাই, চার অথবা পাঁচ কিংবা ভিন্ন ভিন্ন নয়, তাই ‘নূর’কে একবচন শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে।
[২] অর্থাৎ, তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।